মুম্বই: বন্ধু বিট্টু আনন্দের সঙ্গে দুবাই যান আশা ভোঁসলে-রাহুল দেব বর্মন নাইটে। বিমানবন্দরে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে আলাপ। সেটা ১৯৮৮। মুম্বই বিস্ফোরণের ৫ বছর আগের ঘটনা। দাউদ অপরাধী বলে তখনও জানত না বলিউড। তাই দুবাইয়ে দাঁড়িয়ে দাউদের সঙ্গে আলাপ করতে দ্বিধা করেননি তিনি।

আত্মজীবনীতে এমনটাই জানিয়েছেন অভিনেতা ঋষি কপূর। সে সময় নাকি ভিআইপিদের ওপর নজর রাখতে দুবাই বিমানবন্দরে সব সময় দাউদের লোক থাকত। যখন তিনি বিমানবন্দর থেকে বেরোচ্ছেন, তখন একজন এগিয়ে এসে তাঁর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে, দাউদ সাব কথা বলবেন। দাউদ তাঁকে বলে, কিছু দরকার পড়লে জানাতে। নিজের বাড়িতেও তাঁকে নেমন্তন্ন করে সে। আচমকা এই ঘনিষ্ঠতায় ঋষি হকচকিয়ে যান।

দাউদের লোকই পরে এক সন্ধেয় রোলস রয়েসে করে তাঁদের হোটেল থেকে নিয়ে যায় দাউদ ইব্রাহিমের বাড়িতে। বিট্টু আনন্দের সঙ্গে দাউদের লোকের কচ্ছের ভাষায় কথা হচ্ছিল। তখন বুঝতে না পারলেও পরে শোনেন, তাঁদের চক্রাকারে ঘোরানো হচ্ছিল, যাতে তাঁরা বাড়িটা ঠিক কোথায় বুঝতে না পারেন।

দাউদ চা খেতে খেতে তাদের বলে, নিজের করা বেশ কয়েকটি অপরাধের কথা। তবে সে জন্য তার মধ্যে কোনও অনুতাপ ছিল না। দাবি করে, চুরি, ছিনতাই করলেও নিজে হাতে কখনও কাউকে খুন করেনি সে, তবে খুন করিয়েছে। নিজেকে আল্লার দূত বলে ব্যাখ্যা করে সে, কেউ একজন মিথ্যে বলে আল্লার বিরুদ্ধাচরণ করায় তাকে মুম্বই আদালতের মধ্যেই প্রথমে জিভে ও পরে মাথায় গুলি করে খুন করে।

দাউদ ঋষিকে বলে, তাঁর বাবা রাজ কপূর, তাঁর দুই কাকা শাম্মি ও শশী, দিলীপকুমার, মেহমুদ সহ বেশ কয়েকজন ভারতীয় অভিনেতার সে ভক্ত। তাঁকে সেদিন ঘণ্টাচারেক দাউদের সঙ্গে কাটাতে হয়।

এরপরেও তাঁর সঙ্গে দাউদের দেখা হয় দুবাইতে। একটি জুতোর দোকানে স্ত্রী নীতু সিংহের সঙ্গে শপিং করছিলেন তিনি। দাউদ বলে, আপনার যা কিনতে ইচ্ছে করছে, আমাকে বলুন। কিন্তু তিনি ফিরিয়ে দেন সেই প্রস্তাব। দাউদ বলে, ভারত থেকে সে এ দেশে পালিয়ে এসেছে, কারণ, ভারতে সে বিচার পাবে না। কিন্তু এখানেও অনেকে আছে, যারা তার বিরুদ্ধে। ভারতে অনেককে সে কিনে নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজনীতিকও আছেন। ঋষি বলেন, তিনি অভিনেতা, কোনও কিছুতে তাঁকে না জড়াতে। এরপর আর দাউদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। মুম্বই হামলাও ঘটে যায় এর মধ্যে। তবে তার পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হয়েছে তাঁর।