কলকাতা: ক্রিকেট বা ফুটবল, কোনওটাই তাঁর তেমন পছন্দ নয়। অথচ ফুটবলকেন্দ্রীক ছবির নায়িকা তিনি! ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই সাড়া ফেলেছে ‘তিকি-তাকা’। ছবিতে ক্যামেরা হাতে সাংবাদিকতা করেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। সেই অভিজ্ঞতা কেমন লাগল সিনেমার বনির? এবিপি আনন্দের সঙ্গে কথায়, গল্পে অভিনেত্রী।


দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার




https://bengali.abplive.com/entertainment/tiki-taka-actor-ritabhari-chakraborty-interview-actress-ritabhari-on-life-career-dream-abp-live-exclusive-interview-740447/amp


আইপিএল আবহে রূপোলি পর্দায় ছাপ ফেলেছে কলকাতা ডার্বি। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত, ইমোনা এনাবুলু , ঋতাভরী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘তিকি-তাকা’-র কথা ইতিমধ্যেই ফিরছে দর্শকদের মুখে মুখে। আর ছবির নায়িকা? তিনি তো প্রোজেক্টার বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে! সেখানেই সপরিবারে দেখেছেন ছবির প্রিমিয়ার। তবে আক্ষেপের সুরে ঋতাভরী বললেন, ‘ম্যাচগুলো বড় পর্দায় দেখতে এত ভাল লাগছিল যে, মনে হচ্ছিল ডিজিটালে কী এই একই অনুভূতি পাবেন দর্শকেরা?  শ্যুটিং থেকে ডাবিং, বারবার আমার মনে হয়েছে এটা সিনেমাহলে দেখার ছবি।’


 


এর আগে ‘পরী’-তে অভিনয় করেছেন পরমব্রতর সঙ্গে। পরিচালক পরমব্রতর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? উচ্ছ্বসিত ঋতাভরী বলছেন, ‘সব জায়গায় পরমদার এত প্রশংসা করি যে, ও বিশ্বাসই করতে চায় না। কিন্তু ওর সামনে কখনও এত কথা বলতে পারিনি। আমার তো হাইস্কুল থেকে পরমদার ওপর ক্রাশ ছিল।' এখানেই থামলেন না ঋতাভরী। যোগ করলেন, ‘পরম পরিচালক হিসাবে ভীষণ গোছানো। কাজ করার সময় খুব পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে কী চাইছে, কী ভাবছে। এতে কাজের ভীষণ সুবিধা হয়। আর আমার মনে হয়, পরমব্রত সবচেয়ে সুদর্শন চিত্রপরিচালক। ফ্লোরে এলেই ফ্লোরটা আলো হয়ে থাকত।'


 


আর ইমোনা? প্রসঙ্গ উঠতে ঋতাভরী প্রথমে বললেন, ‘আমরা এত বাংলায় কথা বলতাম ও কিচ্ছু বুঝতে পারত না। খানিকক্ষণ কথা বলার পর ভুল বুঝতে পারতাম। তারপর ইমোনার জন্য আবার অনুবাদ করে দিতাম।’ তবে ইমোনাই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বলিউড তারকার সঙ্গে কাজ করছেন ঋতাভরী। তাঁদের মধ্যে বাংলা জানতেন না কেউই। ঋতাভরী বলছেন, 'পরী-র শ্যুটিং-এও একই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল অনুষ্কাকে (অনুষ্কা শর্মা)।  ওখানেও আমি, পরম, পরিচালক, ডিওপি সবাই বাঙালি ছিলাম। বাংলায় কথা বলতাম। অনুষ্কা তখন কিছুই বুঝতে পারত না। আবার আমার নিজেরও মালায়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দলে কাজ করতে গিয়ে এই ভাষা সমস্যা হয়েছে।'


 


মহালয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবীরূপে ছবি প্রকাশ করেছেন। মেয়েদের সম্মান, মর্যাদার কথা বলেছেন। কিন্তু ঠিক কতটা ধাক্কা দেয় সমাজে মেয়েদের বাস্তব চিত্রটা? ঋতাভরী বলছেন, 'আমাদের আরাধ্য দেবীর কত রূপ। মা কালী উলঙ্গিনী, আবার মা দুর্গা দশভূজা, আভরণে ভূষিতা। আমরা তো মাকে সমস্ত রূপেই আরাধনা করি। কিন্তু বাস্তব জীবনের নারীশক্তিকে আমরা অনুভব করতে পারি না। হয়তো, আমাদের সবার একটা ধারণা রয়েছে, দেবী মানেই তার মহাজাগতিক ক্ষমতা থাকবে। প্রত্যেক নারীর মধ্যেই ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সেটা তখনই প্রকাশ পাবে যখন আশপাশের সবাই তার ক্ষমতাকে বিশ্বাস করবে।'


 


