জ্বর এসেছে, সঙ্গে গা-হাত-পায়ে প্রবল যন্ত্রণা। আর আপনি পাড়ার দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে নিলেন। এর পর জ্বর নেমে যেতেই যখন আপনি ভাবলেন এ যাত্রায় বিপদ কেটে গেছে, সমস্যা শুরু হল ঠিক তখনই। পরীক্ষা করে জানা গেল আপনি ডেঙ্গি আক্রান্ত। আর ততক্ষণে আপনার শারীরিক জটিলতাও শুরু হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন এই অবহেলার জেরেই প্রতিবছর ডেঙ্গিতে প্রাণ হারান বহু মানুষ
জ্বর হলে কী করবেন প্রাথমিক পর্যায়ে? কীভাবেই বা বুঝবেন সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত আপনি? এ নিয়ে এবিপি লাইভকে বিস্তারিত জানালেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস এবং ভাইরোলজিস্ট ডাঃ যোগীরাজ রায়।
ডেঙ্গি একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। এ ক্ষেত্রে এডিস ইজিপ্টাই (Aedes Aegypti) মশা মানুষের শরীরে ভাইরাসের প্রবেশ ঘটিয়ে প্লেটলেট নষ্ট করে দেয়। যদিও কমিউনিটি মেডিসিনের ভাষায় ডেঙ্গি প্রিভেন্টিভ রোগগুলির তালিকাতেই পড়ে। অর্থাৎ একটু সতর্ক হলেই ভেক্টরের বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানো যেতে পারে।
কীভাবে আটকাবেন জীবানুর বংশবৃদ্ধি? সাধারণত জমা জলেই জন্ম নেয় ডেঙ্গির লার্ভা। চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, এক ছিপি জলেও জন্ম নিতে পারে ডেঙ্গির মশা। বিশেষত বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বাড়ে। সকালেই কামড়ায় ডেঙ্গির মশা। তবে রাতেও যে একেবারে চিন্তামুক্ত এমনটা বলা যায় না। জোরালো আলোর প্রভাবে রাতেও এডিস মশার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন আপনি।
সাধারণ জ্বর এবং ডেঙ্গির জ্বরের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এলাইজা প্রক্রিয়ায় রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি যে বিষয়টি চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেন, তা হল হাঁচি এবং নাক দিয়ে জল পড়ছে কিনা। এই উপসর্গ দুটি থাকলে ডেঙ্গির আশঙ্কা কম।
জ্বরের প্রথম দিনেই পরীক্ষা: চিকিৎসকরা বলছেন, কমবেশি ১০ দিন ডেঙ্গি ভোগাতে পারে (সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)। সমস্যা এবং তার সমাধান এই সময়কালেই সম্ভব। জ্বর হলে কোনওদিক না ভেবে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যান এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে প্রথম ৩ দিন খুব জরুরি। এই সময়ে NS1 রিপোর্ট পজিটিভ আসে এবং মনিটরিং, চিকিৎসার সুবিধা হয়। চার-পাঁচ দিন পর চিকিৎসকের কছে গেলে পরিস্থিতি জটিল হয় এবং ততক্ষণে রোগী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ডেঙ্গির ধরন ও উপসর্গ: ডেঙ্গি তিন ধরনের হয়
- ডেঙ্গি ক্লাসিক্যাল ফিভার (১-৩তম দিন): এ ক্ষেত্রে জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা থাকে। চিকিৎসায় দু-তিন দিনে রোগী সুস্থও হয়ে যান।
- ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার (৫-৭তম দিন): এ ক্ষেত্রে রক্তপাতজনিত সমস্যা দেখা যায়, যেমন দাঁত, নাক, মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অসময়ে পিরিয়ডও দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও ব়্যাশ হতে বেরোতে পারে এই পর্বে।
- ডেঙ্গি শক ফিভার (৫-৭তম দিন): এ ক্ষেত্রে রোগীকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না। তবে এই গ্রুপের রোগীর প্রেসার এবং পালস প্রায় থাকেই না। যার ফলে হঠাৎ করেও মৃত্যু হতে পারে।
শেষ দুটি ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। শেষ দুটি গ্রুপে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই দুটি ক্ষেত্রে জ্বর থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জ্বর নেমে গিয়ে রোগী যখন সুস্থ হতে শুরু করে তখনই হিমোকনসেন্ট্রেশন হয়ে যেতে পারে। একে বলে রিকভারি ফেজ কমপ্লিকেশন। এই সময়ে ভাইরাস ব্লাড ভেসেলে গিয়ে প্লাজমা লিকেজ হয়। এটা সাধারণত ৫-৭ দিনের পর হতে পারে। তাই বেশিরভাগই এড়িয়ে যায় এবং রোগী হঠাৎ মারা যায়।
করনীয়? একদম জ্বরের শুরুতেই পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। কোথাও জল জমতে দেবেন না। অ্য়ালার্জির সমস্যা না থাকলে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন। যতটা সম্ভব ঢাকা জামাকাপড় পড়ুন। জলের মধ্যে রাখতে হয় এ ধরনের ইনডোর প্ল্যান্টগুলো সম্ভব হলে ঘর থেকে সরিয়ে ফেলুন বর্ষার সময়ে। মশারি ব্যবহার জরুরি। পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গি ধরা পড়লে প্রথম থেকেই প্রচুর জল, ফলের রস জাতীয় ফ্লুইড গ্রহণ করুন। এর চিকিৎসা বলতে প্যারাসিটামল এবং ফ্লুইড দেওয়া। এর বেশি করার মতো বিশেষ কিছুই নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।