মুম্বই: 'দবং' সলমন খানের চশমায় লাভ সিম্বল! 'তেরে মস্ত মস্ত দো নয়ন'-গানের শ্যুটিংয়ের সময় পুলিশের অভিনয় করা নায়কের এরকম ‘রকবাজ’ লুক নিয়ে প্রবল আপত্তি ইউনিটের সব্বার। কিন্তু কোনও আপত্তিতে কর্ণপাত করলেন না স্বয়ং ‘চুলবুল পাণ্ডে’। সঙ্গীত পরিচালকদের গিয়ে বললেন, 'তোমরা যা চাও তাই হবে।' তারপর? চশমায় সেই লাভ সিম্বলই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সুপারহিট সেই গানের আড়ালে ছিলেন দুই সঙ্গীত পরিচালক। বিনয় সাপ্রু আর রাধিকা রাও। সলমনের লাভ সিম্বল চশমা পরা অবতার যাঁদের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল।
চিরাচরিত রাস্তায় কখনওই হাঁটতে চায়নি সাপ্রু-রাও জুটি। বলিউডের সবাই যখন ব্যস্ত স্বনামধন্যদের নিয়ে, তখন নতুন শিল্পীদের জন্যও মঞ্চ তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা। বিনয়-রাধিকার হাত ধরেই বলিউডে খ্যাতির আলো দেখেছেন একাধিক গায়ক-গায়িকা। আবার তাঁদের ঝুলিতে রয়েছে লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, জগজিৎ সিংহের মতো কিংবদন্তি থেকে শুরু করে শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিংহ, নেহা কক্করের মতো জনপ্রিয় তারকার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও।
মায়ানগরীতে প্রায় ২ দশক ধরে কাজ করে আসছেন বিনয়-রাধিকা। দীর্ঘ কেরিয়ারের মধ্যে ৪ বছর কাজ থেকে বিরতি নিয়েছিলেন উভয়েই। তারপর কাজে ফেরা এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। মুম্বই থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বিনয় বলছেন, 'আমাদের পরিচালিত প্রথম ছবি 'লাকি-নো টাইম ফর লাভ'-এর মুখ্য চরিত্রে ছিলেন সলমন খান। কিন্তু প্রথমে ওই ভূমিকাটি করার কথা ছিল সোহেল খানের। একটি আবাসনের দোতলায় থাকেন সোহেল। একতলায় সলমন। একদিন সোহেলের সঙ্গে চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সলমনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় নিচেই। আমাদের দেখে উনি প্রশ্ন করেন 'কোথায় যাচ্ছো'? জানাই, সোহেলের সঙ্গে ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। শুনে আমাদের ঘরে ডেকে এনে বসান সলমন। তারপর হঠাৎই বলে ওঠেন, অভিনন্দন। এই ছবিটায় আমি কাজ করব। তোমাদের কাজ অনেকদিন ধরে দেখে আসছি। খুব ভালো লাগে। সলমন কোনও প্রশ্ন করেননি ছবি বা স্ক্রিপ্ট নিয়ে। রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের কাছে সেটাই ছিল একটা বিশাল পাওনা।' শুধু দবং সিরিজ নয়, প্রেম রতন ধন পায়ো, জয় হো-র মত একাধিক হিট ছবিতে সলমনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বিনয়-রাধিকা।
সলমনের কথা উঠতেই স্মৃতির ঝুলি উপুড় করে দিলেন সঙ্গীত পরিচালক। একবার রাশিয়ায় শ্যুটিং করার সময় পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে খুব বিব্রত ছিলেন বিনয়-রাধিকা। বিনয় বলছেন, 'একদিন রাতে খুব বরফ পড়ছে। আমরা ভাবছিলাম আগামীকাল শ্যুটিং কী করে হবে। সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া করে ঘরে চলে গিয়েছে। আমি আর রাধিকাজি বসে খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ সেখানে হাজির সলমনের এক প্রতিনিধি। আমাদের হাতে একটা প্যাকেট তুলে দিয়ে বললেন, সেটা নাকি আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন নায়ক। অবাক হয়ে প্যাকেট খুলতেই দেখি, ২ লাখ রুবেল! সঙ্গে লেখা, তোমরা খুব বিব্রত রয়েছো, তাই এটা তোমাদের জন্য। চিন্তা কোরো না।’
'দবং’ ছবির 'মস্ত মস্ত দো নয়ন' সাড়া ফেলেছিল বলিউডে। আর সলমনের চশমায় সেই লাভ সিম্বল তো হয়ে উঠেছিল স্টাইল স্টেটমেন্ট। ওই দৃশ্যটি বিনয়-রাধিকারই মস্তিস্কপ্রসূত। গোটা ইউনিট বিষয়টি নিয়ে বেশ দ্বিধায় ছিল। বিনয় বলছেন, 'রাতের অন্ধকারে শ্যুটিং। অথচ সলমনকে কালো প্যান্ট-শার্ট আর সানগ্লাস পরতে বলেছিলাম। সলমন কিন্তু আপত্তি করেননি। বলেছিলেন, তোমরা যা চাইছো তেমন করেই শ্যুটিং হবে। আমার তোমাদের ওপর ভরসা রয়েছে।'
