নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম কেন্দ্রের তিনবারের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় (Satabdi Roy, three-time sitting TMC MP from Birbhum constituency, West Bengal), যাঁর প্রথম পরিচয় তিনি একজন অভিনেত্রী (Actress)। দীর্ঘদিনের বিরতির পর ফিরছেন পর্দায়। কেন আবার অভিনয় জগতে? শতাব্দীর উত্তর, 'আমি কেন অভিনয়ে ফিরলাম? ধরুন, আমি আবার নিঃশ্বাস নিতে চাইছিলাম। একজন সৃজনশীল মানুষ হিসাবে, সেটে ফিরেই আমার নিজেকে ছাই থেকে উঠে আসা ফিনিক্স পাখির মতো মনে হচ্ছিল। অভিনয় আমার নেশা এবং আমি আজ যা, আমি আজ যাই করি না কেন, আমি আমার শিল্পের কাছে ঋণী।'


প্রায় এক দশক অভিনয় দুনিয়া থেকে বিরতি নেওয়ার পর, শতাব্দী রায়, বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবার পা রাখতে চলেছেন হিন্দি সিনেমা জগতে। দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোর্টরুম ড্রামা, 'দ্য জঙ্গিপুর ট্রায়াল' (Debaditya Bandopadhyay's 'The Jangipur Trial') ছবিতে দেখা যাবে তাঁকে। এই ছবিতে কাজ করেছেন  কবীর বেদী, অমিত বহেল, জাভেদ জাফরি, রাজেশ খট্টর, জাকির হুসেন, ব্রজেশ হিরজি ও কন্নন অরুণাচলমের (Kabir Bedi, Amit Behl, Javed Jaaferi, Rajesh Khattar, Zakir Husain, Vrajesh Hirjee and Kannan Arunachalam) মতো অভিনেতারা। দিয়া হালদার নামে এক আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শতাব্দী রায়। এমন একজন আইনজীবী, যিনি ৩৫ বছর পুরনো একটি মামলা পুনরায় শুরু করেন এবং যার ফলে তোলপাড় হয়ে যায় চারিদিক।


অভিনেত্রীর কথায় সিনেমার কাজটি তাঁর কাছে সঠিক সময়ে এসেছিল যখন তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন এবং সিনেমার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারতেন। আইএএনএস (IANS)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জনপ্রিয় অভিনেত্রী বলেন, 'বেশ কিছু বছর ধরে, আমি আমার সময় ভাগ করতে পারছিলাম না। আমার সংসদ অধিবেশন এবং আমার নির্বাচনী এলাকাকেই আমার সব সময় দিয়েছি।'


তপন সিনহার প্রবল প্রশংসিত বাংলা ছবি 'আতঙ্ক' দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন শতাব্দী রায়। অভিনেত্রী জানান যে তিনি নতুন ধারণা সম্পন্ন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। বিশেষত যাঁরা একটি চরিত্রের মধ্যে একাধিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রাখেন। 'এই সময়ের তরুণ পরিচালকরা যে ধরণের অপার প্রতিভা নিয়ে আসেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁদের কাজ দেখতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আমি সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবু মিত্র এবং অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করতে চাইব। হিন্দিতে রাজকুমার হিরানি ও কবীর খান দুর্দান্ত কাজ করছেন।'


আরও পড়ুন: Gora Teaser: আসছেন 'প্রাইভেট ডিফেক্টিভ' গৌরব সেন, মুক্তি পেল 'গোরা'-এর টিজার


আরও পড়ুন: Parambrata's Aranyak Shoot: হাঁটু পর্যন্ত বরফে মারপিটের দৃশ্য, ‘আরণ্যক’-এর অভিজ্ঞতা জানালেন পরম


বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রজন্মের পরিচালকেরা নানা দুর্দান্ত বাংলা সিনেমা তৈরি করে চলেছেন। সেই ব্যাপারে তিনি জানান যে, এটি সবসময়েই একটি সৃজনশীল স্থান যেখানে একাধিক ছক-ভাঙা কাজ হয়। অভিনেত্রীর কথায়, 'আমি তো বলব শুধু অন্যান্য স্থানীয় ছবিই নয়, বরং ওয়ার্ল্ড সিনেমার এই ছবিগুলি থেকে একাধিক টেকনিক, সৃজনশীলতা ও বিষয় বাছাইয়ের ব্যাপারে শিক্ষা নেওয়া উচিত।'


ব্যতিক্রমী সৃজনশীল প্রতিভার জন্য প্রচুর সুযোগ এনেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, মত শতাব্দী রায়ের। 'শুধু অন্যরকমের বিষয়েই নয়, ওটিটি আমাদের কত দুর্দান্ত অভিনেতাও উপহার দিয়েছে। এটার খুব প্রয়োজন ছিল, কারণ এখানে এমন কিছু বিষয়, গল্প, কায়দা বা পদ্ধতি নিয়ে আসা হয়েছে যা হয়তো কখনওই সিনেমা হলে মুক্তি পেতে পারতো না।'


শতাব্দী রায় নিজে একজন 'ডাই-হার্ড' রোমান্টিক মানুষ। ফলে তিনি প্রেমের গল্পে কাজ করতে পছন্দ করবেন বলেও জানান। একজন অভিনেতা হিসাবে তিনি এমন চরিত্রের সন্ধান করছেন যাতে তিনি আগে কখনও কাজ করেননি। অভিনেত্রী বলেন, 'টাটকা স্ক্রিপ্ট আর অন্য ধরণের প্লট আমাকে উত্তেজিত করে।' একইসঙ্গে তিনি সৃজনশীলতার স্বাধীনতার পক্ষে এবং 'নিষিদ্ধ' প্রথার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, 'আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে একজন শিল্পী বা বলা যায়, যে কোনও সৃজনশীল ব্যক্তিকে সম্মান করা উচিত। তাঁদের স্বাধীনতাকে খর্ব করার চেষ্টা করা উচিত নয়। যদি তাঁদের স্বাধীনতার পথে অন্তরায় আসে, তাহলে তাঁরা নিজেদের বন্দি বোধ করে। তাঁর শৈল্পিক সত্ত্বা শুকিয়ে সেখানেই মারা যায়।'