কলকাতা : ফ্যাটি লিভার কেন হয় ? কাদের হয় ? আর হলেই বা কতটা বিপদ ? মদ্যপান না করলেও কি ফ্যাটি লিভার হতে পারে ? প্রশ্ন অনেক। সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এবিপি লাইভ কথা বলেছিল শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে। কারণ ফ্যাটি লিভারের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। যার জন্য অনেকটাই দায়ী আমাদের জীবনযাত্রা। লিভারে যখন অতিরিক্ত মেদ জমা হয়ে যায়, তখনই তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে শুরু হয় হাজারো গোলমাল। প্রথম থেকে চিকিৎসা না করালে ফ্যাটি লিভার সিরোসিস অফ লিভারের কারণও হতে পারে।

  

ফর্টিস হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিভাগের প্রধান হেপাটলজিস্ট ডা. দেবাশিস দত্ত আমাদের জানালেন, ফ্যাটি লিভারের সমস্যা এখন খুবই কমন । কোনও কারণে আলট্রা সনোগ্রাফি করলে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে। দেখা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার থেকে হতে পারে লিভার ড্যামেজ। এবার কোন কোন লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে?


 ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, পেট ফুলে যাওয়া ( Abdominal swelling), ত্বকের নিচে থাকা ব্লাড ভেসেল ফুলে যাওয়া  (Enlarged blood vessels just beneath the skin's surface), প্লীহা বেড়ে যাওয়া ( Enlarged spleen) , হাতের পাতা লাল হয়ে যাওয়া (Red palms), অনেক ক্ষেত্রে চোখে হলুদ ভাব (Yellowing of the skin and eyes) এর মতো সমস্যা হলে আলট্রা সনোগ্রাফি করে দেখতে হবে লিভারে অতিরিক্ত মেদ সঞ্চয় হয়েছে কি না । 


কেন হয় ফ্যাটি লিভার, ডা. দেবাশিস দত্ত  জানালেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। 



  • ওবেসিটি থাকলে

  • ডায়াবেটিসের রোগী হলে 

  • হাই কোলেস্টেরল থাকলে 

  • অতিরিক্ত মদ্যপান করলে 

    অনেক ক্ষেত্রেই ফ্যাটি লিভার প্রথম স্তরে কোনও উপসর্গ নিয়ে আসে না। কিন্তু বহুদিন পর হয়ত বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়। হয়ত কারও পেটে জল জমে গেল, কিংবা রক্তবমি হতে শুরু করল। তারপর বিভিন্ন পরীক্ষার পর দেখা গেল, তাঁর ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার ড্যামেজ শুরু হয়ে গিয়েছে।  

    কীভাবে ফ্যাটি লিভার থেকে লিভারের ড্যামেজ আটকানো যাবে ? এর প্রথম শর্তই হল ওজন কমানো ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করা। এর প্রথম কয়েকটি ধাপ হল - 

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে ফ্যাট ও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে আনতে হবে। 

  • কম কম খেতে হবে , বারবার খেতে হবে । 

  • খাবার থেকে মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। 

  • তেল ঘি , মাখন, মার্জারিন, মেয়োনিজ, ইত্যাদি দুগ্ধজাত ফ্যাট গ্রহণ করা যাবে না। 

  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

  • অনেক ওষুধ পাওয়া যায়, যা একসঙ্গে ব্লাড সুগার ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

  • খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে এনতে হবে। 

  • Alcoholic fatty liver disease : অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে যে অতিরিক্ত ক্যালরি । শরীরে জমা হয়, তার থেকে লিভার স্থূল হয়ে যায়।লিভারের কোষগুলি অতিরিক্ত ফ্যাটের ভাণ্ডার হয়ে ওঠে।

  • কার্বোহাইড্রেটের পরিমানও কমিয়ে আনতে হবে। ভাত-রুটি ও ময়দা জাতীয় খাবারের বদলে তরি তরকারি, ডাল, ডিম, মাছ খাওয়া যেতে পারে।  
     ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানালেন,  ফ্যাটি লিভারের সমস্যা ফেলে রাখলে, সুগার, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদির সমস্যা বাড়ে। হার্টের অসুখ হতে পারে। কিডনির অসুখও হতে পারে। আনুসঙ্গিক অসুখও হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখলেই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট দেখান। ফ্যাটিলিভার পরিমাপ করার জন্য ফাইব্রোস্ক্যান বা ইলাস্ট্রোগ্রাফি ( Fibroscan বা Transient Elastography) করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা স্টেজ ওয়ান ও টু তে থাকলে তা এক্সারসাইজ ও ডায়েটের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। কিন্তু আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলে কিন্তু ফাইব্রোসিসও হতে পারে।