ঘটনাটা কী?


ভারতে লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Elections 2024) চলাকালীন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল (Viral video) হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি রাস্তায় প্রচুর মোটরবাইক দাঁড়িয়ে রয়েছে, গেরুয়া পতাকা নিয়ে তাতে রয়েছে প্রচুর লোক (saffron bike rally)। আর তাঁদের উপর পাথর ছোঁড়ার পাশাপাশি কিছু লোক ওই বাইকগুলিতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। ওই ভিডিওতে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার পাশাপাশি হিংসাত্মক মন্তব্য করতেও শোনা যাচ্ছে আক্রমণকারীদের।


ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) গেরুয়া পতাকা নিয়ে একটি বাইক মিছিল বেরিয়ে ছিল। সেই সময়ে একদল লোক তাতে হামলা চালায়। এর জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করা হয় ভিডিওটির শিরোনামে। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একজন টুইটারাট্টি পোস্টের ক্যাপশনে লেখেন, "দেখুন কীভাবে মমতার শাসনে গেরুয়া বাইক মিছিলকে ট্রিট করা হচ্ছে।" এই পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ২৭ হাজার বেশি বার দেখা হয়েছে। এই পোস্টের একটি আর্কাইভ ভার্সান এখানে দেখা যাবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত পোস্টগুলিও দেখা যাবে এখানে এবং এখানে




(Screenshot of the claim made online (Source: X/Screenshot/Modified by Logically Facts)



যাইহোক দাবিটির সত্যতা বিচার করে দেখা যায়, ভিডিও পশ্চিমবঙ্গের নয় আসলে ওড়িশার সম্বলপুরের। আর ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বাইক মিছিলে হিংসার সময় ফুটেজটি তোলা হয়েছিল।


কীভাবে সত্যিটা জানা গেল?


লজিক্যাল ফ্যাক্টসের তরফে ভিডিওটির মূল ছবিটির রিভার্স সার্চ করে দেখা যায়, একই ধরনের একটি ভিডিও মোজো স্টোরি তাদের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেছিল ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল (এখানে দেখুন)। পাশাপাশি তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, ঘটনাটি ঘটেছিল ওড়িশার সম্বলপুরে। 




(Comparison of the viral video and the Mojo Story video. (X/Mojo Story/Screenshot)


ভাইরাল ভিডিওটির লোকেশন মিলে যায় ওটিভি নিউজের (আর্কাইভ) করা ভিসুয়ালের মধ্যেও। যেখানে ওই ভাইরাল ভিডিওটি তোলা হয়েছিল।




(A comparison of the viral video and the OTV News video. (Source: X/OTV News/Screenshot)


সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল ওড়িশার সম্বলপুরে ভগবান হনুমানের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত একটি বাইক মিছিল চলাকালীন ওই হিংসার ঘটনাটি ঘটেছিল। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া ওই বাইক মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। যার মধ্যে ছিলেন হনুমান জয়ন্তী কোঅর্ডিনেশন কমিটি ও বজরঙ্গ দলের সদস্যরা। শহরে ওই মিছিল চলার সময় দুটি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়। যা ঠেকাতে গিয়ে জখম হয়েছিলেন কমপক্ষে ১০ জন পুলিশ আধিকারিক। ওই ঘটনার জেরে শহরে কার্ফু জারি করার পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবাও সীমিত করা হয়েছিল।


ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১২ এপ্রিলের ওই মিছিলটি তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে করা হচ্ছিল। বিকেল পাঁচটায় গোবিন্দটোলা থেকে শুরু হয়েছিল তারপর গোলবাজারের দিকে যাচ্ছিল সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভুটাপাডা, মোতিরঞ্জন, সুনাপালি এবং ধানকাহুডা এলাকা দিয়ে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে মিছিলটি ৬টার সময় মোতিরঞ্জন চকে পোঁছানোর পর কিছু মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে "জয় শ্রী রাম" এবং "ভারত মাতার জয়" বলে স্লোগান দিতে থাকেন। আর বাকিরা সুনাপালির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সেখানে থাকা নুরি মসজিদের কাছে গণ্ডগোল শুরু হয়। যার জেরে পুলিশ আনুমানিক ৩২ জনকে গ্রেফতারও করেছিল। 


লজিক্যাল ফ্যাক্টসের তরফে গুগল ম্যাপের ব্যবহার করে নুরি মসজিদের সামনে থাকা রাস্তাটি খতিয়ে দেখা হয়। আর তারপরই এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এখানেই ওই ভাইরাল ভিডিওটি তোলা হয়েছিল। রাস্তার ছবিতে ইদ মিলাদ আন নবি উপলক্ষে এলাকাটি সাজানোর ছবিও উঠে আসে। সেই লজিক্যাল ফ্যাক্টস এটাও দেখতে পায় যে ওই এলাকায় ইদ মিলাদ আন নবি উপলক্ষে একাধিক পোস্টার এবং ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল।




Comparison of the viral video and a screenshot of the location from Google Maps. (Source: X/Google Maps/Screenshot)


আসল সত্যি


প্রমাণগুলি এটাই নিশ্চিত করে যে ভাইরাল ভিডিওটি আসলে ওড়িশার সম্বলপুরের, পশ্চিমবঙ্গের নয়। পাশাপাশি ওই ফুটেজটিও সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার নয়। তারিখটা একবছর আগেকার। তাই ফলাফল হিসেবে আমরা এই দাবিটি মিথ্যা বলে চিহ্নিত করছি। 


ডিসক্লেমার : এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে Logically Facts এবং শক্তি কালেক্টিভের (Video does not show an attack on a ‘saffron bike rally’ in West Bengall) অংশ হিসেবে প্রতিবেদনটির অনুবাদ করেছে এবিপি লাইভ বাংলা। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: Fact Check: ৩১ আসন CPIM-এর ঝুলিতে? গণশক্তি পত্রিকার নাম করে ভুয়ো সমীক্ষা ভাইরাল