কলকাতা: বাড়ির সামনে ছোট্ট মাঠ। সেখানেই আনা হত রাধাগোবিন্দকে। চলত উৎসব, পুজো, মেলা। সন্ধেবেলা বাবার এনে দেওয়া নতুন জামা পরে সেই মেলায় যাওয়া। অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর কাছে নববর্ষের স্মৃতির অপর নাম আরবেলিয়া গ্রাম।
শৈশব, কৈশোর কেটেছে আরবেলিয়াতেই। পয়লা বৈশাখে নিজস্ব মেলা বসত সেখানে। বিশ্বনাথ বলছেন, 'নববর্ষ মানেই আমাদের কাছে উৎসব। নিজেদের মেলা বসত। রাধাগোবিন্দকে এসে সেই মাঠের মাঝখানে রাখা হত। পুজো হত, আর তাকে ঘিরেই বসত সেই মেলা। বিভিন্ন খেলনা থেকে শুরু করে ছোটখাটো সাজগোজের জিনিস, সবই আসত। বাবা প্রতিবছর জামা নিয়ে আসতেন। সুতির ফতুয়া। তাতেই কী আনন্দ। সেটা পরে সন্ধেবেলা মেলায় যেতাম বাবার হাত ধরে। আরও একটা আকর্ষণ ছিল নববর্ষের। দুপুরের খাওয়া দাওয়া। আমাদের একদিনের জন্য বাঙালিয়ানা দেখাতে হত না। সারাবছরই বাঙালি খাবার খাওয়া হত। কিন্তু নববর্ষের মেনুটা থাকত একটু বিশেষ। রান্না হত বাড়িতেই। নিজস্ব পুকুর থেকে মাছ ধরা হত। আমডাল, ইঁচোড়ের তরকারি আর মাছ। মেনুতে এগুলো মাস্ট ছিল।'
মেলা ছাড়াও সন্ধেবেলার আরেক গন্তব্য ছিল। হালখাতা করতে দোকানে দোকানে যাওয়া। অভিনেতা বলছেন, 'বাবার সঙ্গে নতুন জামা আর ধুতি পরে হালখাতা করতে যেতাম। মিষ্টির বাক্সের সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা লোভনীয় জিনিস ছিল রসনা। ঠাণ্ডা রসনার সে কি স্বাদ। একবার সন্ধেবেলা মনে আছে, টিভিতে সংঘতি উৎসব সম্প্রচার হল। তখন তো একটাই চ্যানেল, একটাই শো। কত নামি দামি শিল্পীরা গান গাইলেন। এখনও মনে আছে, সবাই মিলে বসে সেই শোটা দেখেছিলাম টিভিতে।'
আরবেলিয়া নয়, বিশ্বনাথের ঠিকানা এখন কলকাতার বুকে। ছোটবেলার সেই মেলাও আর বসে না। কেবল নিয়মমাফিক রাধাগোবিন্দের পুজো হয় বাড়ির মন্দিরে। অভিনয়, কাজের ব্যস্ততায় নববর্ষে আর ফিরে যাওয়া হয় না আরবেলিয়ার বাড়িতে। বিশ্বনাথ বললেন, 'এখন এখানেই নববর্ষ কাটাই। ছোটদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিই। সেই প্রথাটা এখনও বজায় রয়েছে।'