কোভিডের মারণ থাবাস যখন ক্রমেই চওড়া হচ্ছিল, তখন ভরসা জুগিয়েছিল ভ্যাকসিন। কিন্তু কোভিড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও ছিল নানা মুনির নানা মত। একদল দাবি করেছিলেন, কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে কমবয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্য়াটাকের ঝুঁকি বেড়েছে। অনেকেই দাবি করেছিলেন, কোভিডের পর বেড়ে গিয়েছে অকালমৃত্যুর হার। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে হার্ট ফেলইয়র হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার মতো ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু এ কথা কি আদৌ সত্যি ? কী বলছে গবেষণা ? 


ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ ( ICMR )-এর মতে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য তরুণদের  আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়েনি। গবেষণায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এর পিছনে রয়েছে অন্য হাজারো কারণ। কোভিড ভ্যাকসিন নয়, জীবনধারণের ধরন ও আনুসঙ্গিক নানা কারণে বেড়েছে তরুণদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়েছে।


কাদের মধ্যে ঝুঁকি বেড়েছে 



  • দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা কোভিডে ভুগেছেন।

  • অত্যধিক মদ্যপান করেন যাঁরা। 

  • যাঁরা কোভিডে প্রবলভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। 

  • যাঁরা কোভিজ থেকে সেরে ওঠার পরপরই খুব বেশিরকম ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যকলাপ করেছেন।

    ভারতে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে  সম্পর্কিত অনেক কারণ এই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। 


কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী জানালেন


ICMR গবেষণার কথা উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য রবিবার গুজরাতের ভাবনগরে বলেন, যাঁরা কোভিডে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন, তাঁরা হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এড়াতে এক থেকে দুই বছর অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করবেন না। ইদানিংকালে তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেড়েছে, যার জন্য অনেকে কোভিড বা কোভিডের ভ্যাকসিনকে দায়ী করছেন। এর শিকড় খুঁজতেই গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। 


কোন বয়সের মানুষের উপর চালানো হয়েছে গবেষণা ? 


এই সমীক্ষা উদ্দেশ্য ছিল ভারতে সুস্থ তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা।  গবেষণার আওতায় আনা হয় ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী দৃশ্যত সুস্থ ব্যক্তিদের, যাঁদের কোনও অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না এবং যাঁরা ২০২১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৩ এর ৩১ মার্চের মধ্যে হঠাৎ মারা গেছেন।


গবেষকরা মোট ৭২৯ জনের উপর স্টাডি করেন (compared against 2,916 controls )। প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁদের মেডিক্যাল হিস্ট্রি, ধূমপান করেন কিনা , অ্যালকোহল পান করেন কিনা এবং বেশি শারীরিক কার্যকলাপ করতেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়। এছাড়া কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হয়।  এছাড়া তাঁরা টিকা নিয়েছিলেন কি না তাও জানা হয়। 


তাতে দেখা যায়, Covid-19 টিকা ভারতে অল্প বয়স্কদের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়নি। আসলে, COVID-19 টিকা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়েছে। যে বিষয়গুলো আকস্মিক মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় তা হল - 



  •  অতীতে COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি  থাকা

  • অত্যধিক অ্যালকোহল পান করা 

  • অতিরিক্ত ব্যায়াম করা ইত্যাদি