বিনয় সাপ্রু-রাধিকা রাওয়ের সঙ্গীত পরিচালনায় নির্মিত, সদ্য মুক্তি পাওয়া মিউজিক ভিডিও ‘ওয়াস্তে’ ইতিমধ্যেই সুপারহিট। এই প্রথম কোনও ভারতীয়র ভিডিও পেরিয়ে গেল ১ বিলিয়নেরও বেশি ভিউয়ার সংখ্যা। বিনয়ের কথায় উঠে এল সেই মিউজিক ভিডিওর নেপথ্য কাহিনি। পরিচালক বলছেন, ‘একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে বিচারকের ভূমিকায় ছিলাম আমি আর রাধিকাজি। সেখানে অল্পবয়সী একটি মেয়ে গান গাইছিল। আমরা ঠিক করলাম এই মেয়েটিকেই একটু তালিম দিলে কেমন হয়! খোঁজ নিয়ে জানলাম ওর নাম দিব্যানি। যখন ওকে শেখাতে শুরু করি, ওর ওজন অনেক বেশি ছিল। ওজন কমানো থেকে শুরু করে ডান্স ট্রেনিং, দিব্যানিকে তৈরি করে তুলতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল।’ বিনয় হাসতে হাসতে বললেন, ‘জানেন, ওই ভিডিওটার জন্য প্রয়োজনের বেশি একটুও টাকা খরচ করিনি। দিব্যানি রাধিকা ম্যামের পোশাক পরেছিল আর সিদ্ধার্থর জাম্পারটা ছিল আমার।’
একদিকে লতা-আশা থেকে শুরু করে নুসরত ফতে আলি খান, ফাল্গুনী পাঠক। অন্যদিকে আবার শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিংহ, নেহা কক্কর। সঙ্গীতের ২ প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছেন বিনয়-রাধিকা। সাময়িক বিরতির পর যখন ফের কাজ শুরু করেন, তখন নতুন তারকাদের নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলেন তাঁরা। বিনয় বলছেন, 'আমরা একটা সময় লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, জগজিৎ সিংহের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে কাজ করেছি। ফিরে এসে প্রথম প্রথম মনে হতো, ইন্ডাস্ট্রির নতুন গায়ক গায়িকারা কেমন হবেন! কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, ওঁরাও যথেষ্ট প্রতিভাবান। নেহা কক্কর থেকে শুরু করে শ্রেয়া ঘোষাল, সবাই ভীষণ এনার্জেটিক। ওরা ছাড়াও অনেক উঠতি গায়ক-গায়িকার সঙ্গে আমরা কাজ করেছি। অভিজ্ঞতাটা একেবারে আলাদা। ওরা একেবারেই নরম মাটির মতো হয়, সমস্ত কথা শোনে। ওদের নিদের মতো করে গড়ে নেওয়া যায়।'
লতা-আশার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? প্রশ্ন শুনে বিনয় প্রথমেই বললেন, 'ওঁদের সঙ্গে কাজ করা সরস্বতীর আশীর্বাদ। আমরা তখন সবে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। অথচ আমরা নতুন, সেটা কোনওদিনও কাজের সময় বুঝতে দিতেন না লতাজি আর আশাজি। পরিচালক হিসাবে আমরা যা বলতাম সেভাবেই কাজ করতেন। আমরাই একমাত্র পরিচালক যারা একসঙ্গে আশাজি-লতাজি আর জগজিৎ সিংহকে নিয়ে কাজ করতে পেরেছে।'
কর্মস্থল বলিউড হলেও বাংলার ওপর টান রয়েছে বিনয়-রাধিকার। বললেন, 'বাঙালিদের তো রক্তে, ডিএনএতেই গান আছে। আমাদের তো সাউন্ড রেকর্ডিস্ট থেকে শুরু করে বেশিরভাগ লোকই বাঙালি। আমাদের আগামী কাজ সুকুমার রায়ের লেখাকে মাথায় রেখে। একটি কবিতা-সংকলেনর কাজ চলছে। গুলজারের কলমে এবার বলিউডে আসতে চলেছে 'আবোল-তাবোল'।’
Vinay Sapru exclusive interview: ‘দবং’ সলমনের ‘লাভ সিম্বল’ চশমায় ঝড় তুলেছিলেন, এবার গুলজারের কলমে 'আবোল-তাবোল' নিয়ে আসছেন বিনয় সাপ্রু
তোর্ষা ভট্টাচার্য্য
Updated at:
16 Dec 2020 08:40 PM (IST)
বলিউডের সবাই যখন ব্যস্ত স্বনামধন্যদের নিয়ে, তখন নতুন শিল্পীদের জন্যও মঞ্চ তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলেন বিনয় সাপ্রু ও রাধিকা রাও। তাঁদের হাত ধরেই বলিউডে খ্যাতির আলো দেখেছেন একাধিক গায়ক-গায়িকা। আবার তাঁদের ঝুলিতে রয়েছে লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, জগজিৎ সিংহের মতো কিংবদন্তি থেকে শুরু করে শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিংহ, নেহা কক্করের মতো জনপ্রিয় তারকার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও।
NEXT
PREV
বিনোদন (entertainment) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -