লিভারের সমস্যার সঙ্গে করোনা আক্রান্তের এক উল্লেখযোগ্য যোগসূত্র রয়েছে। অন্তত এমনটাই বলছেন চিকিৎসকরা। একাধিক গবেষণাতেও উঠে এসেছে এই তথ্য। দেখা গিয়েছে, লিভারের সমস্যা রয়েছে এমন রোগীর ওপর খুব সহজেই প্রভাব ফেলছে করোনা ভাইরাস।


একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ১৫ শতাংশের লিভারে কোনও না কোনও সমস্যা রয়েছে। ইয়ালে লিভার সেন্টারের তরফে যে পরীক্ষা করা হয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে বর্তমানে রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে এই হার। 


পরিসংখ্যান বলছে, বছরে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ লিভারজনিত রোগে আক্রান্ত হন। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী লিভারজনিত সমস্যা ১০টি রোগের মধ্যে অন্যতম যাতে রোগী মৃত্যুর হার বেশি। করোনা মহামারী লিভারজনিত রোগের বাড়বাড়ন্ত তরান্বিত করতে চলেছে বলেই আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।


সংবাদ সংস্থা আইএএনএস-কে চিকিৎসক রাজীব লোচন জানিয়েছেন, যাঁরা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের লিভারজনিত কিছু না কিছু সমস্যা প্রকোট হয়েছে। তবে চাইলেই সমস্যার সমাধান আপনার হাতের মুঠোয়। কী করবেন, কী করবেন না জানাচ্ছেন খোদ বিশেষজ্ঞরাই। রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নয়, সাবধান হন আগেভাগেই।


মাথায় রাখুন নিম্নলিখিত কয়েকটি দিক
 
মদ্যপানে না..


মদ্যপান কমান। নিয়মিত মদ্যপান লিভারে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি লক্ষ্য করা গিয়েছে, যাঁরা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন, তাঁদের ধূমপানেও সমান আশক্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে দুই-এর ভয়াবহ প্রভাবে লিভারের সমস্যা আরও বাড়বে। বর্তমান অবস্থার কথা মাথায় রেখে তাই এই দিকগুলো সম্পর্ক ওয়াকিবহাল হন।


লিভার ভালো রাখতে সঠিক ডায়েট..


প্রতিদিনের ডায়েটে পর্যাপ্ত ফল এবং শাকসবজি রাখুন। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা ভালো থাকবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এমন ফল রাখুন। গ্রিন টি খেতে পারেন। খাদ্যতালিকায় রাখুন, অলিভওয়েল, মাছ, অ্যাভোকাডো, কলা, বাদাম, সবুজ শাকসবজি। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান। অতিরিক্ত ভাজাভুজি, ময়দার তৈরি খাবার, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলাই ভালো।


ব্যায়াম করতে ভুলবেন না..


প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় ব্যায়ামের জন্য রাখুন। ফ্রি হ্যান্ড করতে পারেন। গবেষণা বলছে, নিয়মিত ব্যায়ামে লিভার সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কম হয়। তবে যদি আপনার কোনও বিশেষ শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যোগব্যায়াম নির্ধারণ করুন।


বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওবেসিটির কারণে ফ্যাটি লিভার ইত্যাদির সমস্যা হতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন প্রতিদিনের ডায়েটে। অনেক ক্ষেত্র রোগাদেরও লিভারে ফ্যাট জমতে পারে।


হাইজিনে খেয়াল রাখা জরুরী


অপরিষ্কার সূঁচ, আনপ্রোটেক্টেড সেক্সে হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর সংক্রমণ হতে পারে, যা লিভারে প্রভাব ফেলে। অপরিষ্কার ট্যাটু পার্লার, ব্যবহার করা ইনজেকশনের সিরিঞ্চ থেকেও সুস্থ মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঢুকতে পারে। করোনার টিকায় এই ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। মাস্ক এবং শারীরিক দূরত্বই আপাতত সংক্রমণ রোখার সবথেকে ভালো উপায়। সাধারণ মানুষের দায় সারা মনোভাবকে বর্তমান সংক্রামক পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। কাজেই অবিলম্বে সতর্ক হয়ে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মোকাবিলা সম্ভব বলেই মত তাঁদের।



কোভিড ভ্যাকসিন অবশ্যই


লিভার সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী কোনও সমস্যা থাকলে অনেকেই  ভ্যাকসিন নিতে ভয় পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে ভ্যাকসিন আপনার জন্য ঝুঁকিহীন কিনা অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নিন। লিভারের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা রুখতে সঠিক সময়ে তার ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে জন্ডিস, হাত-পা ফুলে ওঠা, মাথা ঘোরা, পেটে অস্বাভাবিক ব্য়থা, বমি, চুলকানি, হলুদ প্রস্রাব এবং প্রস্রাবে দুর্গন্ধর মতো উপসর্গ দেখা দিলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।