কলকাতা: প্রয়াত অভিনেতা তাপস পাল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভোররাতে মুম্বইয়ের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু। বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।


১ ফেব্রুয়ারি থেকে বান্দ্রার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাপস পাল। পরিবার সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন তিনি। কথা বলা ও চলা-ফেরায় সমস্যা ছিল। ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হয়। সোমবার রাতে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তাপস পাল। মঙ্গলবার ভোর ৩টে ৩৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।


১৯৫৮-র ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম তাপস পালের। হুগলি মহসিন কলেজ থেকে বায়ো-সায়েন্স নিয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ করেন তাপস।  বিয়ে হয় নন্দিনী পালের সঙ্গে। ছোটপর্দার সঙ্গে তিনি জড়িত। তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে সোহিনী, যিনি টলিউডের অভিনেত্রী।


বাংলা সিনেমায় তাঁর আগমন তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘দাদার কীর্তি’-ছবির হাত ধরে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতা তাপস পালকে। বৈদূর্য রহস্য, মায়া মমতা, সমাপ্তি, অনুরাগ, বাহাদুর, ‘সাহেব’, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘পথভোলা’, কুরুক্ষেত্র।


আট ও নয়ের দশকে একের পর এক বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন তাপস। সাহেব ছবির জন্য ১৯৮১ সালে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান তিনি। মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম হিন্দি ছবি ‘অবোধ’-এ তাঁর নায়ক ছিলেন তাপস পাল। অভিনয় করেছেন ‘আটটা আটের বনগাঁ লোকাল’, ‘চ্যালেঞ্জ টু’, ‘খিলাড়ি’-র মতো সিনেমাতেও।


দেবশ্রী-তাপস জুটিতে তৈরি হয় একের পর এক হিট ছবি। সেই তালিকায় রয়েছে- ‘অর্পণ’, ‘সুরের সাথী’, ‘সুরের আকাশে’, ‘নয়নমণি’, ‘চোখের আলোয়’, ‘তবু মনে রেখো’। পরবর্তীকালে শতাব্দীর সঙ্গেও সফল জুটি বাঁধেন এই নায়ক। পাশাপাশি, ইন্দ্রাণী হালদার থেকে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি।


অভিনয়ের পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তাপস পাল। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আলিপুরের বিধায়ক ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হন। নাম জড়ায় চিটফান্ডকাণ্ডে। ২০১৬-র ডিসেম্বরে রোজভ্যালিকাণ্ডে তাপস পালকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে রোজভ্যালি মামলায় তিনি জামিন পান।


শেষ জীবনের বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থতার মধ্যে কেটেছে তাপস পালের। শোনা যায়, অভিনয়েও ফিরতে চেয়েছিলেন তাপস। তা আর হল না। অসংখ্য ভক্তের মনে ‘দাদার কীর্তি’-র কেদারের স্মৃতি অক্ষুন্ন রেখে চিরবিদায় জানালেন অভিনেতা।