কলকাতা: ২১ এপ্রিল, রাজস্থানের বাসওয়ারাতে নির্বাচনী প্রচার সেরেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি আক্রমণ করেছিলেন কংগ্রেসকে। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, জাতীয় কংগ্রেস 'Urban Naxal'-দের দ্বারা দখল হয়ে গিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন যে, কংগ্রেস তাদের ইস্তাহারে জানিয়েছে যে যদি তারা ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা দেশের সব সম্পত্তি নিয়ে সমীক্ষা করবে। মোদির দাবি ছিল, কংগ্রেসের ইস্তাহারে জানানো হয়েছে দেশের সব মহিলাদের হাতে যত সোনা হয়েছে, বিশেষ করে আদিবাসী মহিলাদের হাতে যে সোনা রয়েছে সেগুলির সমীক্ষা করে নতুন করে ভাগ বাঁটোয়ারা করা হবে।
তিনি বলেছেন, 'আমাদের মা ও বোনেদের হাতে যত সোনা রয়েছে সেগুলি মাপা হবে। আমাদের আদিবাসী বোনেদের হাতে যত রুপোর গয়না আছে সেগুলিও মাপা হবে। সরকারি কর্মীদের সম্পত্তিও মাপা হবে। ওরা বলছে সব সম্পত্তি সমান হারে ভাগ করা হবে। এটা আপনারা মানবেন? সরকারের কোনও অধিকার রয়েছে আপনাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার?' মোদি আরও বলেছেন, 'যাদের বেশি সন্তান রয়েছে' তাদের মধ্যে ভাগ করা হবে এই সম্পত্তি। ইঙ্গিত ছিল মুসলিম সমাজের প্রতিই।
মোদির সেই বক্তব্য:
राजस्थान के मेरे परिवारजनों ने अगले चरण में भी कांग्रेस को सबक सिखाने की ठान ली है। बांसवाड़ा में विजय शंखनाद सभा को संबोधित कर रहा हूं। https://t.co/NwcFRCSOQv
মোদির বক্ত্যবের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে যায় ওই দাবি। কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা ও দাবি ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
Fact Check:
কংগ্রেসের ইস্তাহারের কোথাও 'wealth distribution'-এই শব্দবন্ধটি নেই। কোথাও বলা হয়নি ভারতের বাসিন্দাদের সম্পত্তির সমীক্ষা করা হবে। কিংবা আদিবাসী মহিলাদের হাতে থাকা সোনা ও রূপার হিসেব করা হবে বা সরকারি কর্মীদের সম্পত্তির হিসেব করা হবে। তার সঙ্গেই কংগ্রেসের ইস্তাহারে কোথাও এমন বলা হয়নি যে এই সম্পত্তি সংখ্য়ালঘুদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে কোথাও 'মুসলিম' কথাটাও নেই।
কী বলা রয়েছে কংগ্রেসের ইস্তাহারে?
সংখ্যালঘু সমাজ এবং তাঁদের উন্নয়ন সম্পর্কে কংগ্রেসের ইস্তাহারে বেশ কিছু পয়েন্ট বলা রয়েছে।
১. 'সমাজে বেড়ে চলা সম্পদের বৈষম্য এবং আয়ের বৈষম্যকে নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সমাধান করব।'
BOOM-এর তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল IDFC ইন্সটিটিউট-এর ভিজিটিং ফেলো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিশ্লেষক শঙ্কর আইয়ারের সঙ্গে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে সম্পদ বণ্টন নিয়ে কোনও বার্তা রয়েছে কিনা বোঝার জন্য়। শঙ্কর আইরার BOOM-কে জানিয়েছেন, এই ইস্তাহারে নির্দিষ্ট করে সম্পদ বণ্টন নিয়ে কিছু বলা হয়নি। যা বলা হচ্ছে তা অনেক বেশি ভেবে নিয়ে বলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, 'যা রয়েছে - তার বদলে যা হতে পারে তা নিয়ে মন্তব্য করছে লোকজন।' তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ইস্তাহারে বলা হয়েছে নীতি-সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন। কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি।
World Inequality Lab ২০২৪ সালের মার্চে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছিল সেখানে বলা হয়েছিল। ভারতে মোট আয়ের ২২.৬ শতাংশ দেশের সবচেয়ে উপরের স্তরে থাকা ১ শতাংশের দখলে। ওই অংশের কাছেই দেশের মোট সম্পদের ৪০.১ শতাংশে রয়েছে। যার মধ্যে সম্পত্তি, জমানো টাকা এবং বিনিয়োগ রয়েছে। এই রিপোর্টে সামনে এসেছে ভারতে সম্পদের বৈষম্যের ছবিটি। কোনও নীতির মাধ্যমে গরিব ও ধনীর মধ্য়ে এই পার্থক্য কমাতে পারে।
২. 'সারা দেশে সমাজ-অর্থনৈতিক এবং জাতিগত সমীক্ষা করাবে কংগ্রেস। জাতি, উপজাতি এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতেই এই সমীক্ষা হবে। সেই তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করা হবে।'
ভারতে শেষ আদমসুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। এরপরের আদমসুমারি ছিল ২০২১ সালে। কোভিডের জন্য় তা থমকে যায়। এখনও তা হয়নি বলে আদমসুমারির সাইকেলে ধাক্কা খেয়েছে।
৩. 'কংগ্রেস একটি অথরিটি তৈরি করবে যারা গরিবদের মধ্যে সরকারি জমি ও অতিরিক্ত জমি বণ্টনের বিষয়টি দেখবে- Land Ceiling Act-এর অধীনে।'
এই বক্তব্যের মাধ্যমে কংগ্রেস ইস্তাহারে বোঝানো হয়নি যে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্য বণ্টন করা হবে।
৪. 'সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন দেশের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, যাতে তাঁদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনার বিষয়টি অনুভব করা যায়। আমরা নিশ্চিত করব যাবে ব্য়াঙ্ক কোনওরকম বৈষম্য ছাড়াই সংখ্যালঘুদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান করে।'
এই বক্তব্য়ের মাধ্যমেও কংগ্রেস শুধুমাত্র এটাই বুঝিয়েছে যাতে সংখ্যালঘুরা আর্থিক সম্পদের ব্যবহার করতে পারে।
মোদির দাবি নিয়ে কী বলেছে কংগ্রেস?
