কলকাতা : ভয়াবহ আকার নিয়েছে অ্যাডিনোভাইরাস। এ  রাজ্যে ভয়ঙ্কর হারে বাড়ছে ভাইরাস সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। কামড় বসাচ্ছে শিশু শরীরে (adenovirus symptoms in kids)। ক্ষতবিক্ষত করছে ফুসফুস (lungs )। মৃত্যু (adenovirus death )বাড়ছে প্রতিদিন। কীভাবে বাঁচাবেন একরত্তিটিকে ? কীভাবে রোগনির্ণয়? ওষুধ আছে (adenovirus treatment)? মাস্কে হবে রক্ষা? বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো ঠিক হচ্ছে কি ? সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন ডা. অপূর্ব ঘোষ (Dr. Apurba Ghosh, Paediatrician). 

অ্যাডিনোভাইরাসে ফুসফুসের কতটা ক্ষতি ? 
 



  • ডা. অপূর্ব ঘোষের মতে, করোনা মূলত আঘাত হেনেছে প্রৌঢ় ও বৃদ্ধদের উপর। করোনার প্রথম ঢেউতে মূলত মারা গিয়েছেন বয়স্করা। কিন্তু অ্যাডিনোভাইরাস যাঁদের ফুসফুসকে সংক্রমিত করছে, তাঁদের তো যন্ত্রটা তৈরিরই হয়নি এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের সঙ্গে লড়ার মতো ! এ প্রসঙ্গে ডা. ঘোষ উপমা হিসেবে বললেন, একটা বাড়ির ছাদ ঢালাই হওয়ার আগেই যদি বৃষ্টি শুরু হয়, তাহলে তা আটকানো যায় না। কিন্তু ছাদ ঢালাই হয়ে গেলে বৃষ্টির দাপট আটকে যায়।ঠিক সেটাই ঘটছে অ্যাডিনো ভাইরাসের ক্ষেত্রে। শিশুদের ফুসফুসে আঘাত হানাটা তাই সহজ হচ্ছে এই ভাইরাসের কাছে । 

  • সমস্যার কারণ আছে আরও একটা। আমাদের রাজ্যে বহু হাসপাতালেই এখনও শিশুদের আইসিইউ নেই। থাকলেও ব্যবস্থা উন্নত নয়। মত ডা. অপূর্ব ঘোষের। শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট বেড ও ভেন্টিলেশনের সংখ্যাও যথেষ্ট কম। তাই যখন বড় সংখ্যক শিশু এই অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে, তখন সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। 

  • এছাড়া শিশুরা বলতে পারে না, কখন কষ্ট বেশি হচ্ছে। একরত্তি বাচ্চাদের কষ্ট প্রকাশের একমাত্র উপায় হল কান্না। আর মা-বাবা বুঝতেও দেরি করে ফেলেন, বাচ্চা কেন কাঁদছে। তার খিদে-ঘুম পেয়েছে বলে  নাকি অন্য কোনও কষ্ট হচ্ছে। তাই চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় এই মহামারী আরও ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে।  

  • কেন এভাবে আক্রান্ত শিশুরা ?
    অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণ নতুন কিছু নয়। তবে এবার একটু বেশিই ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে এই ভাইরাস। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভাইরাসের মিউটেশন হয়ে নতুন রূপে হানা দিয়েছে এবার। আর এবারের হানা তাই প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। বিশেষত ভাইরাসের টাইপ সেভেন স্ট্রেনটি যথেষ্ট ক্ষতিকর । 

  • বাচ্চাদের এই পরিস্থিতিতে স্কুলে পাঠানো কতটা সমীচীন?
     - ডা. অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, এই ভাইরাসের আক্রমণ মূলত হচ্ছে ছোট্ট শিশুদের উপর , যাদের বয়স কয়েক মাস থেকে বছর দুই। এর থেকে বড় বাচ্চারা আক্রান্ত হলেও, আশঙ্কা বেশি একরত্তিদের নিয়ে। তাই যে বাচ্চারা প্লে-স্কুলে যায় বা ডি-কেয়ার সেন্টারে থাকে, তাদের এই সময় বাড়িতে রাখাটাই শ্রেয়। 
    - তাছাড়া এই সময়ে বাচ্চাদের নিয়ে মেলা, পুষ্প প্রদর্শণী বা কোনও জমায়েতে না যাওয়াই শ্রেয়।
    - যারা বয়সে সামান্য বড়, তারা মাস্ক পরে স্কুলে যেতে পারে। যদিও মাস্ক দ্বারা ভাইরাসের প্রকোপ আটকানো যাবে কি না, তা এখনও প্রমাণিত নয় ! তবু করোনা কালে যাদের পড়াশোনায় ইতিমধ্যেই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তাদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করা যুক্তিযুক্ত হবে না।