কলকাতা: বাঙালি ঐতিহ্যর এক সুপ্রাচীন এবং গৌরবমণ্ডিত অধ্যায় নববর্ষ। কালের যাত্রাপথ ধরেই উদযাপন এবং রীতিপালনের প্রথা চলে আসছে। আর এই পয়লা বৈশাখের অন্যতম অনুসঙ্গ- হালখাতা। যদিও এ যে কেবল বাঙালিরই তা নয়। এতে ছোঁয়া রয়েছে নবাবি ইতিহাসেরও। যদিও এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়েছে হালের হালখাতা। এ কথা অবশ্য বলে গিয়েছিলেন, কালীপ্রসন্ন সিংহই। তাঁর ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’য় তিনি লিখেছিলেন, নতুন খাতাওয়ালারাই নতুন বৎসরের মান রাখেন।
আকবরের সময় থেকেই বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল বাংলায়। আর হালখাতার বিষয়টি এসেছিল এর পরই। বাংলা সন চালুর ধারাবাহিকতায়, চৈত্র মাসের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তিতে জমিদারের প্রতিনিধিরা প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করতেন। নববর্ষের হালখাতায় পুরনো বছরের খাজনা আদায়ের হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসেবের নতুন খাতা খোলা হত। এও জানা যায়, একসময় বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ একটি নতুন রীতি প্রচলন করেন, যেটি একসময় ‘পুণ্যাহ' হিসেবে পরিচিত ছিল। কালের পরিক্রমায় ‘পুণ্যাহ' উৎসব হারিয়ে গেলেও হালখাতা এখনও স্বমহিমায় টিকে রয়েছে।
নতুন হিসেবের সূচনার পাশাপাশি হালখাতার আলাদা একটি ইতিহাস রয়েছে। ‘হাল’ শব্দটি সংস্কৃত এবং ফরাসি– উভয় ভাষা থেকে আসলেও অর্থগত দিক থেকে এর ভিন্নতা রয়েছে। সংস্কৃত শব্দ ‘হাল’ এর অর্থ ‘লাঙল’। অন্যদিকে, ফারসি শব্দ 'হাল’ এর অর্থ হচ্ছে ‘নতুন’। বাঙালি সমাজে ‘হালখাতা’র ক্ষেত্রে এই দুটো অর্থই প্রাসঙ্গিক। তবে ইতিহাস অনুযায়ী, লাঙলের ব্যবহার শেখার পর মানুষ স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে। লাঙলের ব্যবহার শেখার পরই কৃষিজাত দ্রব্য বিনিময়ের প্রথাও শুরুও হয়। লাঙল দিয়ে চাষের ফলে উৎপন্ন দ্রব্য বিনিময়ের হিসেব যে বিশেষ খাতায় লিখে রাখা হত, সেই খাতারই নাম ছিল `হালখাতা`।
আরও পড়ুন, 'মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা', নববর্ষে আত্মশুদ্ধির মন্ত্র শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
ব্যবসায়ী মহলে ‘হালখাতা’ উৎসবের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। এই দিন ব্যবসায়ীরা দেনা-পাওনার হিসেব সমন্বয় করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। একে লাল খাতা কিংবা খেরো খাতাও বলা হয়ে থাকে।