কলকাতা: তাঁর অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে সকলের। এবার ছবি তৈরির ২২ গজে স্টান্স নিচ্ছেন ঋদ্ধি সেন। বিষয়ভাবনা থেকে ফরম্যাট, সবকিছুতেই রয়েছে অভিনবত্ব। আগামী লকডাউনের দিন মুক্তি পাচ্ছে তাঁর পরিচালিত অ্যানিমেটেড শর্টফিল্ম 'ঠিকানা (আ ডে ইন টাইম)'। এবিপি আনন্দকে সেই 'ঠিকানা'-র খোঁজ দিলেন ঋদ্ধি সেন।




বাংলায় স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির তালিকায় অ্যানিমেডেট শর্টফিল্মের সংখ্যা মুষ্ঠিমেয়। এই ধারাকেই কেন বেছে নিলেন ঋদ্ধি? মোবাইল ফোনে পরিচালক বললেন, 'লকডাউনে আমরা বন্ধুরা সবাই বাড়িতে আটকে ছিলাম। সেই সময়ই মাথায় এই ছবির ভাবনাটা আসে। লকডাউনে শ্যুটিং করতে পারতাম না। আর অ্যানিমেশান এমন একটা মাধ্যম যার সাহায্যে সহজেই অনেক কিছু বলে দেওয়া যায়। সেটার জন্য বাইরে গিয়ে শ্যুটিং করার প্রয়োজন হয় না। আর আমার নিজের ভীষণ অ্যানিমেশান পছন্দ। আমার বন্ধু রাজর্ষী নাগ এটা নিয়েই পড়াশোনা করছে। চিত্রায়ণের দায়িত্ব সামলেছে ওই। ছবিটা বানানোর পর আমরা শিবুকাকুকে (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) দেখিয়েছিলাম। ওনার খুব পছন্দ হয়। শিবুকাকুই 'উইন্ডোজ' থেকে ছবি মুক্তির কথা বলেন।'



 কাজে ব্যস্ত পরিচালক

ঋদ্ধির লেখা সাড়ে সাত মিনিটের এই ছবিতে কোনও সংলাপ নেই। কেবল শেষে রয়েছে একটি গান, 'ঠিকানার খোঁজে'। গান নিয়ে বেশ মজার অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তরুণ পরিচালক। বললেন, 'আমি খুব খুশি গানটা অনিন্দ্যদা (অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়) আমাদের জন্য কম্পোজ করে দিয়েছেন। গোটা গানটা অ্যারেঞ্জ, মিক্সিং আর মাস্টারিং করেছেন প্রবুদ্ধ ব্যানার্জী। গানটি গেয়েছে সুরঙ্গনা (সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়)। গানের কথাগুলো আমারই লেখা। ছবি মুক্তির কয়েকদিন পরে গানটিও আলাদাভাবে পাবে। আর ছবিতে গানটা কোন পরিপ্রেক্ষিতে আসবে তার জন্য শর্টফিল্মটা দেখতে হবে।' ছবির মিউজিকের দায়িত্ব রয়েছেন সোহিনী গুপ্ত। ঋদ্ধি বললেন, 'সোহিনীর সঙ্গে আমার অনেকদিনের আলাপ। লকডাউনের মধ্যেই তিনি রাশিয়ার সাউন্ড ডিজাইনারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। তারপর স্টুডিও ভাড়া করে ফোনে কথোপকথন করেই মিউজিক রেকর্ড করা হয়। এই বিষয়টা  বেশ নতুন কিন্তু!'



