India at 2047: বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে আতঙ্ক। ডিজিটাল সম্পদের বিষয়ে ভয় বাড়ছে বেশিরভাগ দেশে। সেখানে অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম ভারত। আশঙ্কার বদলে দেশে নন-ফাঞ্জিবল টোকেন (NFT)-র বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে। মূলত, NFT-কে বিভিন্ন স্টার্ট-আপ কোম্পানি নিজেদের প্লাটফর্মে প্রোডাক্ট হিসাবে নিয়ে আশায় এতে আর্থিক বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা দেখছে দেশবাসী। বর্তমানে ভারতে NFT-র মূল বাজার গেমিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বিভিন্ন সংগ্রহের মতো খাতে জুড়ে রয়েছে।
ভারতের এনএফটি নিয়ে উন্মাদনা
বিশ্ববাজার থেকে এনএফটি নিয়ে অনেকটাই আলাদা ভারতের চিত্র। এখানে দেশের যুব প্রজন্ম ইতিমধ্যেই ক্রিপ্টোকারেন্সি ও NFT সম্পর্কে জেনে গিয়েছে। ভারত এখন গেমিং ও বিনোদনের জন্য একটি বড় বাজার। যেখানে নিয়ন্ত্রকের কঠোরতা সত্ত্বেও যারা এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে জনগণকে প্রকৃত সুবিধা দিচ্ছে, তাদের স্বাধীনতা দিচ্ছে সরকার। ভারতে এখন ফিল্ম ও গেমিং শিল্প দ্রুত এনএফটিগুলিকে গ্রহণ করছে।
ভারত সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও শিল্পী, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মালিক ও নিলামকারীরা আশাবাদী NFTs ভারতীয় শিল্পকলার জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। বিশেষ করে COVID-19 এর নেতিবাচক প্রভাবের পর নতুন উন্মাদনা যোগ করবে এই প্লাটফর্ম।। দেশে ক্রিপ্টো-আর্ট প্ল্যাটফর্ম, নিউজ মেকিং অকশন সেল ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রভাবশালী শিল্পীদের উপস্থিতি এনএফটির মাধ্যমে ভারতীয় শিল্পকলার গাড়িকে দ্রুত ঠেলতে শুরু করেছে।
কেন ভারতীয় শিল্পগুলি NFT-র দিকে ঝুঁকছে ?
দেশের স্টার্টআপগুলির মতে, ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রিতেও একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে শুরু করেছে NFTs। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বিলিয়ন-ডলার গেমিং সেক্টর CryptoPunk, Bored Ape Yacht Club ও Azuki আপনাকে প্যাসিভ ইনকাম দিতে পারে। এগুলি হল সেই কয়েকটি বড় নাম, যা ক্রিপ্টো কমিউনিটির মধ্যে NFT-র প্রচারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। গত দু-বছরে বিশেষ করে ২০২১ সালে ভারত ৮৬টিরও বেশি NFT-ভিত্তিক স্টার্টআপ শুরু হয়েছে। মজার বিষয় হল, এই ধরনের ৭১টি স্টার্টআপ প্রথম চালু হয়েছে ২০২১ সালে।
২০২১ সালে ভারতে এনএফটি বাজারজাত করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। যা বিশেষত ডিজিটাল সম্পদ ও এনএফটিগুলির প্রতি ভারতীয় জনগণের চিন্তাধারায় একটি বিশাল পরিবর্তন এনেছে। ২০২১ সালে তাদের প্রিয় সেলিব্রিটিদের নিজস্ব ডিজিটাল লাইন তৈরি করতে দেখে ভারতীয়রা। পরবর্তীকালে তারকাদের অনুসরণ করে দ্রুত এইদিকে বিনিয়োগ করতে শুরু করে।
এই ডিজাটাল লাইনের বিষয়টি মূলত এনএফটি বাজারের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। যেখানে আর্থিক সম্ভাবনা দেখে দেশের বড় ব্যক্তিত্বরা ডিজিটাল টোকেন লঞ্চের রাস্তায় হাঁটেন। এরমধ্যে নাম রয়েছে অমিতাভ বচ্চন, সলমান খান, কমল হাসান, যুবরাজ সিংহ, রোহিত শর্মা ও মনীশ মলহোত্রা-সহ অনেক তারকার। যাঁরা ইতিমধ্যেই ২০২১ সালে তাদের ডিজিটাল টোকেন লঞ্চ বা লঞ্চের ঘোষণা করেছেন।
