নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাস অতিমারীর গ্রাসে গোটা বিশ্ব। মারণ কোভিড-১৯ সংক্রমণের মোকাবিলায় ভ্যাকসিন নিয়ে এখনও গবেষণা চালাচ্ছে দুনিয়াভরের বিজ্ঞানীরা। কী করে এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, তার হদিশ এখনও নেই বিশ্ববাসীর হাতে।


করোনাভাইরাসের ফলে মানুষ যখন আক্রান্ত-ত্রস্ত-বিধ্বস্ত, ঠিক এমন একটা সময়ে আরেকটা নতুন মারণ ভাইরাসের আঁচড় ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করেছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)-র ঘোষণা অনুযায়ী, "চাপারে ভাইরাস" সংক্রমণে ইবোলার মতো হ্যামোরেজিক ফিভার (যে জ্বরে রক্তক্ষরণ হয়) হতে পারে তাই নয়, আরও ভয়ের বিষয় হল তা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে।


কী এই চাপারে ভাইরাস?


সিডিসি-র তথ্য অনুযায়ী, চাপারে ভাইরাস হল অ্যারিনাভাইরাস পরিবার বা শ্রেণিভুক্ত। সংক্রমিত ইঁদুরের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ অথবা ইঁদুরের মলমূত্রের সঙ্গে পরোক্ষ সংস্পর্শের ফলে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসের সংক্রমিত ব্যক্তির জ্বরে রক্তক্ষরণ হয়।


কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?


কোন প্রজাতির ইঁদুর এই ভাইরাসের মূল বাহক, তা এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে, সংক্রমিত ইঁদুরের কামড় বা আঁচড়ের মতো সরাসরি সংস্পর্শ অথবা সংক্রমিত ইঁদুরের লালারস ও মলমূত্রের সংস্পর্শে এলে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।


সিডিসি জানিয়েছে, এই ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি অন্যদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির লালারস বা এরোজলের মাধ্যমে এই ভাইরাস একজনের থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অথবা, চেস্ট কমপ্রেসন, সিপিআর ও ইনট্যুবেশনের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার সময়ও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।


আগে কী এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গিয়েছে?


সিডিসি-র তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ২ বার এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখেছে বিশ্ব। ২০০৩ সালে লাতিন আমেরিকার বলিভিয়ার চাপারে প্রদেশে এই ভাইরাসের দেখা প্রথম মেলে। সেই থেকেই এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি ঘটে ২০১৯ সালে। এবার সংক্রমণ ছড়ায় বলিভিয়ারই কারানাভি প্রদেশে। চাপারেতে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। কারানাভিতে মৃত্যু হয়েছিল ৩ জনের।


সাম্প্রতিক ঘটনাবলি


২০১৯ সালে যে সংক্রমণ ঘটেছিল, সেখানে লা পাজ শহরে দুই রোগীর থেকে তিন স্বাস্থ্যকর্মীও সংক্রমিত হন। সেখানে ২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা ডেঙ্গি ভেবেছিলেন। কিন্তু, পরীক্ষা করে দেখা যায় এর উপসর্গ অন্য। সিডিসি-র সঙ্গে যৌথ গবেষণা চালিয়ে প্রথমবার চাপারে ভাইরাসকে চিহ্নিত করে প্যান-আমেরিকান হেল্থ অর্গানাইজেশন (পাহো)।


বিজ্ঞানীদের জানান, এক ব্যক্তির থেকে অন্যের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। তাঁদের গবেষণায় উঠে আসে,সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির শুক্রাণুর মধ্যে প্রায় ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত চাপারে ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে।