কলকাতা: ইসলাম (Islam) ধর্ম অনুযায়ী দুই ইদ পালনের রীতি রয়েছে। রমজানের (Ramadan) পর পালন করা হয় ইদ-উল-ফিতর হয় এবং জিলহজ্জ মাসে হজের সময় পালন করা হয় ইদ-উল-আজহা (প্রকান্তরে ইদুজ্জোহা)। এই দিনটিকে- বকরি ইদ বা কুরবানি ইদ-ও বলা হয়ে থাকে। আরবি ‘কুরবান’ থেকে এসেছে এই নাম। ফারসি ভাষায় এর অর্থ- 'নৈকট্য'। পরম করুণাময়ের নিকটে যাওয়ার জন্যই কুরবানি শব্দের ব্যবহার দেখা যায় কোরানে।

  


এই দিনে পশুকে কুরবানি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। যদিও কোরানে কুরবানি সম্পর্কে যা বলা রয়েছে, তা হল- “মাংস বা রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌঁছয় না, পৌঁছয় সকলের মনের পবিত্র ইচ্ছা।” পরম শক্তিমানের কাছে আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের প্রতীকী স্বরূপ এই নিয়ম, এমনটাই মেনে আসা হয়। 


আল-মুমতাহিনা আয়াত ৪-এর 'কুরবানি' বর্ণনা


এ কুরবানি কেবল পশু কুরবানি নয়। নিজের পশুত্ব, নিজের ক্ষুদ্রতা, নীচতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহংকার ত্যাগের কুরবানি। নিজেদের মধ্যে লুক্কায়িত পশুত্বতে বিসর্জন দিতে হবে। আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণকারী ও আত্মত্যাগী হ’তে হবে। এটিই হ’ল কুরবানির শিক্ষা।


এর নেপথ্যে রয়েছে এক ইতিহাসও


কোরানে আছে, নবি ইব্রাহিম আল্লাহ-কে কতটা ভালবাসেন তার একটা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আল্লাহ। স্বপ্নে ইব্রাহিমকে বললেন- তোমার সব চাইতে প্রিয় জিনিসটি আমাকে উৎসর্গ করো। পর পর তিন রাত ইব্রাহিম একই স্বপ্ন দেখলেন। এমন স্বপ্নসমূহ দেখবার পর তিনি চিন্তা করতে লাগলেন তাঁর সব চাইতে প্রিয় জিনিস কী হতে পারে! তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তাঁরই পুত্র ইসমাইল। ইব্রাহিম তাঁর সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কুরবানি দিতে উদ্যত হলেন। এই আত্মত্যাগকেই জীবনের পরম শিক্ষা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।


'কাজীর' কলমে ইদ 


কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘তোরা ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে, ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ’। কবির ভাবার্থে, হৃদয়ে যদি কোন পশু সূলভ আচরণ থাকে সেই পশুত্বকে হত্যা করতে হবে। ভোগের মতো রিপুকে ত্যাগ করে জীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে পরম করুণাময়ের প্রতি সকল কিছু নিবেদন করে। এই আত্মত্যাগই জীবনের পাথেয় হয়ে ওঠে। 'কুরবানি' কবিতার ছত্রে ছত্রে সেই অর্থই ফুটে উঠেছে বারংবার। 


" ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন
ঐ খুনের খুঁটিতে কল্যাণকেতু লক্ষ্য ঐ তোরণ
আজি আল্লাহর নামে জান কোরবানে
ঈদের পূত বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন "


 


 


তথ্যসূত্র- 



  • "Important Rules and Guidelines Regarding Qurbani"। Muslim Aid

  • Dictionary of the Turkic languages : English, Azerbaijani, Kazakh, Kyrgyz, Tatar, Turkish, Turkmen, Uighur, Uzbek। Öztopçu, Kurtuluş, 1950-। London: Routledge

  • কোরআন ৩৭:১০০-১১২ অনুবাদ গিরিশ চন্দ্র সেন