কলকাতা : 'আমার বড্ড অ্যালার্জির ধাত', ' আমার তো ঠান্ডা পড়লেই অ্যালার্জি ', ' আমার তো শখ করে ফুলে মালা লাগালেই অ্যালার্জি' .... উঠতে বসতে নানারকম অ্যালার্জির কথা আমরা শুনে থাকি। কিন্তু এই অ্যালার্জি বিষয়টা আদতে কী ? কোনও অসুখ? ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ? অনেকের মনেই প্রশ্ন। অনেকেই জানেন না যে, অ্যালার্জি আসলে শুধু বিভিন্ন অসুখের মেকানিজম। আমাদের শরীরের একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। শরীরে যখন শত্রুপক্ষ হাজির হয়, তখনই সতর্ক হয়ে ওঠে সেই সিকিউরিটি সিস্টেম। এবার কোনও কারণে যদি শরীরের এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাহলেই সেই রিঅ্যাকশনটাকে বলে অ্যালার্জি। এই নিয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনায় ডা. দ্বৈপায়ন ঘোষ (Consultant pulmonologist and Allergist )। 


অ্যালার্জির উপসর্গ
অ্যালার্জি বিষয়টি খুবই সাধারণ বা কমন। তবে এর কারণ কিন্তু নানা রকম হতে পারে। কারও কোনও খাবারে অ্যালার্জি, কারও অ্যালার্জি ধুলো-বালিতে, কারও ফুলের রেণুতে, কারও ঠাণ্ডায়। অ্যালার্জির লক্ষণ কারও ক্ষেত্রে গায়ে ব়্যাশ বেরনো, হাত-পা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ধরা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে জল পড়া, নাক দিয়ে জল পড়া ও হাঁচি , ইত্যাদি নানারকম হতে পারে। এগুলোকেই অ্যানাফিল্যাক্সিস বলা হয়। এর দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। 


অ্যালার্জি  নাকি অন্য কোনও অসুখ? 
অ্যালার্জি নাকি অন্য কোনও অসুখ, সেটা বোঝারও উপায় আছে। প্রথমেই যখন উপরে আলোচিত কোনও একটি উপসর্গ দেখা যাবে, তখনই তলিয়ে ভাবতে হবে, ঠিক কখন কী খাওয়ার পর বা কী ছোঁয়ার পর বা কীসের সংস্পর্শে আসার পরই এমনটা হল।  কোনও খাবার থেকে, বা ফুলের রেণু থেকে, বা পারফিউম স্প্রে বা রান্নার ধোঁয়া কোনও কিছু সংস্পর্শে আসার পর থেকেই কি এমন উপসর্গ শুরু হল? যদি এর একটার সঙ্গেও যোগসূত্র পান, তাহলে বুঝতে হবে, এটা অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এবার আক্রান্তর সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে, সংস্পর্শের কতক্ষণ পর থেকে উপসর্গ দেখা গেল, আগেও কি এমনটা হয়েছে, পরিবারে কারও কি এমন সমস্যা আছে ?এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করে, ঠিক কী থেকে তাঁর এই অ্যালার্জি আর সেটা তাঁর দৈনন্দিন জীবন থেকে কতটা দূরে রাখা যায়।


অ্যালার্জির চিকিৎসা কী?
allergen and trigger factor গুলি খুঁজে বের করাটাই হল চিকিৎসার প্রথম ধাপ। এরপর Skin prick testing (SPT), Allergy Phadiatop Test ( adult or infant ), Allergy Flexi Panel test, specific IgE test - ইত্যাদি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অ্যালার্জি প্রতিহত করার কিছু ওষুধ আছে, তাকে Antihistamines বলে। কারও  অ্যালার্জি থেকে অ্যাজ়মার প্রবণতা  থাকলে,  কিছু ওষুধ ইনহেলার বা নেবুলাইজারের মাধ্যমেও দেওয়া হতে পারে। অনেকে এখনও ইনহেলার নিতে ভয় পান, যদি এটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়? না এমন ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এতেও না সারলে পরবর্তী ধাপে এগোন চিকিৎসকরা। 

অ্যালার্জি কি সারে? 
অ্যালার্জি কী থেকে হল, সূত্র কোথায় সেটা যত তাড়াতাড়ি জানা যাবে তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করতে পারেন চিকিৎসকরা। অ্যালার্জির যে কারণে হচ্ছে, তার থেকে দূরে থাকলে পারলে , চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জীবনযাত্রাটা বদলে নিতে পারলে, নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া বা ইনহেলার নিতে পারলে, একটা সময়ের পর ওষুধের ডোজ কমিয়ে দেওয়া যায় আবার বন্ধও করে দেওয়া যায়। তবে সেটা সবটাই নির্ভর করে অ্যালার্জির ধরনের উপর। 

অ্যালার্জি আটকাতে কী করা যায়? 
অ্যালার্জি আটকাতে গেলে প্রথমেই কারণ খুঁজে বার করতে হবে ও ট্রিগার ফ্যাক্টরটি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাচ্চার অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের মাটির কাছাকাছি থাকতে দিতে হবে। পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে মিশতে দিতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে, রোজ সুষম খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে। রোদের সংস্পর্শে কিছুটা সময় কাটাতে হবে। ঘর রাখতে হবে ধুলো মুক্ত। এছাড়া যে পর্দা, চাদর, ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও পরিষ্কার রাখতেই হবে অ্যালার্জি এড়াতে। 



ডা. দ্বৈপায়ন ঘোষ