কলকাতা: সময় পাল্টেছে। জীবনের গতি পাল্টেছে। বেড়েছে দূষণও। সব মিলিয়ে চাপ পড়ছে শরীর-মনে। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছনোর আগেই নানা রোগ-ব্যাধি থাবা বসাচ্ছে শরীরে। তা থেকে বাঁচতে আগে থেকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে বয়স যদি ৩০ পেরোয়। ইদানিং তিরিশের কোঠাতেই নানা সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। সেলিব্রিটিদের মধ্যেও কমবয়সে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর নাড়িয়ে দিয়েছে অনেককেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই বিপদের কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। বেহিসেবি জীবনযাপন না করলেও একটু ভুল অভ্যাসও ডেকে আনতে পারে বিপদ। সেই বিপদ কাটানোর উপায়ও রয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখলেই তিরিশ পেরিয়েও থাকা যাবে সুস্থ ও চনমনে।



ধূমপান নয়
শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ধূমপানের (smoking) অভ্যাস। কিন্তু যাঁদের নেশা রয়েছে, তিরিশ পেরিয়েও নিয়মিত ধূমপান চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতে ফুসফুস সংক্রান্ত বড়সড় সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রক্তবাহী ধমনী। যার ফলে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা তৈরি হয়। ধূমপায়ীদের হৃদযন্ত্রের গুরুতর সমস্যাও দেখা যায়। তিরিশ পেরিয়ে ধূমপানের নেশা ছেড়ে দিলে দীর্ঘ জীবন পর্যন্ত সুস্থভাবে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকটাই।  


মদ্যপানে লাগাম
অনেকেরই নিয়মিত মদ্যপান করার প্রবণতা রয়েছে। কেউ কেউ আবার মাঝেমধ্যে পান করে থাকেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন মদ্যপানের নেশাও শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। লিভার (liver), অগ্ন্যাশয় সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হতে পারে দীর্ঘদিন মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে। এছাড়়া শরীরে কোলেস্টরল সংক্রান্ত সমস্যাও সহজেই মাথাচাড়া দেয়। মদ্যপানে লাগাম পরালে সুস্থ থাকা যাবে সহজেই।  


ঠিক সময়ে খাওয়া
কাজের চাপে, ব্যস্ততায় অনেকসময়েই সময়মতো খেতে পারেন না অনেকে। এই অভ্যেসটিও শরীরের জন্য খারাপ। কম বয়সে তেমন সমস্যা না হলেও বয়স বাড়লে হজম (digestion) ও পেট সংক্রান্ত নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বয়স যদি তিরিশ পেরোয়, যতই ব্যস্ততা থাকুক সময় বের করে খেয়ে নিন। দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত নীরোগ থাকবে শরীর। 


সুষম আহারে মন
বিভিন্ন রেস্তরাঁ, স্ট্রিট ফুডে (street food) মন মজে সকলেরই। সেগুলিও একটু লাগাম দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিন বাইরের খাবার খেলে শরীরে খারাপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। যদি সম্ভব হয়, চেষ্টা করুন বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে যেতে। প্রতিদিনের ডায়েটেও কমাতে হবে তেল-মশলার পরিমাণ। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন (vitamin) সব ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাবারে অতিরিক্ত নুন-চিনিও নৈব নৈব চ।
 
পরিমাণ মতো ঘুম
সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম (sleep) অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু অনেকেই পরিমাণ মতো ঘুমোন না। রাতজেগে সিনেমা দেখে পরদিন ভোরে ওঠার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। কিন্তু তাতে বাড়ছে ক্ষতি। কাজের জন্য অনেককেই রাতের ডিউটি করতে হয় বা ভোরবেলায় উঠতে হয়। নিজের কাজের সময় বুঝে ঘুমের সময় বের করুন। ঘুমনোর সময় মোবাইল হাতের কাছে না রাখাই ভাল। রাত জেগে সিনেমা-খেলা-সিরিজ দেখার অভ্যেস থাকলে তা তিরিশ পেরলে আর চলবে না। রোজ না দেখে বিশেষ দিন বেছে সিনেমা-খেলা দেখতেই পারেন।


শরীরচর্চা
জিম বা সাঁতার কাটার অভ্যেস থাকলে লা জবাব। তা না হলেও সমস্যা নেই। প্রতিদিন হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস থাকুক।  কম বয়সে অনেকের খেলার অভ্যাস থাকে, বয়স বাড়লে কাজের চাপে তা আর হয়ে ওঠে না। তবে তিরিশ পেরলে চেষ্টা করুন হালকা শরীরচর্চা করার। সকালে উঠে ব্যায়াম করতে পারেন। হাঁটতে পারেন। একেবারেই সময় না পেলে চেষ্টা করুন অফিস যাওয়ার বা ফেরার সময় কিছুটা পথ হাঁটতে। ভাল থাকবে শরীর।  


মনের চাপ কমান
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দায়িত্ব। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে চিন্তাও। অতিরিক্ত চিন্তা উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ (diabetes) ডেকে আনে। চেষ্টা করুন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। ছুটির দিন আড্ডা দিন। তেমন ঘনিষ্ঠ কেউ থাকলে তার সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তাতে মন ভাল থাকে। অনেকসময়েই বই পড়া, বাগান করার অভ্যাসও চিন্তা দূরে রাখতে সাহায্য করে।  


আগেই মাপুন ঝুঁকি
পরিবারে কোনও রোগের ইতিহাস থাকলে আগেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। পরিবারের কারও হৃদযন্ত্রের সমস্যা, মধুমেহ, ক্যানসার (cancer) থাকলে নিজেও দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তিরিশ পেরলেই ডাক্তার দেখিয়ে নিয়মিত পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন। আগে থেকে সতর্ক থাকলে সময়ের আগেই রুখে দেওয়া যাবে বিপদ।