কলকাতা : ভয়াবহতায় প্রায় সব রোগকে ছাপিয়ে গিয়েছে ক্যানসার। চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতিতে কর্কটরোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য অনেক অস্ত্রসস্ত্র তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে কঠিন এই ব্যাধিকে আটকে দেওয়া বা সারিয়ে তোলার কোনও অব্যর্থ দাওয়াই এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার যেভাবে থাবা প্রসারিত করছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে ১ জনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অর্থাৎ পরিবারে-পরিবারে ক্যান্সার ঢুকে পড়লেও অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই। তবে যদি এখন আগে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়, তবে কর্কট রোগ শিকড় বিস্তার করার আগেই ধরা পড়ে। কিন্তু মানুষ প্রাথমিক স্তরে বুঝবেন কী ভাবে তাঁর ক্যান্সার হয়ে থাকতে পারে ? এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট আখতার জাওয়াদে  (Director,East Karkinos Healthcare Pvt limited )।


ডা. আখতার প্রথমেই জানালেন, ক্যান্সারের আনসার নেই কথাটা সব ক্ষেত্রে ঠিক নয় । লড়াই করার অস্ত্র আছে, প্রযুক্তি আছে। দরকার প্রাথমিক স্টেজে রোগ নির্ণয় ।  প্রথম বা দ্বিতীয় স্তরে চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তবে তৃতীয়, চতুর্থ স্টেজে ক্যান্সার পৌঁছে গেলে তার বিষ-কামড় থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। 



  • ক্যান্সার মানে শুধু শারীরিক বিপর্যয় নয়, মানসিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও বটে। আগামী দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়লে তার আঘাত আসবে সমাজ ও সার্বিক অর্থনীতির উপরও। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ক্যান্সার হওয়ার আগেও তা নির্ণয় সম্ভব। কার কার ক্ষেত্রে কর্কটরোগের ঝুঁকি বেশি , তাও বলা সম্ভব চিকিৎসাশাস্ত্রে।


 ক্যান্সারকে  আমরা ৪ টি স্টেজে ভাগ করতে পারি।
- প্রথম ও দ্বিতীয় স্টেজকে "প্রাথমিক" ,
- তৃতীয়টিকে  "লোকালি অ্যাডভান্স স্টেজ"
- চতুর্থ টিকে "অ্যাডভান্স স্টেজ" 
বলা হয়ে থাকে। 


শেষের দুটি স্টেজে চিকিৎসা বেশ ব্যায় সাপেক্ষ এবং অনেক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে আদৌ নিরাময় হবে কি না, তাও বলা মুশকিল। বিশেষত  চতুর্থ স্টেজে,  ক্যান্সার ছড়িয়ে পরে এক অঙ্গ থেকে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে। তাই নানান চিকিৎসার মধ্যে রোগীকে রাখলেও চিকিৎসার সময় এবং সাফল্যের হার কমতে থাকে।
কোন কোন ক্যান্সারে ভারতীয়রা আক্রান্ত হন বেশি ?
- মুখের ক্যান্সার ( হেড - নেক )
-ফুসফুসের ক্যান্সার
- স্তন ক্যান্সার
-জরায়ুর ক্যান্সার 
-প্রস্টেট ক্যান্সার
- কোলোরেক্টাল ক্যান্সার

ক্যান্সার নিয়ে ভয়াবহতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনেও সব সময় একটা আতঙ্ক কাজ করে - এই বুঝি ক্যান্সার হল ! তবে অযথা ভয় না পেয়ে কতকগুলি উপসর্গের দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। 

- দীর্ঘদিন যাবৎ শরীরের কোনও ব্যাথা রয়েছে ?
- কোনও ঘা কি সারতেই চাইছে না, বরং বাড়ছে ?
- কোনও জায়গায় ফোলাভাব তৈরি হচ্ছে ?
-  শরীরের কোনও দ্বার দিয়ে রক্তপাত হয়েই চলেছে ? কমছে না ?
- নতুন করে কোনও আঁচিল তিল বা পলিপ তৈরি হচ্ছে শরীরে ?
 এমত অবস্থায় ডাক্তার দেখাতেই হবে। 


কাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি ?
- তামাক সেবনে আসক্ত হলে। 
- দূষণযুক্ত পরিবেশে কাজ করেন যাঁরা
- দূষিত বা বিষাক্ত জিনিস বা কেমিক্যাল নিয়ে যাঁরা কাজ করেন।  
- কোনও কোনও ক্যান্সার জিনগত, তাই পরিবারে ক্যান্সারের হিস্ট্রি থাকলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কম বয়স থেকেই স্ক্রিনিং জরুরি। 
-তবে ক্যান্সারের কারণ এখনও জানা যায়নি, এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। 
 - জীবনশৈলির দিকে নজর দিতে হবে বরাবরই, হঠাৎ করে সচেতন হলে লাভ নেই 
- জাঙ্ক ফুড যতটা সম্ভব কম খাওয়া 
- এক জায়গায় বসে কাজ করেন যাঁরা, তাঁদেরও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। 
- আপনার উচ্চতা অনুসারে দেহের সঠিক ওজন জানতে হবে ও বজায় রাখতে হবে। 
- যে কোনও মাধ্যমে তামাক সেবন বন্ধ করতে হবে। 
- অ্যালকোহল সেবনেও রাশ টানতে হবে। 


একজনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কতটা বেশি, বা কতটা ঝুঁকি রয়েছে, তা জানা যেতে পারে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলে। সম্প্রতি এমন একটি উদ্যোগ এনেছে Karkinos Healthcare Pvt limited। এদের ওয়েবসাইটে ( www.karkinos.in )  গিয়ে Know your Risk - অপশনে গিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্নের উত্তর দিলে ওই ওয়েবসাইটই বলে দিতে পারবে আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি কতটা । এরপর কী কী করতে হবে, তা গাইড করবে এই সংস্থা। জেলায় জেলায় হাসপাতালগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করার পথে এই সংস্থা।


 



Akhter Jawade - Radiation Oncologist