এটা প্রত্যাশিত যে ২০২২ সাল নন-ফাঞ্জিবল টোকেন (NFTs) এর বছর হতে চলেছে। ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের NFTs-র বাজার এখন শিল্পকর্মের মোট ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজার মূল্যের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পের ব্র্যান্ড ও প্রভাবশালীরা ভারতে NFTs ও Metaverse নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। বলিউড ও স্পোর্টস সেলিব্রিটিরা অনুরাগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও তাদের পণ্যগুলি অফার করার জন্য নিজস্ব NFTবাজার শুরু করেছেন।
এনএফটি ও ভারতীয় শিল্পকর্ম
বর্তমানে সৃষ্টিশীল বাজারেও বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে NFTs। অ-প্রথাগত শিল্পের বিক্রি থেকে বাজার সবেতেই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার ক্ষমতা ধরে এই টোকেন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রাথমিকভাবে এনএফটি দেশের শিল্পকর্মের বাজারে প্রত্যাশিত চাহিদাপূরণ করতে পারেনি। তবে ডিজিটাল সম্পদের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির যথেষ্ট সম্ভাবনা রাখে।
NFT বাজারে স্থিরতা না থাকলেও এই উদ্যোগে প্রচুর সুযোগের সম্ভাবনা রয়েছে। অস্থিরতার কারণে এখানে বিনিয়োগকারীরা 'কমে কেনা-বেশিতে বিক্রি' কৌশল নিয়ে বিশাল লাভ করতে পারেন। একটি অশান্ত বাজারে এতে আপনি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রোজেক্টের পাশাপাশি দুর্বলটিকেও সনাক্ত করতে পারবেন।
ব্যবসার জন্য NFTs
এতে মূলত, আরও কার্যকারিতা চায় মানুষ। প্রতি মুহূর্তে ক্রেতারা সব NFT-র আপ রাইড সম্পর্কে জানতে চান। একবার এই জগতে বিনিয়োগ করলেই ক্রেতারা এই বাজার ও তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রাসঙ্গিক প্ল্যাটফর্ম, এক্সক্লুসিভিটি ও প্রিমিয়াম অফারের মতো সুবিধা আশা করেন। তাঁরা বুঝতে পারেন না, সেক্টরটি এখনও বিকাশের পর্যায়ে রয়েছে। এটি এখনও সম্পূর্ণরূপে উন্নত অর্থনৈতিক ডোমেন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেনি। এই প্রশ্নগুলির উত্তর না পেয়েই বাজারে অংশগ্রহণের থেকে সরে যান অনেকেই। যা পুরো NFT শিল্পের ক্ষতি করে।
এনএফটি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন
বর্তমানে এই বাজার সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে সবাইকে কেবল এই ডিজিটাল অ্যাসেট সম্পর্কে বললেই হবে না। এর প্রক্রিয়াকরণ, কার্যকারিতা, কমিউনিটি ও কীভাবে সেই বাজার কাজ করে সেই সম্পর্কেও শিক্ষিত করা দরকার। ডিজিটালের এই জগতে কীভাবে তার সব দিক কাজ করে সে সম্পর্কে তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বোঝার প্রয়োজন। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন পৃথিবী, যেখানে সফল না হলেও এর নিয়ম ও প্রক্রিয়াগুলির সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণভাবে NFTs, ক্রিপ্টো ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কিছুই এর মধ্যে চলে আসে। আমরা আশা করি, এই নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করার জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাহলে এর সুযোগ-সুবিধাগুলি হাতছাড়া হবে না আমাদের।
(লেখক তেজোস ইন্ডিয়ার অপারেশনের প্রধান - এটি একটি অলাভজনক সংস্থা যা ভারতে গ্রাহক ও বিভিন্ন সংস্থাকে তেজোস ব্লকচেইন ব্যবহার করতে সক্ষম করে৷)