কলকাতা: সত্তরের দশক। সাদা কালো সিনেমার যুগ। সেই গ্রে-টোনের ফিল্ম রঙিন করে তুলেছিলেন তিনি। মারকাটারি সৌন্দর্য, দেহবল্লরী থেকে তুখোড় অভিনয়ের মিশেল- কী ছিল না? সেই সময়ের তাবৎ যুবার চোখে-মনে রং লাগিয়েছিলেন তিনি-মিঠু মুখোপাধ্যায়।


'যায় যায় প্রাণ যায়'-এর অনবদ্য নাচ। আবার ওই ফিল্মেই মান্না দে'র কণ্ঠে 'বাজে গো বীণা' গানের চিত্রায়নে তাঁর ভঙ্গিমা-কটাক্ষ। কিংবা 'মার ঝাড়ু মার...'- সব কটিতেই অপলকে তাকিয়ে থাকতে তাঁর দিকে। আসলে ওই গানগুলি যে সিনেমার। সেই 'মর্জিনা-আবদুল্লা'ই কার্যত বাঙালি দর্শকের মনের মণিকোঠায় বসিয়েছিল মিঠু মুখোপাধ্যায়কে।


অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকে একেবারে প্রথমে- ১৯৭১-৭২ নাগাদ। চিত্ত বসুর শেষ পর্ব-তে সম্ভবত ডেবিউ হয়। কিন্তু সেটা খুব বেশি সাফল্যের মুখ দেখেনি। তারপর আসে সোনার সুযোগ। ১৯৭৩ সাল। দীনেন গুপ্তর 'মর্জিনা-আবদুল্লা'-তে মর্জিনার চরিত্র পেলেন তিনি। তারপরেই বাংলা আপন করে নিয়েছিল তাদের মিঠুকে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৭৪ সালে আসে মৌচাক। একদিকে উত্তমকুমার,সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মতো লেজেন্ড, সেখানেই নায়ক রঞ্জিত মল্লিকের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন মিঠু মুখোপাধ্যায়। পর্দার সেই রসায়ন- মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিলেছিল তামাম দর্শক- সুপারহিট হয়েছিল অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের মৌচাক। আর মিঠু মুখোপাধ্য়ায়ের চরিত্রের গলায় 'বেশ করেছি প্রেম করেছি...' যেন সত্তরের দশকে প্রেমের খোলাখুলি উদযাপনের বার্তা দিয়েছিল।


আরও পড়ুন...


চুলের রুক্ষ-শুষ্ক ভাব দূর করতে সারাবছরই প্রয়োজন যত্ন, কীভাবে পরিচর্যা করবেন?


এরপর অনেকটাই ধূমকেতুর মতো উত্থান নায়িকা মিঠু মুখোপাধ্যায়ের। নিশিকন্যা, কবির মতো সিনেমা করেছেন। রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে জুটিতে আরও একটি সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছিলেন মিঠু- স্বয়ংসিদ্ধা। যদিও মৌচাকের তুলনায় একেবারেই অন্যরকম গল্প ও চরিত্র ছিল সেখানে। জুটি বেঁধেছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গেও- হোটেল স্নো ফক্স এবং চাঁদের কাছাকাছি।


শুধু বাংলাই নয়, মুম্বইতেও নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে দুলাল গুহর 'খান দোস্ত' তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি। তারপর মূলত বাসু চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনাতেই হিন্দি ছবি করেছিলেন তিনি। দিল্লাগি, সফেদ ঝুট, দো লাড়কে দোনো কাড়কে- মিঠু মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। কিন্তু মুম্বই বেশিদিন ভাল লাগেনি বাংলার এই ম্যাটিনি হার্টথ্রবের। ফের বাংলায় ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু আগের মতো রাজত্ব তৈরি করতে পারলেন না। কিছু বাংলা ছবি করলেও সেগুলি আগের মতো মাইলস্টোন হয়নি। ততদিনে বাংলায় দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন মহুয়া রায়চৌধুরী, দেবশ্রী রায়। কিন্তু মিঠু মুখোপাধ্যায় ম্যাটিনি আইডল ছিলেন। এত সহজে মাঠ ছাড়ার ব্য়ক্তি তিনি নন। চন্দ্র বারোটের পরিচালনায় মুক্তি পায় আশ্রিতা। মিঠু মুখোপাধ্যায়ের বিপরীতে কনওয়ালজিৎ সিং। সাড়া ফেলেছিল সেই সিনেমা। ব্যাস, আর সিলভার স্ক্রিনে দেখা যায়নি মিঠু মুখোপাধ্যায়কে। ফিল্মের জগতকে পুরোপুরি বিদায় জানান। মুম্বইতেই থিতু হয়ে যান তিনি। মিডিয়া থেকেও দূরে থাকতে পছন্দ করেন। ধূমকেতুর মতো উত্থান যাঁর, তিনি হয়তো খ্যাতির আলোয় থাকতে থাকতেই বিদায় নিতে চেয়েছিলেন এই স্বপ্ন-দুনিয়া থেকে। যাতে ভক্তদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে যায় তাঁর গ্ল্যামারের ছটা।