কলকাতা : ভারতে হু হু করে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা। মহিলাদের মধ্যে যাঁরা ক্যান্সারে ( Breast Cancer ) আক্রান্ত হন, তার মধ্যে বেশির ভাগই স্তন ক্যান্সারে। একদিকে ভাল খবর হল, এই ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা ক্রমেই উন্নত হচ্ছে, অন্যদিকে আবার আক্রান্তের সংখ্যাটাও বাড়ছে হু হু করে। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখন স্ক্রিনিং বাড়ছে, মানুষ সচেতন হচ্ছেন, তাই ধরা পড়ার হার এখন বেশি। এ বিষয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। তবে হ্যাঁ, চিকিৎসকদের আশঙ্কা আগামী ১০ বছরে ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাটা। তাই আগেভাগে সতর্ক হওয়াটা বড় জরুরি হয়ে পড়ছে।
হালে যে কোনও কাজের দুনিয়াই শাসন করবে এআই, এমন মত বিশেষজ্ঞদের। তাহলে কি মানুষের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে প্রযুক্তি ? এই প্রশ্নটাই এখন অনেকের। সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে, এই প্রযুক্তি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ বছর আগে থেকেই বলে দিতে পারবে, কোনও মহিলার স্তন ক্যান্সার হতে পারে কিনা। এই রকম ভবিষ্যদ্বাণী চিকিৎসার দুনিয়ায় বিপ্লব আনতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু অনেকের মনেই আবার সংশয় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতো কি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরীক্ষা করে দেখতে পারবে প্রযুক্তি ? সত্যিই কি আগামী দিনে ক্যান্সার নির্ণয় করতে অপরিহার্য হবে এআই এর ব্যবহার ?
শল্য চিকিৎসক ও ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার যা জানালেন, তাতে স্বস্তি মিলতে পারে অনেকেরই। ক্যান্সারের ভবিষ্যদ্বাণীর করায় এআই-এর ভূমিকা নিয়ে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী। তাঁর কথায়, একজন চিকিৎসকের যদি ৫০ হাজার রোগী দেখার অভিজ্ঞতা থাকে, তিনি সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই পরীক্ষা করবেন। কিন্তু একটি মেশিনের মধ্যে একসঙ্গে ৫ লাখ রোগী দেখার অভিজ্ঞতা ইনপুট করা যেতে পারে। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভিজ্ঞ চোখে যদি কিছু ধরা নাও পড়ে, মেশিনের চোখ এড়াবে না। তাছাড়া হিউম্যান এররের আশঙ্কাটা মেশিনের ক্ষেত্রে নেই। মেশিন একই ভাবে প্রতিটি কেস পরীক্ষা করবে। তাই এআই নিঃসন্দেহে আরও নিখুঁত নিরীক্ষণ করবে।
এবার আশা যাক পশ্চিমবঙ্গের কথায়। সাধারণ মানুষ যেখানে অনেক ক্ষেত্রে অতটা সচেতনই নন, সেখানে এআই এর সুবিধে তারা কীভাবে ভোগ করবে? চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানালেন, এসএসকেএম হাসপাতালের স্তন ক্যান্সার বিভাগের পক্ষ থেকে এমন একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা সরকারের কাছে রাখা হয়েছে, যেখানে এই প্রযুক্তির সুবিধে পেতে পারেন গ্রামের মানুষও। দোরে দোরে পৌঁছে যেতে পারে প্রযুক্তিগত সুবিধে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই যাতে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তার জন্যই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে এসএসকেএমের চিকিৎসকদল। সেই প্রকল্প কিন্তু ৫ বছর আগে ক্যান্সার নির্ধারনের কথা বলে না, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে সচেতনতাই তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি, সেখানে রোগ তাড়াতাড়ি নির্ধারণ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেটাই সম্ভব হবে এআই-এর মাধ্যমে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়াও হয়েছে। এখন তা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থার কাছে, বাজেট অনুমোদনের জন্য । কারণ AI প্রযুক্তি তৃণমূল স্তরে কাজে লাগাতে গেলে দরকার বড় বাজেট।
তবে ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানালেন, সবকিছু ঠিকঠাক চললে বিপ্লব আসতে পারে ক্যান্সার চিকিৎসায়। গ্রামে গঞ্জে পৌঁছে যেতে পারে হাই-এন্ড প্রযুক্তি। সেই সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে বেঁচে যেতে পারে হাজার হাজার প্রাণ।