সৌরভ চক্রবর্তী, কলকাতা: পুরুষ বা মহিলা, এখন অনেকেই একা বেড়াতে যান। আসলে দৈনন্দিন কাজের চাপ, নানা ঝক্কি, মানসিক চাপ কাটাতে কয়েকদিনের জন্য সবকিছু থেকে দূরে চলে যেতে চান অনেকেই। একা বেড়াতে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের চেয়ে ভাল জায়গা আর হয় না। পাকদণ্ডি পথ ধরে উঠে গেলে যে অনাবিল শান্তি পাওয়া যায়, তা অন্য কোথাও নেই। পাহাড়ে মুক্তির স্বাদও পাওয়া যায়। সেই কারণে অনেকেরই প্রথম পছন্দের ছুটি কাটানোর জায়গা পাহাড়।


একা বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকেই অফবিট জায়গার খোঁজ করেন। হোম স্টে-ও এখন বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তবে একা বেড়াতে গেলে হোম স্টে-তে না থাকাই ভাল। কারণ, সারাদিন ঘোরাঘুরি করে কেটে গেলেও, সন্ধে নামলেই আর কিছু করার থাকে না। তখন ভাল লাগে না। তার চেয়ে বরং চেনা কোনও জায়গায় গেলে মন ভাল হয়ে যায়। সেরকমই জায়গা হল পূর্ব সিকিম আর কার্শিয়ং। বাঙালির চিরচেনা হলেও, দার্জিলিং আর গ্যাংটক কখনও পুরনো হয় না। যে কোনও ঋতুতেই রূপের ডালি সাজিয়ে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তৈরি থাকে এই দুই শৈলশহর। এবারের পুজোর ছুটিতেও চলে যাওয়াই যায়।  


উত্তরবঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে হলেই সবার আগে দার্জিলিঙের কথা মনে হয়। তবে দার্জিলিংকে পাশ কাটিয়ে আরও অনেক জায়গা ঘুরে নেওয়া যায়। সেটা নিয়েই এখন আমরা আলোচনা করছি। ট্রেন, বাস বা উড়ানে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পৌঁছে গেলেই হল, দিগন্ত উন্মুক্ত হয়ে যায়। দার্জিলিং, সিকিম, নেপাল, ভুটান, ডুয়ার্স, যে কোনও দিকে চলে গেলেই হল। তবে যদি পূর্ব সিকিম যাবেন বলে ঠিক করে থাকেন, তাহলে শেয়ার গাড়িতে চড়ে বসুন। একে একে বেঙ্গল সাফারি, সেবক, করোনেশন ব্রিজ, কালিঝোরা, পাঁচ মাইল, সাত মাইল, তিস্তাবাজার হয়ে পৌঁছে যান গ্যাংটক। যাত্রাপথের প্রায় পুরো সময়েই সঙ্গী হিসেবে পাবেন তিস্তাকে।


গ্যাংটকে হোটেলে চেক-ইন করে ফ্রেশ হয়েই চলে যান এম জি মার্গে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে হনুমান টক, গণেশ টক, তাসি ভিউ পয়েন্ট, রুমটেক মনাস্ট্রি, গঞ্জাং মনাস্ট্রি ঘুরে নিতে পারেন। চাইলে আরও এক-দু’দিন থাকতেই পারেন গ্যাংটকে। দেখার তো শেষ নেই। তবে যদি হাতে বেশিদিনের অবকাশ না থাকে, তাহলে সিকিমকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসুন বাংলায়। তিস্তাকে পাশে রেখে চলে যান কার্শিয়ং। ডাও হিলে একা থাকা সত্যিই রোমাঞ্চকর।




ডাও হিল নিয়ে অনেক ভৌতিক ঘটনার কথা শোনা যায়। একা থাকলে সেই ঘটনাগুলির কথা বেশি করে মনে পড়ে। তবে সাহস করে ঘুরতে পারলে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হয়। ডেথ রোড, ভিক্টোরিয়া স্কুল, পুরনো বন্ধ গির্জায় গা ছমছমে পরিবেশে রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়। ডাও হিলের রাস্তায় একা হাঁটতেও ভারী সুন্দর লাগে। ভোরবেলা কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন পাওয়ার অনুভূতি তো স্বর্গীয়।


কীভাবে যাবেন?


এখন করোনা পরিস্থিতিতে সব ট্রেনই স্পেশাল। দার্জিলিং মেল, হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস ধরতে পারেন। বাসেও যেতে পারেন। ধর্মতলা থেকে বাস যাচ্ছে শিলিগুড়ি।


কোথায় থাকবেন?


গ্যাংটক, কার্শিয়ঙে নানা বাজেটের অসংখ্য হোটেল আছে। এখন পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কম বলে গিয়েও ঘরে পেয়ে যেতে পারেন। তবে ইচ্ছা হলে বুকিং করেও যেতে পারেন।




ঘোরার জন্য গাড়ি ভাড়া পাবেন। একা গেলে গাড়ি ভাড়া কিছুটা বেশি পড়তে পারে।


মোমো তো খাবেনই, সঙ্গে স্থানীয় কিছু খাবারও খেতে পারেন।