হাঁটুর সমস্যায় ভোগেন না, এমন মানুষ খুব কম। ভারতীয়দের মধ্যে হাঁটুর সমস্যা একটু বেশিই। তার নানা কারণ। হাঁটু এমন একটা অস্থিসন্ধি, যার উপর সব থেকে বেশি চাপ পড়ে। সেই ছোট্ট থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা থেকে জীবনের বড় বড় দৌড়ে, এই হাঁটুই সবথেকে বেশি চাপ নেয়। তাই হাঁটু তাড়াতাড়িই বিড়ম্বনায় ফেলে। এমন একটা পরিস্থিতি আসে, যখন চিকিৎসকরা হাঁটু বদল ছাড়া বিকল্প পান না। তবে কয়েকটি উপায় মেনে চললে হাঁটু বাঁচানো যায়। হাঁটুর হাড়ের ক্ষয় বাঁচানো সম্ভব। উপায় বললেন, ফর্টিস হাসপাতালের অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সৌম্য চক্রবর্তী (Consultant, Orthopaedics, Fortis Hospital, Anandapur)
- প্রথমেই চিকিৎসক জোর দিচ্ছেন যত্নে। হাঁটুর যত্নে হালকা এক্সারসাইজ, হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। উপকার পেতে পারেন যোগা করেও।
- কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিং, কাফস, হিপ মাসল সচল রাখতে স্ট্রেচিং উপকারী হতে পারে।
- যাঁদের হাঁটুর খারাপ অবস্থা জানান দিতে শুরু করেছে, অনেকটা পথ দৌড়ানো, লাফালাফি, হাঁটুর উপর চাপ বাড়ায় এমন খেলাধুলো একটু এড়িয়ে চলতে হবে।
ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না
হাঁটুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অতিরিক্ত ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। শরীরের অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর উপর কয়েক কেজি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বা বসা থেকে ওঠার সময়, হাঁটুর উপর বেশি চাপ পড়ে। সামান্য ওজন কমলেও জয়েন্টের উপর চাপ কমে।
হাঁটুর যত্ন কীভাবে
- হাঁটু মোড়ার সময় বা কিছু তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাঁটুর ওপরই পুরো চাপ না পড়ে। কর্মক্ষেত্রে বা দৈনন্দিন কাজের সময়, অতিরিক্ত ঝোঁকা যাবে না। জয়েন্টের চাপ কমাতে হাঁটুকে যতটা সম্ভব যত্নে রাখতে হবে। যেমন উঁচু টুলে বসে কাজ করা, হাঁটু না মোড়া। দরকারে হাঁটুর জন্য বিশেষ প্যাড ব্যবহার করতে হবে। লম্বা হ্যান্ডেল যুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।
- প্রথম থেকেই হাঁটুর ছোটখাটো আঘাতও উপেক্ষা করা যাবে না। স্প্রেন, মোচড়, ছোট তরুণাস্থিতে চিড়ের যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলেও জয়েন্টের ক্ষয় তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায়। বড় আঘাত লাগলে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে, বরফ সেঁক দিতে হবে, এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে হবে। প্রয়োগ করতে হবে RICE , অর্থাৎ Rest, Ice, Compression, Elevation। ফোলাভাব, যন্ত্রণা বা ব্যথা কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। দরকার হলে ফিজিওথেরাপি করাতে হবে। হাঁটুতে বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। দরকারে ব্রেসিং ব্যবহার করতে হবে।
- ব্যথার বাড়লে, ঘন ঘন জ্বালা করলে, ফুলে গেলে সতর্ক হতে হবে। একেবারে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই চলতে হবে। শুরু থেকে নির্দেশ না মানলে বয়স কালে ভুগতেই হবে। খাবার ও জীবনযাত্রায় কী পরিবর্তন দরকার
- হাঁটু ভাল রাখতে জীবনযাত্রা ও ডায়েটের গুরুত্বও যথেষ্ট। পাতে রাখতে হবে পর্যাপ্ত তাজা শাকসবজি, ফলমূল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার, চর্বিহীন প্রোটিন, গোটা শস্য, বাদাম এবং বীজ সমৃদ্ধ খাবার। এছাড়াও ছোট থেকে খাবারে দরকার পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি। এছাড়া তরুণাস্থির যত্নে পর্যাপ্ত জল খাওয়া দরকার। সেই সঙ্গে কমাতেই হবে ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন।
- একটা বয়সের পর থেকে অবশ্যই নিয়মিত অর্থোপেডিক বা স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। দরকারে কিছু পরীক্ষাও করাতে হতে পারে। দরকারে ফিজিওথেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে।
- ক্রমাগত হাঁটুর ওপর চাপ দেবেন না। দরকারে বয়সকালে হাঁটুর উপর চাপ কমাতে লাঠি ব্যবহার করুন। ব্যথা বাড়লে আইস প্যাক ব্যবহার করুন, বিশ্রাম নিন। আর এই যত্ন একদিনের নয়, হোক প্রতিদিনের।
হাঁটু প্রতিস্থাপন হোক আপনার শেষ বিকল্প। তার আগে একটু সচেতন থাকলে হাঁটু বদলানো এড়াতেই পারবেন আপনি। আর হেঁটে বেড়াতে পারবেন হাসিমুখে।