'ঠিকানা' প্রথম মুক্তি পেলেও এর আগে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনা করেছেন ঋদ্ধি। তবে এখনও পোস্ট প্রোডাকশানের কাজ শেষ না হওয়ায় আটকে রয়েছে সেই ছবির মুক্তি। ঋদ্ধি বললেন, 'ছবিটার নাম 'কোল্ডফায়ার', ওটাই আমার প্রথম কাজ। নবারুণবাবুর একটা ছোট গল্পকে আধার করে ছবিটা করা। বাবা-মা দুজনেই অভিনয় করেছেন ছবিটায়। আমি ভীষণ প্রিভিলেজড যে এত ভালো ২জন অভিনেতা-অভিনেত্রী আমার প্রথম ছবিতে কাজ করেছেন। আশা করছি অক্টোবরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এই ছবিটা অবশ্য শর্টফিল্ম হিসেবে একটু বড়, প্রায় ৩০ মিনিট মতো।'





সুশান্তকাণ্ডের পর গোটা সিনেদুনিয়া জুড়ে ঘোরাফেরা করছে একটা শব্দ, নেপোটিজিম। স্টারকিড হিসাবে স্বজনপোষণকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন ঋদ্ধি? উত্তরে তিনি বললেন, 'পরিচিত পরিবার থেকে আসার একটা সুবিধা হল আগে থেকেই একটা পরিচিতি থাকে। কোনও কাজ করলে বা না করলেও লোকে চিনে যায়। সেইটাকে সুবিধা বলা গেলে তা আমি পেয়েছি। কিন্তু অসুবিধাটা অনেক বেশি। আগে থেকে পারিবারিক একটা ইমেজ তৈরি হয়ে থাকলে অনেক বেশি চাপ থাকে। সেখানে সবসময় একটা তুলনার জায়গা এসে যায়। তবে আমি এই তুলনার সম্মুখীন খুব কম হয়েছি। আমার অভিনয় মানুষের ভালো লেগেছে বা খারাপ লেগেছে। কিন্তু কেউ আমায় বলেনি তুই ওর মতো কাজ করতে পারলি না। আমার কাছে কাজটাই আসল। আমাদের বাংলা ইন্ডাস্ট্রিটা খুব ছোট। কেউ পরিবারের নাম করে সুবিধা পেলেও শেষমেষ তাকে নিজের প্রতিভাটা দেখাতে হবে। আমার মনে হয় বলিউডেও তাই। দিনের শেষে কেবল পরিবারের নামের জোরে কেউই টিকে থাকতে পারেন না। আর কেউ যদি তুলনার সম্মুখীন হয় তবে নিজেকে ঘষামাজা করে কাজের মাধ্যমেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া উচিত।'







লকডাউনে নতুন নিয়মবিধি মেনে শুরু হয়েছে সিনেমার শ্যুটিং। কিন্তু এখনও তালা ঝুলছে প্রেক্ষাগৃহে। বন্ধ থিয়েটার, চরম দুর্দশার সম্মুখীন প্রচুর নাট্যকর্মী। পর্দার বাইরে নাট্যজগতের সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ঋদ্ধি। বললেন, 'মার্চ মাস থেকে সৌভ্রাতৃত্ব দলটি মোট ১৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করে নাট্যকর্মীদের সাহায্য করতে পেরেছে। অগাস্ট মাসেও ১০০টা পরিবারের জন্য ১ মাসের রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লড়াইটা আমরা প্রত্যেকে চালিয়ে যাচ্ছি। অনলাইন কনসার্ট থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করছি। যতদিন না থিয়েটার খুলবে আমরা এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।'



এর আগে লকডাউন চলাকালীন 'উইন্ডোজ' থেকে একাধিক শর্টফিল্ম মুক্তি পেয়েছে। ২৭ অগাস্ট, আরেকটা লকডাউনের দিনেই সন্ধে ৭টায় 'উইন্ডোজ'-এর সমস্ত প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে ঋদ্ধির লকডাউন শর্টস 'ঠিকানা'। ঋদ্ধি বলছেন,  'এই ছবি হারিয়ে যাওয়া শৈশবের। সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক শিশু সুস্থ, সুন্দর ছোটবেলা পায়নি, এই ছবিটা তাদের জন্য। মানসিকতা বদলই ছবির লক্ষ্য। আমরা লকডাউনে অবসাদের শিকার হচ্ছি, একটা বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে রয়েছি। এই ছবিটার মধ্যে একটা পজিটিভিটি আছে, একটা ফিল গুড ফ্যাক্টর আছে।'