All India Professionalss Congress-এর চেয়ারপার্সন প্রবীণ চক্রবর্তী- যিনি কংগ্রেস ইস্তাহার তৈরির দলেও ছিলেন- তিনি সম্পদ পুনর্বণ্টন নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, '৪৮ পাতার ইস্তাহারে কোথাও বলা নেই যে আমরা কারও সম্পদ নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেব। আমরা কারও ঘরে ঢুকে যেতে চাই না।'
এর আগে Times of India-হায়দরাবাদের Tukkuguda-তে রাহুল গাঁধীর একটি ভাষণ নিয়ে খবর করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল রাহুল গাঁধী বলেছেন, 'ভারতের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক কাজ নেওয়া হবে'। TOI-এর রিপোর্ট অনুযায়ী Economic Times এবং Moneycontrol- বিষয়টি নিয়ে ভুল খবর করে যেখানে লেখা হয় - 'কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী ভারতীয়দের সম্পদ পুনর্বণ্টন করার জন্য শপথ নিয়েছেন'
বরং রাহুল গাঁধী তাঁর বক্তব্যে 31.28 মিনিটে বলেছেন যে, 'আমরা যখনই ক্ষমতায় আসব, আমরা সারা দেশে জাতিগত সমীক্ষা চালু করব। পিছিয়ে পড়া জাতি, দলিত, আদিবাসী, গরিব সাধারণ জাতি এবং সংখ্যালঘুরা জানতে পারবেন এই দেশে তাঁরা কত শতাংশ। এরপর আমরা অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিত সমীক্ষা করব। আমরা খুঁজে বের করব ভারতের সম্পদ কাদের হাতে রয়েছে। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের পরে আমরা বৈপ্লবিক কাজ শুরু করব। আমরা আপনাকে আপনার অধিকার দেব। মিডিয়া হোক, আমলাতন্ত্র হোক বা কোনও প্রতিষ্ঠান হোক- আমরা আপনাদের জায়গা করব এবং আপনাদের অংশ দেব।'
এটা রাহুল গাঁধীর এই বক্তব্যের ভিডিও:
প্রবীণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, 'এটা বলাই হাস্যকর যে আজকের ভারতে, যাকে আমরা একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র বলে মেনে থাকি, সেখানে কোনও সরকার বা রাষ্ট্র এসে কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারে।...রাহুল গাঁধী যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা একটি দার্শনিক ধারণা। তিনি একটি প্রশ্ন তুলেছেন যে: আমাদের কি এমন একটি সমাজ চাওয়া উচিত নয় যা কারও পরিচয়ের ভিত্তিতে সুযোগ-সুবিধা দেবে?'
মুসলিমদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে মোদির দাবি কতটা ঠিক?
১৯৯৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে Boom. সেখানে দেখা গিয়েছে দেশের অন্য সম্প্রদায়ের মতোই মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও জন্মহার ক্রমশই পড়তির দিকে।
reproductive year-এ এক নারী গড়ে কত সন্তান জন্ম দিচ্ছেন সেটাই Fertility rate. ২০১৯-২১ সালের তথ্য অনুযায়ী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্য়ে Fertility rate ২.৩৬- যা রিপ্লেসমেন্ট লেভেলের একেবারে কাছাকাছি।
যা রিপ্লেসমেন্ট লেভেল Fertility rate- হল গড়ে প্রতি নারী পিছু ২.১ সন্তান- এই হারেই জনসংখ্যা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বদলে যায়। যখনই Fertility rate রিপ্লেসমেন্ট লেভেলে বা তার একেবারে কাছাকাছি থাকে তখন এটাই বোঝায় যে দেশের জনসংখ্য়া দ্রুতহারে বৃদ্ধির বদলে স্থিতাবস্থায় আসছে। যদিও অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তুলনায় মুসলিমদের Fertility rate বেশি হলেও সম্প্রতি সেই হারে পড়তি হয়ে রিপ্লেসমেন্ট লেভেলের কাছাকাছি আসছে।
Disclaimer: শক্তি কালেকটিভ (Shakti Collective)-এর অংশ হিসেবে মূল ফ্যাক্টচেক আর্টিকলটি প্রকাশ করেছিল BOOM. আর্টিকলটি এবিপি লাইভ বাংলা- দ্বারা অনুবাদিত এবং অনুলিখিত
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।