সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে সেটি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের জারি করা বিজ্ঞপ্তির ছবি। ভাইরাল ছবিতে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস হিন্দুদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন নগদ পুরস্কার দেবে। আসলে ছবিটি এই ইসলামী সংস্থার একটি পুরোনো বিজ্ঞপ্তিকে বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে। 


বুম দেখে ভাইরাল বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি ছড়ানোর জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিকৃত করা হয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের মিডিয়া-ইন-চার্জ মোহাম্মদ জনি আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্পষ্ট করে জানান যে সংস্থাটি এ জাতীয় কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি।


ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে জমঈয়তে আহলে হাদীস ব্রাহ্মণ মেয়েদের জন্য ৩০০০০০ টাকা, ভারতীয় বাঙালি মেয়েদের জন্য ২০০০০০ টাকা, নমশূদ্রের জন্য ৫০০০০ টাকা এবং পুরো পরিবারকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য ৫০০০০০ টাকা নগদ পুরস্কার দেবে মুসলমানদের।


ভাইরাল পোস্টটি একজন ব্যবহারকারী ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, “আমাদের সনাতনী বোনেরা নিজেদের রেট দেখে যান। নিচের উল্লেখিত বিজ্ঞপ্তির দরদাম বর্তমানে অনেকটাই বেড়ে গেছে প্রায় তিন গুণ! বর্তমানে একটি ব্রাহ্মণ মেয়ে 15 লক্ষ্য টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে বিধর্মীদের দ্বারা! কলকাতার Airport লাগোয়া 7 Km. ব্যাসার্ধের মধ্যে যতগুলি Hotels রয়েছে OYO online booking এর দ্বারা বিদেশ থেকে আসা রাক্ষস চিন্তনের পুরুষরা, বিক্রি হয়ে যাওয়া সুন্দরী ভারতীয় নারীগুলোকে ভক্ষণ করে। সন্দেশখালি থেকেও আরো জঘন্য অবস্থা এয়ারপোর্ট লাগুয়া ক্ষেত্রগুলি। জাগো হিন্দু জাগো।"




পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে। 


আরও একজন ব্যবহারকারী এই একই পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, "আমাদের সনাতনী বোনেরা নিজেদের রেট দেখে যান।"




পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে। 


তথ্য যাচাই বুম যাচাই করে দেখে যে ভাইরাল ছবিটি ভুয়ো এবং ছবিটি বাংলাদেশী ধর্মীয় সংস্থাটির একটি পুরানো বিজ্ঞপ্তিকে বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখের বিজ্ঞপ্তিটিতে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস সংস্থার নাম দেখা যায়। 


সংস্থাটির নাম দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে তাদের ওয়েবসাইটে ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে আপলোড করা মূল বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া গিয়েছে। 


লক্ষ্য করা গিয়েছে, ২০২২ সালের মূল বিজ্ঞপ্তির রেফারেন্স নম্বরটি ভাইরাল ছবিতে উল্লিখিত রেফারেন্স নম্বরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এর থেকে বোঝা যায় একটি বিদ্যমান বিজ্ঞপ্তিকে বিকৃত করে ভুয়ো ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।




আমরা দেখি মূল বিজ্ঞপ্তিটি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের পরিচালনা পরিষদের চতুর্থ সভায় মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে কোরান ও হাদীস শিক্ষার প্রচারের উপর জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ছিল। এছাড়াও, বিজ্ঞপ্তিটির মাধ্যমে সংস্থাটি দৈনিক অথবা সপ্তাহে অন্তত একদিন করে কোরান ও হাদীস ক্লাস তাদের অধীনে থাকা জেলার সমস্ত মসজিদে চালু করার ঘোষণা করে ।


বুম বাংলাদেশ বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের মিডিয়া-ইন-চার্জ মোহাম্মদ জনি আহমেদের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি ভাইরাল দাবি অস্বীকার করে বলেন যে সংস্থাটি এই ধরনের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।


আহমেদ বুম বাংলাদেশকে বলেন, “জমঈয়তে আহলে হাদীস একটি অলাভজনক, অরাজনৈতিক, দ্বিনী দাওয়াত এবং তবলিগ সংগঠন। জমঈয়তের সুনাম নষ্ট করার জন্য কিছু দুষ্কৃতী ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়ো বিজ্ঞপ্তি তৈরি করেছে। সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করলে স্পষ্ট বোঝা যায় বিজ্ঞপ্তিটি সম্পাদনা করা হয়েছে। জমঈয়তে আহলে হাদীস অফলাইন বা অনলাইন কোথাও এমন কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।”


(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: তৌসিফ আকবর, বুম বাংলাদেশ)




ডিসক্লেমার: এই প্রতিবেদনটি বুম দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে শক্তি কালেক্টিভের অংশ হিসাবে। শিরোনাম ব্যতীত প্রকাশিত তথ্য এবিপি লাইভ বাংলার দ্বারা সম্পাদনা করা হয়নি।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে