কলকাতা: প্রথমে 'ছিন্নমস্তার অভিশাপ', তারপর 'যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে'। একইদিনে ফেলুদার ডাবল ডোজ শোরগোল ফেলল সোশ্যাল মিডিয়ায়। একদিকে যেমন রইল প্রশংসা, তেমন পিছু ছাড়ল না বিতর্কও। ফেলুদার ভূমিকায় ফের এক নতুন মুখের অভিষেক হবে পর্দায়। শুধু কি তাই, এই প্রথম ফেলুদার পরিচালকের ভূমিকায় রয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে সব্যসাচী চক্রবর্তী, আবির চট্টোপাধ্যায়, বাঙালির মনে ফেলুদার ছবিটা ভীষণ স্পষ্ট। সেখান থেকে ঠিক কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল এই চরিত্রে অভিনয় করা? নিতে হয়েছিল কী কী প্রস্তুতি? যাবতীয় সংশয়ের জবাব দিতে পারবে 'ফেলুদা ফেরত'? এবিপি আনন্দে অকপট টোটা রায়চৌধুরী।



প্রশ্ন: ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন? 

টোটা রায়চৌধুরী: এ তো স্বপ্নপূরণ। ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করতে চান না এমন বাঙালি বিরল। আমার চরিত্র নিয়ে কোনওদিনই খুব একটা চাহিদা ছিল না। তবে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করার লোভ আমার ছিল। আমরা সবাই কিশোর বয়স থেকেই ফেলুদা পড়তে শুরু করি। সেই বয়স থেকেই হিরো বলতে প্রথমে ফেলুদাকেই মনে পড়ত। এর থেকে ভালো চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ সম্ভবত আমি আর পাইনি।



প্রশ্ন: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সব্যসাচী চক্রবর্তী। ফেলুদার চরিত্র নিয়ে মানুষের তো প্রচুর আশা, কল্পনা। দর্শকদের সেই আশা পূরণ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

টোটা: সত্যি বলতে সেটা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। সৌমিত্রবাবু বা সব্যসাচী চক্রবর্তী যা করেছেন আমার পক্ষে তার ২০ শতাংশও করা সম্ভব ছিল না। আমার সেই ক্ষমতাই নেই। আমি কেবল আমার অভিনেতা সত্ত্বাটিকে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাতে সঁপে দিয়েছিলাম। উনি যেমন করে বলেছেন আমি যতটা সম্ভব সেটাই করার চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন: পোস্টারে আপনার 'ফেলুদা'-লুক প্রকাশ পেয়েছে ইতিমধ্যেই। ট্রেলার রিলিজের পর কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন? 

টোটা: ৯০ শতাংশই খুব পজিটিভ প্রতিক্রিয়া বলতে পারেন। তবে ১০ শতাংশ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেটার জন্য অবশ্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ফেলুদা এমনই একটা আইকনিক চরিত্র, সেটা নিয়ে মানুষ সমালোচনা করতেই পারেন। তবে আমরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় ভীষণ খুশি।

প্রশ্ন: এই চরিত্রটার জন্য কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছিলেন?

টোটা: সত্যজিৎ রায় খুব স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছিলেন ফেলুদার চরিত্রটাকে। গল্পে ফেলুদা নিয়মিত যোগব্যায়াম করে, মার্শাল আর্টে দক্ষ। সেই সমস্ত মাথায় রেখে আমায় শারীরিক কসরৎ করতে হয়েছে এই চরিত্রটার জন্য। সৃজিতও আমায় সাহায্য করেছিলেন বেশ কিছু বিষয়ে। আমি ওনার কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছি।



প্রশ্ন: ট্রেলারের বিভিন্ন সিকুয়্যেন্স নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মন্তব্য চোখে পড়ছে।  অনেকে ট্রোলও করছেন, বিশেষত যেখানে ফেলুদা আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছেন। একজন অভিনেতার ওপর ঠিক কী প্রভাব পড়ে এগুলোর?

