কলকাতা: বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী। দুর্ঘটনায় তাঁর আঙুল ক্ষতিগ্রস্ত। তার উপর লকডাউন। পরিবারে আয় এখন নেই বললেই চলে। ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙেছে ঝুপড়িটাও। তাই লড়াই এখন বাইরে-ঘরে। তবু তারই মাঝে পড়াশোনাই তাঁর ব্রত, লক্ষ্য। দক্ষিণ ২৪ পরগণার পাথরপ্রতিমার সৌম্যদেব গুড়িয়া। চরম প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করেও উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ছাত্র সৌম্যদেব। তার লড়াইয়ের গল্প এখন স্কুলের অন্যান্য ছাত্রদের কাছে অনুপ্রেরণা।
করোনা পরিস্থিতিতে এখন সংসারের একমাত্র ভরসা সৌম্যদেবই। সেই এখন চাষের জমিতে কাজ করে সংসার চালায়। উচ্চমাধ্যমিকে বিষয় ছিল অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। ভবিষ্যতে তাই নিয়েই পড়তে চায়। কিন্তু সরকারি কলেজে সুযোগ পেলেও থাকা-খাওয়ার খরচ দেবে কে? সংসারটাই বা চলবে কীভাবে? চিন্তায় পরিবার।


লকডাউনের জেরে অভাব তো ছিলই। সমস্যা আরও বাড়িয়েছে সাম্প্রতিক ঘূর্ণঝড়। সৌম্যদেবদের রাস্তার ধারের ঘরের চাল উড়ে যায়। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ছোট্ট বাড়িটা। এদিকে সংসারে আছে ছোট একটি বোনও। সেও পড়াশোনায় বেশ ভাল। দশম শ্রেণির ছাত্রীর চোখেও অনেক দূর এগনোর স্বপ্ন। কিন্তু সব স্বপ্নের সামনেই এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অনটন।



সৌম্যদেবকে আগাগোড়া উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন স্কুলের হেড মাস্টারমশাই চন্দন মাইতি। তিনি জানান, বরাবর হস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছে সৌম্যদেব। ভোকলেটের অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে আবেদন করলে হয়ত পলিটেকনিক কলেজে পড়ার সুযোগও পেয়ে যাবে সে। কিন্তু আগামী দিনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন।

স্কুলের হেড মাস্টারমশাইয়ের সহায়তাতেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে সামান্য কিছু টাকা কৃতি ছাত্র হিসেবে পেয়েছে সৌম্যদেব। কিন্তু সেই টাকা খরচ হতে বেশি সময় লাগবে না। আগামী দিনে পড়াশুনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাই সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছে সৌম্যদেব ও তাঁর পরিবার।