নয়াদিল্লি: সাধারণ বা চলতি খাদ্যশস্য অনেকসময়েই রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। সেটাই যদি একটি বিশেষ জিনিস দিয়ে প্রতিস্থাপিত কর যায়, তাহলে মধুমেহ থেকে বাঁচতে খুব ভালভাবে কার্যকরী। বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাই বলছে সেই কথা। সেই খাদ্যটি হল কুইনোয়া (Quinoa).    


কাদের গবেষণা:
নিয়মিত কুইনোয়া খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। অগাস্ট পাই আই সানিয়ার বায়োমেডিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IDIBAPS)এর গবেষক এবং কাতালোনিয়ার ওপেন ইউনিভার্সিটি (Open University Of Catalonia)-এর স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডায়ানা দাজ রিজোলো (Diana Daz Rizzolo)-এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি নিউট্রিয়েন্টস (Nutrients) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।


কুইনোয়ার গুণ:
কুইনোয়া এমন একটি খাদ্য যার পুষ্টির মান খুব বেশি। এটি ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের পাশাপাশি ভিটামিন বি (Vitamin B), ই (Vitamin E) এবং ভিটামিন সি (Vitamin C) সমৃদ্ধ। এতে সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড-সহ উচ্চমাত্রায় প্রোটিনের উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কুইনোয়ায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারও (Fiber)। মানা হতো যে কুইনোয়া-ভিত্তিক খাদ্য কিছু কার্ডিওভাসকুলার রোগ (Cardiovascular Disease) এবং অন্যান্য কিছু রোগ, যেমন টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes)-এর ক্ষেত্রে উপকার করে। যদিও ওই পুষ্টিগুণের দাবিগুলি কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্যনির্ভর ছিল না।


গবেষকদের দাবি:
অধ্যাপক ও গবেষক দিয়াজ রিজোলো বলেছেন, 'আমরা একটি পর্যালোচনা চালিয়েছিলাম যে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে কুইনোয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে এবং আমরা দেখতে পেয়েছি যে সেই অর্থে কোনও পূর্ববর্তী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, শুধুমাত্র কিছু অনুমান রয়েছে। আগে হওয়া সব গবেষণা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পোষক উপাদানগুলির উপর ফোকাস করেছিন।' বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইঁদুরের উপর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে পলিফেনল, কুইনোয়াতে উপস্থিত এক ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে। যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকা রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। এই রোগে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করে না বা অগ্ন্যাশয় দ্বারা নিঃসৃত ইনসুলিন সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।


কীসের খোঁজে গবেষণা:
গবেষকরা এটা দেখতে চেয়েছিলেন যে তাঁরা যদি কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবারগুলিকে সরিয়ে দেন, যেগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে এবং তাদের পরিবর্তে কুইনোয়া এবং তা থেকে তৈরি খাবার ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ উচ্চ ঝুঁকিযুক্ত (High Risk) ব্যক্তিদের টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা তা খুঁজে দেখা।


কীভাবে গবেষণা: 
গবেষণার জন্য, গবেষকরা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রিডায়াবেটিক ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। এক মাস ধরে, গবেষকরা স্বেচ্ছাসেবকদের নিরীক্ষণ করেছেন। তাঁরা তাঁদের প্রত্যেককে একটি গ্লুকোজ মনিটরের মাধ্যমে টানা শর্করা মাত্রা ওঠানামার পরিমাপ করে গিয়েছেন। দিনের প্রতি মিনিটে রক্তে শর্করার পরিমাপ করা হয়েছে। তাঁরা কী কী খেয়েছেন তার রেকর্ড রাখা হয়েছে। প্রতিটি খাবারের পরে ওই ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা কীভাবে ওঠানামা করে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।


মাসের শেষে, জটিল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডাল, পাস্তা, বিভিন্ন খাদ্যশস্যগুলিকে কুইনোয়া এবং তা থেকে তৈরি খাবারের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করে। এটি করার জন্য, তারা একটি সংস্থার সাহায্য নেয় যারা কুইনোয়া থেকে ময়দা ব্যবহার করে নতুন পণ্য তৈরি করেছি। এই ঢায়েটের ফলে স্বেচ্ছাসেবকদের রক্তে শর্করার মাত্রা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা দেখা হয়েছে।


কী ফলাফল:
ওই ব্যক্তিরা যখন কুইনোয়া বা তা থেকে তৈরি খাবার খেয়েছেন, তখন তাঁদের রক্তে শর্করার ওঠানামা অন্যসময়ের তুলনায় কম ছিল, বলেছেন ওই গবেষণা দলের সদস্যরা। খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অগ্রগতির একটি নির্ধারক কারণ, সেই কারণেই এই তথ্য এতটা গুরত্বপূর্ণ বলে জানান তাঁরা।


গবেষকরা আরও দেখেছেন যে কুইনো-ভিত্তিক ডায়েট রক্তের লিপিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, তাই তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এটি উচ্চ কোলেস্টেরল এবং কার্ডিয়াক ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে।


আরও পড়ুন:  ডায়াবেটিস দূরে রাখতে ভরসা দারচিনি, সঙ্গী গরম জল