টোটা: প্রত্যেকটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমরা আসলে ফেলুদা পড়ে মাথার মধ্যে একটা ছবি এঁকে ফেলেছি। তার সঙ্গে যদি একচুলও না মেলে, আমরা সমালোচনা করতে শুরু করে দিই। কিন্তু পরিচালকের তো নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তিনি ১০ জনকে প্রশ্ন করে করে তো শট নিতে পারেন না। ট্রেলার দেখে গোটা ছবির বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। ট্রেলারে ছোট ছোট শট কেটে ব্যবহার হয়। কিন্তু ধারাবাহিকতাটা বোঝার জন্য পুরো ছবিটা দেখতে হবে। ওই বিশেষ দৃশ্যটার একটা তাৎপর্য রয়েছে। এখনই সেটা বলব না। সবাই যখন পুরো সিরিজটা দেখবেন বুঝতে পারবেন। আমার বলব, সমালোচনা করুন, কিন্তু তার আগে পুরো সিরিজটা দেখুন। সবটা দেখার মত তো পাল্টাতেও পারে। (হাসি)

প্রশ্ন: গল্পের সবচেয়ে প্রিয় অংশ কোনটা?

টোটা: ছিন্নমস্তার অভিশাপে একটা দৃশ্য রয়েছে। যেখানে সবাই বসে আছে আর ফেলুদা রহস্যের জট ছাড়াচ্ছে। ওই দৃশ্যটা শ্যুট করতে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। ওই সিক্যুয়েন্সটা ফেলুদার বিভিন্ন গল্পে বারবার ফিরে এসেছে। খুব নস্টালজিক ছিল ওই অংশটা। মনে হচ্ছিল শৈশবে ফিরে গিয়েছি। আর শটের মাঝখানে একসঙ্গে খাওয়া গল্প.. সেগুলো তো রয়েছেই।



প্রশ্ন: ছিন্নমস্তার অভিশাপের ট্রেলার যখন প্রথম মুক্তি পেল তখন সেখানে ছিল ‘রিটন বাই সৃজিত মুখার্জি’। পরে সেটা বদলে করা হয় ‘স্ক্রিনপ্লে, ডায়লগ অ্যান্ড ডিরেকশন সৃজিত মুখার্জি’। এটা কী ভুল না ইচ্ছাকৃত?

টোটা: আমরা মনে করেছিলাম বাঙালি বাকি সবার থেকে একটু বেশি অনুভূতিশীল, বেশি মেধাসম্পন্ন। কিন্তু দেখলাম আমরা সবার মতোই বড্ড প্রতিক্রিয়াপ্রবণ হয়ে উঠেছি। কোনও ব্যাপারটা তলিয়ে না দেখেই আমরা প্রতিক্রিয়া দিয়ে বসি। ‘রিটন বাই সৃজিত মুখার্জি’র আগেই একটা কার্ড গিয়েছিল, 'সত্যজিৎ রায়ের গল্প অবলম্বনে'। সেটা কী করে সবার চোখ এড়িয়ে গেল! আর সিনেমার ক্ষেত্রে রিটন বাই লেখার অর্থ হল চিত্রনাট্য লেখা। কাহিনীকার যখন কাহিনী লেখেন সেটা গল্প আকারে লেখেন। ছবি করার সময় সেটাকে শ্যুটিং-এর উপযোগী করে সাজাতে হয়। আমরা ধরে নিয়েছিলাম বাঙালি বুঝবেন এখানে চিত্রনাট্য লেখার কথা বলা হয়েছে। সেটা কেউ কেউ বুঝলেন না বা বুঝতে চাইলেন না। সবাই ভাবলেন একটা ভুল বার করা গিয়েছে আর সেটা দিয়েই আমরা পরিচালকে বিঁধব। সেই কারণেই এটা করা হল। তর্ক বিতর্ক চালানোর চেয়ে প্রোযোজকের ওটাকে বদলে দেওয়াই সহজ বলে মনে হল। তবে এখানে সৃজিত মুখোপাধ্যায় খুব বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। অন্য কোনও পরিচালক হলে কার্ডটা বদলাতেন না। কিন্তু পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের আবেগকে কোনওরকম আঘাত করতে চাননি।