করোনা আবহে বন্ধ ঋতাভরীর 'দ্য আইডিয়াল স্কুল ফর ডেফ অ্যান্ড ডাম্ব'। তাহলে পুজোর পরিকল্পনা? নতুন জামা? একরাশ খারাপলাগা মিশিয়ে ঋতাভরী জবাব দিলেন, '১০ বছরে এই প্রথম এতদিন ওদের সবার সঙ্গে দেখা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আমরাই সবাইকে বারণ করেছি আসতে। বেশিরভাগ বাচ্চাই তো দূর থেকে আসে। তবে পুজোয় ওদের সবার জন্য আমরা নতুন জামা পাঠাব। ওরা না আসতে পারলে ওদের মায়েরা নিয়ে যাবেন। সেই জামা পরে ওরা একটা করে ছবি পাঠালেই আমি খুশি।! আর নিয়মিত রেশন বা শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন তো চলছেই। সেইসব কিছুই বন্ধ হয়নি।' সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর অ্যাকাউন্ট খুললেই চোখে পড়ে স্কুলের শিশুদের সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন মুহূর্ত। ঋতাভরীর কথায়,' ওরা এত খুশি হয় ছবি শেয়ার করলে। জানি, ওই পোস্টগুলোয় সবচেয়ে কম লাইক, কমেন্ট আসে। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না, ওরা আমার জন্য গোটা পৃথিবী।'


 


শখের তালিকায় নতুন সংযোজন- মিনিয়েচার। নিজের ইচ্ছামতো পৃথিবী গড়ে তোলার এই কাজটাই এখন মনে ধরেছে অভিনেত্রীর। কখনও ছোট্ট লাইব্রেরি, ঘরের অন্দরমহল, আবার কখনও কার্টুন চরিত্র, ইনস্টাগ্রাম পেজ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ঋতাভরীর খেলাঘর। বলছেন, 'প্রত্যেক মানুষের এমন একটা শখ থাকা দরকার যার থেকে কোনও উপার্জন হয় না। কেবল নিজেকে খুশি রাখার জন্যই করা এইসব কাজ। মিনিয়েচার আমার কাছে তেমনই একটা শখ।'


 


শুধু কি মিনিয়েচার, স্কুলের ছবি? অভিনেত্রীর সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়ে তাঁর চোখ ঝলসানো ফটোশ্যুটের ছবি। সেখানে প্রতিদিন ভিড় করে অজস্র লাইক, কমেন্ট। ঋতাভরী বলছেন, 'ওরা সবাই আমার এক্সটেনডেড ফ্যামিলি।  এত মানুষ রয়েছেন পৃথিবীতে, তাদের মধ্যে অনেকে আমায় সমর্থন করার জন্য বেছে নিয়েছেন, আমি আপ্লুত। চেষ্টা করি প্রত্যেকের কথা শোনার, উত্তর দেওয়ার। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জায়গা নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই মাধ্যমটাকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করা যায়। আমি সাইবার বুলিং-এর প্রতিবাদ করি সবসময়।'  আর প্রেম? রহস্যের হাসি হেসে ঋতাভরী বললেন, 'এবার সবাই জানতে চাইবেন আমার কোনও মনের মানুষ আছেন কি না। এটুকু বলতে পারি, ঋতাভরী  সবসময় প্রেমেই থাকে। আমি হোপলেসলি রোম্যান্টিক। তবে কোনও একজন পুরুষকে এতটা গুরুত্ব দিতে রাজি নই। তাই ওটা রহস্যই থাক।'


 


ফুটবল বা ক্রিকেট, কোনওটাই তেমন পছন্দ নয় ঋতাভরীর। তবে তাঁর ভাগ্যের সঙ্গে খেলার নাকি গভীর যোগ রয়েছে। বললেন, 'আমার অনেক বন্ধুবান্ধব আছে যারা ক্রিকেটপাগল। পরমও ক্রিকেট, ফুটবল দুইই ভালোবাসে। আমি প্রথম যাঁর সঙ্গে হিন্দি ছবির ডেবিউ করেছিলাম তাঁর স্বামী ভারতীর ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। আমার ভাগ্যে বোধহয় শনিযোগের মত একটা স্পোর্টস যোগ রয়েছে।' হাসি থামিয়ে ঋতাভরী বললেন, ‘তবে আমি কিন্তু মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে ভীষণ ভালবাসি। সেটা যে কোনও খেলা হোক, মাঠে দেখার উদ্দীপনাটাই আলাদা।'  আইপিএল-এর মরসুমে পছন্দের তালিকার শীর্ষে কোন দল? ‘অবশ্যই কেকেআর, কলকাতা নাইট রাইডার্স! কারণ? শাহরুখ খান!’ হাসতে হাসতে স্পষ্ট জবাব অভিনেত্রীর।


 


ঋতাভরীর প্রার্থনা, আইপিএল চলুক। সঙ্গে কলকাতা ডার্বির গল্প নিয়ে রমরমিয়ে চলুক 'তিকি-তাকা'ও।