নয়াদিল্লি: ছোটবেলায় মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদের সাক্ষী হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি বলে এবার উঠে এল গবেষণায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, বয়স ১৮ হওয়ার আগে যাঁরা মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদের সাক্ষী থেকেছেন, পরবর্তী জীবনে তাঁদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বেশি। PLOS One জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে, যাকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। (Risk of Stroke)
৬৫ এবং তার বেশি বছরের প্রায় ১৩০০০ মানুষকে নিয়ে গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা গিয়েছে, বয়স ১৮ ছোঁয়ার আগে যাঁদের মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছিল, অন্যদের তুলনায় তাঁদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বেশি। এর আগে, অবসাদ, ডায়বিটিস, সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াকে স্ট্রোকের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ছোটবেলার ট্রমা বা আঘাত, মা-বাবার সম্পর্কের টানাপোড়েনের দরুণ মানসিক চাপও এবার তাতে সংযুক্ত হল। (Stroke Symptoms)
মস্তিষ্কের কিছু অংশে রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে, অথবা মস্তিষ্কের কোনও অংশে রক্তনালি ফেটে গেলে স্ট্রোক হয়। যে কোনও কারণেই হোক না কেন, স্ট্রোক হলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হয় মানুষের। স্ট্রোকের পর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয় মস্তিষ্কের। এর ফলে শারীরিক ভাবে অক্ষমও হয়ে পড়েন রোগী। আর মৃত্যুর ঝুঁকি তো রয়েইছে।
এ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর গবেষক এসমি ফুলার টমসন বলেন, “যে সমস্ত প্রাপ্তবস্ক বিবাহবিচ্ছিন্ন মা-বাবার সান্নিধ্যে বড় হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বেশি, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।” ছোটবেলায় যাঁরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
গবেষক এসমির মতে ডায়বিটিসের মতো অন্য কারণগুলির মতো, মা-বাবার বিচ্ছেদের সাক্ষী হওয়ার অভিজ্ঞতাও স্ট্রোকের অন্যতম নেপথ্য কারণ।
তবে এই গবেষণা নেহাতই পর্যবেক্ষণমূলক। মা-বাবার বিবাহ-বিচ্ছেদ পরবর্তীতে স্ট্রোক ডেকে আনে কী করে, তার সঠিক ব্যাখ্যা এখনও তুলে ধরেননি বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে কোন কোন ধরনের স্ট্রোক হতে পারে, কোন বয়সে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তার উল্লেখ নেই। ষাটোর্ধ্বদের নিয়েই গবেষণাটি চালানো হয়। এ ব্যাপারে সিলমোহর পেতে অল্পবয়সিদের নিয়েও গবেষণা জরুরি।
তবে একটি বিষয়ে একমত বিজ্ঞানীরা, তা হল, অবসাদ, ডায়বিটিস, নেশা, ধূমপান এবং স্থূলতার মতো মা-বাবার বিচ্ছেদের সাক্ষী হলেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
স্ট্রোকের যে উপসর্গগুলির কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা, তা হল-
- হঠাৎ করে মুখ, হাত, পা বা শরীরের একদিক অসাড় হয়ে গেলে, অথবা দুর্বল মনে হলে।
- হঠাৎ করে যদি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, কথা বলতে সমস্যা হয়, কথা জড়িয়ে যায়।
- হঠাৎ করে এক অথবা দুই চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলে।
- হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে গেলে, ব্যালান্স রাখতে না পারলে।
- কোনও কারণ ছাড়াই আচমকা তীব্র মাথার যন্ত্রণা।