পীযূষ পান্ডে, মুম্বই: ফিফথ জেনারেশন স্পেকট্রাম বা ফাইভ-জি (5G) স্পেকট্রাম। টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতির আরও একধাপ। ফাইভ-জি স্পেকট্রাম বিক্রির কাজ ২০১৭ সালে শুরু করেছিল ভারত সরকার। অবশেষে সেই 5G স্পেকট্রাম বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। দাম মিলেছে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল ৪.৩ লক্ষ কোটি টাকা। সেই লক্ষ্য়ের চেয়ে অনেকটা কম হলেও ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা আগের ওঠা দামের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
নতুন এই স্পেকট্রাম বিক্রি ২০১৭ সালের তুলনায় অনেকদিক থেকেই সফল। ২০১৭ সালে ৩০০০ MHz ব্যান্ডে 5G এয়ারওয়েভ বিক্রির প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। তার সঙ্গেই আগে বিক্রি না হওয়া ৮০০ MHz, ৯০০ MHz, ১৮০০ MHz, ২১০০ MHz, ২৩০০ MHz এবং ২৫০০ মেগাহার্টজ (MHz) ব্যান্ডগুলিও বিক্রির প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। TRAI-এর তরফে বারবার আলোচনার পরেও পরিস্থিতির চাপে টেলি পরিষেবা দেওয়া সংস্থাগুলি স্পেকট্রাম বিক্রি পিছিয়ে দিতে বলায়, সেই বার ওই কাজ আর হয়নি।
এরপর ২০১৮ সালে, টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা TRAI, ৭০০ MHz, ৮০০ MHz, ৯০০ MHz, ১৮০০ MHz এবং ৩৩০০-৩৬০০ MHz ব্যান্ডগুলিকে 5G ব্যান্ড হিসাবে নিলাম করার সুপারিশ করে। কিন্তু সেবার টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলির তরফে দাম নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। তাদের দাবি ছিল, 5G ব্যান্ডের রিজার্ভ প্রাইস (reserve price), বিশেষ করে ৭০০ MHz-ব্যান্ডের দাম অনেকটাই বেশি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, ডিজিটাল কমিউনিকেশন কমিশন বা ডিসিসি (Digital Communications Commission) ২০২০ সালে ৮,৩০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের নিলামের জন্য রিজার্ভ প্রাইস ৫.২ লক্ষ কোটি টাকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও সেই সময়েই অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ বা এজিআর (Adjusted Gross Revenue) মামলায় টেলিকম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
টেলিকম সংস্থাগুলির স্বস্তি:
ব্যবসায়িক ভাবে লোকসানের মুখে পড়া টেলিকম সংস্থাগুলিকে স্বস্তি দিয়েছিল সরকার। অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ বা এজিআর-এর বকেয়া ক্রমেই জমছিল লোকসানের মুখে পড়া টেলিকম সংস্থাগুলির উপর। কিন্তু সরকার জানত, ঋণের ভারে জর্জরিত ভোডাফোন-আইডিয়াকে বন্ধ করে দিলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দিকে ভুল বার্তা যাবে। তাছাড়া, ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে ভারতী এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়া 5G স্পেকট্রামের নিলামে যোগ দিতে পারবে না।
'বড় হচ্ছে এই শিল্পক্ষেত্র'
টেলিকম সংস্থাগুলিকে সুরাহা দেওয়ার পরে সরকারের তরফে 5G স্পেকট্রাম নিলাম (5G Spectrum) শুরু করা হয় গত বছরের মার্চে। সেবার মাত্র পুরো স্পেকট্রামের মাত্র ৩৭ শতাংশ বিক্রি করা সম্ভব হয়। দাম পাওয়া যায় ৭৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এই সময়েও ৭০০ MHz- এবং ২৫০০ MHz ব্যান্ডের জন্য কোনও দরপত্র পায়নি সরকার। যথেষ্ট অর্থ হাতে থাকা সত্ত্বেও রিলায়েন্স জিও-র মতো টেলিকম সংস্থাও মনে করেছিল এই দুটি ব্যান্ডের রিজার্ভ প্রাইস অত্যন্ত বেশি।
এবারের স্পেকট্রাম বিক্রির একাধিক সাফল্য রয়েছে। একে তো নিলামে আগেরবারের চেয়ে দ্বিগুণ দাম পাওয়া গিয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। এছাড়া, সরকার প্রথমবারের মতো সবচেয়ে লোভনীয় ৭০০ MHz স্পেকট্রাম বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে।
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ সংস্থা UBS মনে করে সম্প্রতি যে স্পেকট্রাম নিলাম হয়েছে, তাতে মোট ৭২ GHz এয়ারওয়েভের মধ্যে যে ৭১ শতাংশ অর্থাৎ ৫১ GHz যে দামে বিক্রি হয়েছে তা যা আশা করা হয়েছিল তার থেকে যথেষ্ট আগ্রাসী। অত্যন্ত দামি ৭০০ MHz ব্যান্ডের ১০ MHz স্পেকট্রাম কিনেছে টেলিকম সংস্থা জিও যা দেখে বিস্মিত তারা, একটি নোটে এমনটাই বলেছে UBS.
PHD Chamber-এর সভাপতি প্রদীপ মুলতানি (Pradeep Multani) এবিপি লাইভ-কে বলেছেন, '5G স্পেকট্রামের সফল নিলাম ভারতের টেলিকম সেক্টরের উন্নতির চিহ্ন। নিলামের মূল্য এটাই বোঝায় যে এই শিল্পক্ষেত্র আরও বৃদ্ধির দিকেই এগোচ্ছে।'