সন্দীপ সরকার, ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : করোনার ( Coronavirus ) ভয়ঙ্কর স্মৃতি উসকে দিচ্ছে অ্য়াডিনো ভাইরাস ( Adenovirus) । একের পর এক হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও অ্য়াডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্য়ু মিছিল। কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে, শিশু ভর্তির সংখ্য়াটা হাজারেরও বেশি। গত ৩২ ঘণ্টায় কলকাতার সরকারি হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও অ্য়াডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ৫ শিশুর মৃত্য়ু হয়েছে, যার মধ্যে ২ শিশু অ্য়াডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ও বাকি ৩ শিশুর মৃত্য়ুর কারণ নিউমোনিয়া বলে ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে। সোমবার ভোর ৫টা ১০-এ, কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজে মৃত্য়ু হয় চন্দননগরের বাসিন্দা ৯ মাসের এক শিশুকন্য়ার। 


পরিবার সূত্রে খবর, প্রবল শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। ২০ তারিখ থেকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাকে। এরই মধ্যে সোমবার ভোরে ঘটে গেল মারাত্মক ঘটনা। ডেথ সার্টিফিকেটে শিশুর মৃত্য়ুর কারণ নিউমোনিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজেক সুপার অঞ্জন অধিকারী জানান, 'অ্য়াডিনো কিনা এখনও জানি না। স্য়াম্পল পরীক্ষাতে পাঠানো হয়েছে। আসেনি। পেডিয়াট্রিক আইসিইউ সব ভর্তি। কেস অনেক বেড়ে গেছে আগের থেকে। 


অন্যদিকে, এদিন ভোরে বি সি রায় শিশু হাসপাতালেও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে এক শিশুর মৃত্যু হয়। পেডিয়াট্রিক আইসিইউ-তে ভর্তি ছিল শিশু। তারও ডেথ সার্টিফিকেটে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্য়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। রবিবার ভোরে, কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত দেড়বছরের এক শিশুর মৃত্য়ু হয়। শনিবার রাতে, বিসি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্য়ু হয় অ্য়াডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা, ৯ মাসের শিশুকন্য়ার।   রবিবার সকালে, এই হাসপাতালেই মৃত্য়ু হয় বাদুড়িয়ার বাসিন্দা, ৮ মাসের শিশুর। তার  ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ, সিভিয়ার নিউমোনিয়া। ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতিতে শিশুর অভিভাবকদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। 
 
চিকিৎসক জয়দেব রায়, ' স্কুল খোলা, পরীক্ষা চলছে। সবাই এখনও রোগটা নিয়ে ততটা সচেতন নয়। প্রপার আইসোলেশন হচ্ছে না।  এতদিন শুধু ভাবতাম আপার রেসপিরেটরি ট্র্য়াকে এই ভাইরাল ইনফেকশন হয়। এখন পুরো ফুসফুসই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একবার নিউমোনিয়া হয়ে গেলে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ছাড়া উপায় নেই।  ' 


সোমবার সমস্ত সরকারি হাসপাতালের শিশু চিকিৎসা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক ডাকে স্বাস্থ্য় দফতর। সূত্রের খবর, সেখানে বলা হয়, সঙ্কটজনক অবস্থায় কোনও শিশুকেই রেফার করা যাবে না। শ্বাসকষ্টের সমস্য়া হলেই অক্সিজেনের ব্য়বস্থা করতে হবে হাসপাতালকে। এক্ষেত্রে যেন কোনও গাফিলতি না থাকে। ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সরবরাহ পরিষেবা ঠিকমতো রয়েছে কিনা, নজর রাখতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। করোনার সময়কালের মতোই প্রস্তুত হতে হবে সব হাসপাতালকে। সমস্ত হাসপাতালের পরিকাঠামো যেন ঠিক থাকে।  প্রয়োজন না হলে জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার নয়। জেলার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। শুধু তাই নয় কোনও শিশুর মৃত্য়ু হলে, মৃত্য়ুর কারণ পর্যালোচনা করতে হবে। অন্য়দিকে, বিসি রায় শিশু হাসপাতালের ভার কমাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে শিশুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ২৫ বেডের ওয়ার্ড চালু করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য় দফতর। পরবর্তীকালে সংখ্য়াটা ৫০ করা হবে।