কলকাতা: 'ছোটবেলায় সবাই একসঙ্গে হালখাতা করতে যেতাম। আমরা চার ভাই বোন আর মা, বাবা। নববর্ষের দিনটা ব্যবসায়ীদের কী উদার বলে মনে হত। সারা বছর দেখতাম টাকা দিতে তবে জিনিস দেন তাঁরা। একমাত্র এই দিনটায় একেবারে অন্য আপ্যায়ন পাওয়া যেত। ছোটবেলায় এর কারণটা ঠিক বুঝতে পারতাম না। কিন্তু বেশ ভালো লাগত এই ছক ভাঙা দিনটা।' এক নিশ্বাসে এই কথা বলে একবার থামলেন দেবশঙ্কর হালদার।
কোভিড আছে, আতঙ্ক আছে। তবু বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ চৈত্র সংক্রান্তি। আগামীকাল নতুন বছর। করোনা আবহে নিয়মমাফিক উৎসব বন্ধ থাকবে হয়ত। তবু শৈশব, যৌবনের স্মৃতি প্রতি বছরই নতুন করে মনে পড়ে যায় এই দিনটায়। দেবশঙ্করের শৈশব কেটেছে শ্যামবাজারে। যাত্রায় অভিনয় করতেন বাবা। পরবর্তীকালে রুপোলি পর্দার বাইরে নিজেও সক্রিয়ভাবে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা। বলছেন, 'নববর্ষ দিনটা শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, শিল্পীদের ক্ষেত্রেও বেশ আলাদা। যাত্রার সিজন সাধারণত শুরু হত পুজোর পর থেকে। কিন্তু দেখতাম নববর্ষের সময় বাবার যাত্রার ডাক পড়ত। পরবর্তীকালে নিজেও পেশা হিসাবে অভিনয়কে বাছলাম। নববর্ষের দিনে প্রায় প্রতি বছরই কোনও না কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। যেখানে যোগ দিতে গিয়ে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। মনে হয় আজকে থেকে আবার একটা নতুন শুরু। সামনে অনেকগুলো নতুন সুযোগ। এই বোধটা প্রেরণা দেয়।'
পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ছোটদের কাছে অবশ্য হালখাতা শব্দটা ততটা গুরুত্ব পায় না। মিষ্টির বাক্স আর ক্যালেন্ডারেই তাদের আকর্ষণ। আলাদা নয় দেবশঙ্করের ছোটবেলাটাও। বললেন, 'সারা বছর সবাই একসঙ্গে বেরনো হত না। কিন্তু এই দিনটায় চার ভাই বোন আর মা, বাবা একসঙ্গে হালখাতা করতে বেরতাম। ভাই বোনেদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা চলত। কে কতগুলো মিষ্টির বাক্স আর ক্যালেন্ডার জোগাড় করে আনতে পারবে। যে দোকানে কখনও যাই না, সেখানে গিয়ে ক্যালেন্ডার চাইতেও কখনও লজ্জাবোধ কাজ করেনি।'
এখনও সংক্রান্তি আর পয়লা বৈশাখের দিনটা বাড়িতে লক্ষীপুজোর আয়োজন হয় অভিনেতার। পেটপুজোয় হাজির থাকে বিশেষ বাঙালি রান্না। সব মিলিয়ে দেবশঙ্করের জীবনে খুশি থাকার একটা দিন পয়লা বৈশাখ।