কলকাতা: আর কয়েকটা দিন পরেই নতুন বছরে পা। পুরনো বছর চলে গেলেও প্রত্যেক বছর দিয়ে যায় এক মুঠো স্মৃতি। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাজনীতি, ক্রীড়া, বিনোদন... খারাপ ভাল মিলিয়ে বছরটাকে ফিরে দেখতে ভালবাসে না এমন মানুষ নেই। বিনোদন দুনিয়ায় বলিউডের সাড়া জাগানো খবরগুলি আগেই তুলে ধরেছে এবিপি লাইভ। কিন্তু টলিউড? বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কেমন কাটল ২০২২? বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে বন্ধন, সাফল্য থেকে শুরু করে মনখারাপ... এবিপি লাইভে টলিউডের বিনোদনের সাড়া জাগানো বছর।
বিতর্কের শিকার সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর
৩১ মে। তিলোত্তমায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন 'কেকে' ওরফে মুম্বইয়ের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে ভীষণ আকস্মিকভাবে নাম জড়িয়ে যায় বাংলার এক সঙ্গীতশিল্পীর। তিনি রূপঙ্কর বাগচি (Rupankar Bagchi)। কেকে কলকাতায় আসার আগের দিনই একটি ফেসবুক লাইভ করেন রূপঙ্কর। সেখানে তাঁর বক্তব্য ছিল, বাংলা বাংলার শিল্পীদের চেয়ে বেশি মাতামাতি করে মুম্বইয়ের শিল্পীদের নিয়ে। কিন্তু সেখানে তার গলায়, 'কেকে কেকে কেকে.. কে কেকে?' সহ কিছু বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেকের মৃত্যুর পরে বাংলার সঙ্গীতশিল্পীর এমন সংলাপ ভাইরাল হওয়ায় চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হন রূপঙ্কর। মৃত্যুর হুমকি থেকে শুরু করে সঙ্গীতশিল্পীকে প্রবল রোষ সামলাতে হয়। শেষমেষ সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই ফেসবুক লাইভের জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন রূপঙ্কর। এরপরে ডিলিট করে দেন সেই ফেসবুক লাইভ।
প্রথমবার ছবি পরিচালনায় অনির্বাণ
তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন সেখানেই। থিয়েটার, পর্দায় অভিনয় আর তারপর পরিচালনা। ২০২১ সালে প্রথম ওয়েব সিরিজ পরিচালনা করেই অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য (Anirban Bhattacharyya) বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। আর ২০২২-এ আরও এক ধাপ সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙে উঠলেন অনির্বাণ। তাঁর হাত ধরে পর্দায় মুক্তি পেল তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি 'বল্লভপুরের রূপকথা' (Ballavpurer Rupkotha)। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগের বিশিষ্ট মানুষেরা এই ছবির প্রশংসা করেছিলেন। একেবারে সহজ সরল মন ভাল করা বাদল সরকারের নাটককে পর্দায় তুলে ধরেছেন অনির্বাণ। 'বল্লভপুরের রূপকথা' বক্সঅফিসেও সাফল্য অর্জন করেছিল।
ছেড়ে গেলেন 'গীতশ্রী'
১৫ ফেব্রুয়ারি থেমে গিয়েছিল সুবর্ণ যুগের এক সুরসফর। এই বছরেই দ্বিতীয় মাসেই বাংলা হারাল তাঁর গীতশ্রীকে। প্রয়াত হয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। জানুয়ারি মাসের শেষে দিক থেকেই অসুস্থ ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। গানের সঙ্গেই কেটে গেল তাঁর সারাটা জীবন। তাঁর গান যেন সন্ধ্যার মেঘমালা হয়েই চিরদিনের জন্য রয়ে গেল বাঙালির হৃদয়ে। গানে গানেই তো তিনি শুনিয়েছিলেন ..‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া।’ সুরের রাজপথে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় চিরকালের সাম্র্যাজ্ঞী। তাঁর গান অক্ষয়, অবিনশ্বর।
বড়পর্দায় ফের ফেলুদা
দীর্ঘ অপেক্ষার পরে এই বছরেই বড়পর্দায় ফেলুদাকে ফেরালেন সন্দীপ রায় (Sandip Roy)। নস্ট্যালজিয়া মেখে ফেলুদার গল্প ফিরছে শীতের ছুটিতে। এবার ফেলুদা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত (Indranil Sengupta)। ২৩ ডিসেম্বর বড়পর্দায় মুক্তি পাবে এই ছবি। এবারের গল্প হত্যাপুরী (Hatyapuri)। সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই সিরিজের সঙ্গে বাঙালির যোগ আত্মিক। এই একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে বাংলার আরও ২টি ছবি। তবে ফেলুদার সঙ্গে যে নস্ট্যালজিয়ায় বাঁধা পড়ে আছে বাঙালি, তার তুলনা বোধ হয় মেলা ভার। ফেলুদার শ্যুটিং যেহেতু মূলত রাজ্যের বাইরে হয়, সেই জন্য ফেলুদার ছবি পরিকল্পনার পরেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনা পরিস্থিতি। এই বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেও ফেলুদার কাজে হাত দিয়েছিলেন সন্দীপ রায়। বড়পর্দায় নতুন ফেলুদার ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় দর্শক।
না ফেরার দেশে ঐন্দ্রিলা
২৪ বছরের যে মেয়েটা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল হাজার হাজার মানুষের, এই বছরটা কেড়ে নিল প্রাণশক্তিতে ভরা সেই তরুণ অভিনেত্রীকে। ঐন্দ্রিলা শর্মা। ২ বার ক্যানসার জয় করে এসেছিলেন যিনি, তৃতীয় ধাক্কা পেরিয়ে নতুন বছর আর দেখা হল না তাঁর। ছোটপর্দার অভিনেত্রীর এই লড়াই যেমন উজ্জীবিত করত হাজার হাজার মানুষকে, তাঁর মৃত্যুতে চোখের কোন চিকচিক করে ওঠেনি এমন মানুষ মেলা ভার। ২০১৫ সালে প্রথম অস্থিমজ্জার ক্যানসারে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। ২০১৬ পর্যন্ত চিকিৎসা চলে। তারপর পুরোপুরি সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। শুরু করেছিলেন অভিনয়ও। কিন্তু এরপর আবার ২০২১ সালে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে অভিনেত্রীর। হঠাৎ কাঁধে ব্যথা হওয়ায় দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। চিকিৎসা করতে গিয়ে জানা যায়, ফের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ঐন্দ্রিলা। ডানদিকের ফুসফুসে ছিল টিউমার। ভেঙে পড়েছিলেন তরুণী অভিনেত্রী। চিকিৎসা করাতেই চাননি। তখন একবার কেমোথেরাপির যন্ত্রণা পার করে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু পরিবারের সদস্য, মা-বাবা-দিদি আর প্রেমিক সব্যসাচীর জন্যই আবার ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শুরু হয় অভিনেত্রীর। সুস্থও হয়ে ওঠেন। এরপর ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলে অভিনেত্রী। লাইটস... ক্যামেরা... অ্যাকশনের দুনিয়ায় ফিরেছিলেন তিনি। একটি সিনেমা, ও একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১ নভেম্বর হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাওড়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তারপরে ২০ দিনের লড়াই। ঐন্দ্রিলা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বাঁচার। পারলেন না...ঐন্দ্রিলাকে ধরে রাখা গেল না। ২৪ বছর বয়সে থেমে গেল এক 'ফিনিক্স' হওয়ার লড়াই। ফিরলেন না ঐন্দ্রিলা।