কলকাতা: হোলি আর দোল কি এক? আজ্ঞে না। ব্যবহারিক প্রয়োগ, অর্থাৎ উৎসব আয়োজন ও পালনের আঙ্গিক এক হলেও বুৎপত্তিগত দিক থেকেই হোলি এবং দোল আদতে আলাদা আলাদা দুটি উৎসব।


দোল পূর্ণিমায় ‘দোলযাত্রা’ আয়োজিত হয়। আর ‘হোলি’ পালিত হয় তারপরের দিন। ভারতীয় পুরণশাস্ত্র মতে দোলযাত্রার দিনই নাকি শ্রীকৃষ্ণ রাধিকাকে ‘অফিসিয়ালি’ অর্থাৎ সরকারিভাবে প্রেম নিবেদন করেছিলেন। কথিত রয়েছে এই দিনেই রাধিকাকে ‘ফাগে’ (গুড়ো রঙ) রাঙিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। উল্লেখ্য এই দিনই আবার হিন্দু বঙ্গ সমাজে পালিত হয় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মতিথি। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার নবদ্বীপ, মায়াপুর, কৃষ্ণনগরে এই তিথি উপলক্ষে বিশেষ পুজোআর্চার আয়োজন করা হয়। বাংলার বাইরে ওড়িশাতেও ধুমধাম করে পালিত হয় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মতিথি। অসম সহ বাংলাদেশেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই দিনে রঙের উৎসবে নিজেদের সামিল করেন। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এটাই বাঙালির বছরের শেষ পরব।


শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত মথুরা ও রাধার জন্মস্থান হিসেবে জগদ্বিখ্যাত বৃন্দাবনে ১৬ দিন ধরে এই দোল উৎসব পালিত হয়।


অন্যদিকে হোলি উৎসবের নেপথ্যে রয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ ও প্রহল্লাদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস শ্রীকৃষ্ণ ও প্রহল্লাদ দু জনই বিষ্ণুর অংশবিশেষ। রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্র ছিল প্রহল্লাদ। সে ছিল একজন ধর্মপ্রাণ বালক। এই প্রহল্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারার প্রচেষ্টা করেন হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা। সেই উদ্দেশে প্রহল্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেন কাশ্যপ কন্যা। হোলিকা ভেবেছিলেন, তিনি তাঁর মায়াবী ক্ষমতাবলে বেঁচে যাবেন এবং পুড়ে ছাই হয়ে যাবে প্রহল্লাদ। কিন্তু আদতে দেখা যায় তার উল্টোটাই হয়। বিষ্ণুভক্ত বালকের গায়ে এতটুকু আঁচও লাগেনি। অন্যদিকে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় কাশ্যপ কন্যার। তারপর থেকেই এই অসুরীয় শক্তির পরাজয় ও শুভ শক্তির জয়কে উদযাপন করতে পালিত হয় হোলি। যা আজও একই রকমভাবে বহমান। বাঙালি তো বটেই অবাঙালিরাও হোলি উৎসব পালনের সময় নেড়া পুড়িয়ে রঙের উৎসবের সূচনা করে। দোলের আগেও একই রকমভাবে নেড়া পোড়ার আয়োজন করা হয়। বলা হয়, ওই অগ্নিস্তূপে সমস্ত অশুভর আহুতি দেওয়া হয়।