কলকাতা : কোভিড ভ্যাকসিন কি হার্ট অ্যাটাক এর সঙ্গে সম্পর্কিত?  এই প্রশ্নটা এখন খুবই চর্চিত। বিশেষত কর্নাটকের হাসানে ৪০ এর কম বয়সী একাধিক মানুষের সাডেন হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর পর এই নিয়ে চর্চা তুঙ্গে । কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন কোভিড ভ্যাকসিন ও হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে । যদিও ভারত সরকার প্রমাণ সহ এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে । ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো দাবি করেছে কোভিড ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এই নিয়ে কী বলছেন চিকিৎসকরা ? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, চিকিৎসক সঞ্জীব মণ্ডল (Chief and Head, Paediatric Immunology, Asian Institute of Immunology and Rheumatology (AIIR)

  • চিকিৎসকের মতে, কোভিড ভ্যাকসিনের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের সরাসরি কোন যোগ নেই । কারণ প্রথম যখন কোভিড থাবা বিস্তার করে, সেই সময় কোন ভ্যাকসিন ছিল না । তখন বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে । ভারতের মানুষ তবুও বা কোভিডের  সঙ্গে একটা লড়াই দিতে পেরেছে কিন্তু পশ্চিমে দেশগুলিতে মৃত্যুর হার ছিল অনেক বেশি। কারণ চিকিৎসকদের ধারণা , ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে মানুষকে অনেক রোগ , বালাই, জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে বড় হতে হয়। নানা রকম ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে তাদের মোলাকাত হয় অনেক বেশি, যাকে বলে এক্সপোজার অনেক বেশি। অন্যদিকে পশ্চিমী দেশের মানুষদের বেড়ে ওঠা অনেক বেশি পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে। তাই ইনফেকশনের সঙ্গে পরিচিতিও কম। তাই হয়ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভারতীয়দের তুলনায় একটু কম।  
  • প্রথমে কোভিডে নারী-পুরুষ, বয়স নির্বিশেষে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে । পরে দেখা যায় বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি । তারপরে দেখা যায় বয়স্কদের মধ্যে যাঁদের অন্য অসুখ রয়েছে বা কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি । এরপর দেখা যায় পুরুষরাই কোভিডের বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। তারপরে দেখা যায় পুরুষ বা নারী নয়, কোভিডের থাবা তাঁদের উপরই বেশি চওড়া করছে যাঁদের বিশেষ কোনও জিনগত পরিবর্তন আছে (যদিও এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও অনেক ডেটা প্রয়োজন)। কার উপর কোন রোগ বেশি প্রভাব বিস্তার করবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে জিনের তারতম্যের উপর। 
  • সারা পৃথিবীতে বহু কোভিড ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে এবং প্রয়োগ হয়েছে । প্রত্যেকটি ভ্যাকসিন বিভিন্ন ভাবে কাজ করে। এবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে হয়তো কোভি়ড ভ্যাকসিন নেওয়ার পর হয়ত কোনো ব্যক্তির কোনো বিশেষ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যেমন, হার্টের সমস্যা, প্লেটলেট কমে যাওয়া, guillane barre syndrome ইত্যাদি।  তবে তা থেকে সরাসরি বলা যায় না যে ভ্যাকসিন ও হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এ ধরনের দাবি করার আগে যথেষ্ট প্রামাণ্য তথ্য বা ডেটা থাকা দরকার। যদি কোন ভ্যাকসিনের প্রভাবে কোন বিশেষ অসুখ হয়ে থাকে তাহলে তো সকলেরই হওয়ার কথা। সেরকমটা তো হয়নি । বিচ্ছিন্নভাবে কারো কারো হয়ে থাকলে, এটা ধরে নেওয়া যায় , তার পিছনে অন্য কোন কারণ আছে। তা পরীক্ষা করলেই জানা যাবে। 
  • এছাড়া আইসিএমআর এর মত সংস্থা, ইতিমধ্যে এই নিয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা করেছে। সেই গবেষণায় সারা দেশ থেকে ৪০ এর কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, এমন মানুষদের নিয়ে ২ বছর গবেষণা করা হয়।  তাতে দেখা গিয়েছে, তাদের হয়তো হার্ট অ্যাটাকের পিছনে রয়েছে অন্য কোন কারণ রয়েছে। কোভিড ভ্যাকসিনের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের সরাসরি কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি সেখানে। হয়ত অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে। যেমন - পরিবারে সাডেন হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস, ওবেসিটি, তাঁর জীবনযাত্রা ইত্যাদি।  
  • সারা বিশ্বে দেখা গেছে, কোভিড ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর কোভি়ডে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বা আক্রান্ত হওয়ার পর তার কুপ্রভাবের মাত্রা অনেকটাই কমেছে । ভ্যাকসিনের ইতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তাই কিছু হার্ট অ্যাটাকের ঘটনাকে সামনে রেখে সরাসরি ভ্যাকসিনকে খারাপ দাবি করা অত্যন্ত অনর্থক এবং  মানব জাতির পক্ষে ক্ষতিকারক। এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকরা ।
  • মনে রাখতে হবে, কর্নাটকে একটি জায়গায়  কিছু মানুষের পরপর মৃত্যুকে কোভিডের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়াটা ঠিক নয় । কারণ এই একই ভ্যাকসিন ভারতের বাকি রাজ্যগুলোতেও প্রয়োগ হয়েছে । এটা দেখা অবশ্যক, হাসানের মানুষ কোন ভ্যাকসিন পেয়েছেন, সেই ভ্যাকসিন অন্যত্র প্রয়োগ হয়ে থাকলে সেখানেও একই ফলাফল হচ্ছে কিনা ।  আরো একটা বিষয় যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন, যাঁরা হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলে, তাঁরা কি একই ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন ? একই সময় পেয়েছিলেন ? একই ব্যাচ থেকে পেয়েছিলেন ? তাহলে সন্দেহ থেকে যায় , ভ্যাকসিন গুলি কি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল ? তাই আপাতত সেই নির্দিষ্ট প্রমাণগুলি ছাড়া কোভিড ভ্যাকসিনকে খারাপ বলে দেগে দেওয়া অনর্থক।