কলকাতা: শুক্রবার মুক্তি পায় 'পারিয়া' (Pariah)। পথকুকুরদের নিয়ে ছবি, তাদের হয়ে লড়াইয়ের ছবি। কিন্তু প্রথম সপ্তাহান্তে বিশেষত মুক্তির দিন, শুক্রবার বিশেষ ভাল সাড়া পায়নি বিক্রম চট্টোপাধ্যায় (Vikram Chatterjee) অভিনীত ও তথাগত মুখোপাধ্যায় (Tathagata Mukherjee) পরিচালিত এই ছবি। কিন্তু কথায় বলে, কনটেন্ট যদি ভাল হয়, দর্শক আসবেনই। এক্ষেত্রেও কি তবে তাই? 'ওয়ার্ড অফ মাউথ' (Word Of Mouth) অর্থাৎ দর্শকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে 'পারিয়া'র কথা। যার ফলস্বরূপ প্রেক্ষাগৃহে মানুষের ঢল, ঊর্ধ্বমুখী টিকিট বিক্রির সংখ্যা এবং সর্বোপরি হল সংখ্যার বৃদ্ধি। স্বভাবতই এটা বড় সাফল্য, আর তাতে অবশ্যই উচ্ছ্বসিত অভিনেতাও। এবিপি লাইভকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই উচ্ছ্বাস স্পষ্ট বোঝা গেল বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের প্রত্যেক কথায়।
বাড়ছে হল সংখ্যা, দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় আনন্দিত বিক্রম
দর্শকের থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। বিক্রমের কথায়, 'প্রথমদিন, শুক্রবার শুরুটা ধীর গতিতে হয়েছিল। আমরা, বাঙালি দর্শকেরা, আশেপাশের লোকজন কোনও সিনেমা ভাল হয়েছে বললে সেই ছবি দেখতে যেতে বেশি ইচ্ছুক বোধ করি। ফলে সেই 'ওয়ার্ড অফ মাউথ' আমাদের জন্য খুবই কাজে লেগেছে। 'পারিয়া' দেখে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দুর্ধর্ষ। আমার প্রায় ১৪ বছরের অভিনয় জীবনে সবচেয়ে বেশি ভাল দর্শকের প্রতিক্রিয়া 'পারিয়া'র জন্য পাচ্ছি। এটা একটা তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি। আমরাও আত্মবিশ্বাসী হচ্ছি, যে ধরনের গল্প আমাদের ভিতর থেকে বলার ইচ্ছা জেগেছে, সেগুলোর সঙ্গে আমরা কোথাও দর্শককে একাত্ম বোধ করাতে পারছি। সেটা গোটা টিমের কাছে খুব আনন্দের বিষয়।'
শুক্রবারের পর শনিবার থেকে, বিশেষত রবিবার প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে। রবিবারের 'ফুটফল' অর্থাৎ দর্শক সংখ্যার ওপর নির্ভর করেই হয়তো প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিক্রমের কথায়, 'রবিবারের রেসপন্স ছিল দুর্দান্ত। সেই হিসেবেই হয়তো মঙ্গলবার থেকে হল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।' প্রায় ৫ থেকে ৬টি নতুন শোয়ে দেখা যাবে 'পারিয়া' শহর ও শহরতলির একাধিক প্রেক্ষাগৃহে। বিক্রমের কথায়, 'সপ্তাহের মাঝখানে একটা বাংলা ছবির ৫-৬টা শো বেড়ে যাওয়া খুবই অনুপ্রেরণা দেয়। এরকম তো সচরাচর হয় না।'
স্টার থিয়েটার, নন্দন, সিনেপলিস, অ্যাক্রোপলিসের মতো একাধিক প্রেক্ষাগৃহে ইতিমধ্যেই 'হল ভিজিট' সেরেছে ছবির টিম। দর্শকের থেকে পাওয়া হাতেগরম প্রতিক্রিয়া কী? উচ্ছ্বসিত বিক্রমের কথায়, 'দর্শকের রিঅ্যাকশন প্রচণ্ডভাবে সাহস জোগাচ্ছে। তাঁদের প্রতিক্রিয়া যেন আমাদেরই রক্ত গরম করে দিচ্ছে। সেই কারণে আমরা আরও দর্শকের কাছে সশরীরে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছি।' এই কারণেই বুধবার, সরস্বতী পুজো ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র আবহে একাধিক প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মারতে চায় গোটা টিম। বিক্রম জানাচ্ছেন, বুধবার গোটা টিমের কেউ কোনও কাজ রাখেনি। সকলেই হল ভিজিটের জন্য বুক করে রেখেছে নিজেদের। অভিনেতার কথায়, 'চন্দননগর, চুঁচুড়া, কল্যাণী, শেওড়াফুলি, হাওড়া, হুগলি এবং কলকাতার নানা হল তো আছেই, পুরোটা ঘোরার চেষ্টা করা হবে। হয়তো গোটা টিম দুটো দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। প্রসঙ্গত, যে কারণে বুধবার একাধিক জেলা বা শহরতলির প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা হল রবিবার সেখানের প্রেক্ষাগৃহগুলিতে দর্শকের সংখ্যা। রবিবার কল্যাণীর 'সঙ্গম', ব্যারাকপুরের 'অতীন্দ্র', শেওড়াফুলির 'উদয়ন', বর্ধমানের প্রেক্ষাগৃহ, কেপিএস মল, প্রত্যেকটা জায়গায় 'পারিয়া'র শো হাউজফুল ছিল। গত ৫-৭ বছরে বেশিরভাগ বাংলা সিনেমা শহরকেন্দ্রিক দর্শকের জন্যই দেখে এসেছি, তাতে শহরের বাইরের দর্শকের আগ্রহ বা উত্তেজনা কমই পাওয়া যায়। এই সিনেমার ক্ষেত্রে যেহেতু আমরা শহরতলির এতগুলো প্রেক্ষাগৃহ থেকে এত ভাল সাড়া পাচ্ছি, তাই আমাদের মনে হয় এটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যে তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা শুনি, তাঁদের ভালবাসা কুঁড়িয়ে আনি।'
বুধবার, ভালবাসার দিনে 'পারিয়া' পুরোপুরি তৈরি দর্শকের ভালবাসা চেটেপুটে উপভোগ করতে। বিক্রম বলছেন, 'আমার মনে হয় এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে আমরা অনেকটা ভালবাসা পাব। বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালবাসার দিন। আমাদের সিনেমা ভালবাসার সিনেমা। এই সিনেমা মানুষ ও পোষ্য বা পশুপাখির ভালবাসা নিয়ে কথা বলে। তাই এবছরের ভ্যালেন্টাইন্স ডে-টা হয়তো একটু অন্যভাবে উদযাপন করব।' এই ছবির বক্স অফিস কালেকশন অর্থাৎ ব্যবসার অঙ্ক এখনও নিশ্চিত জানা না গেলেও মানুষের ক্রমবর্ধমান ভালবাসা যে সাফল্য এনে দিয়েছে তা অভিনেতার কথাতেই স্পষ্ট।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।