কলকাতা: শিখ (Sikh) ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম ধর্মগুরু গুরু নানক (Guru Nanak) দেব ১৪৬৯ সালে কার্তিক পূর্ণিমার দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাই প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমায় গুরু নানক জয়ন্তী পালিত হয়। চলতি বছর ৮ নভেম্বর নানক জয়ন্তী পালিত হবে। শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই তিথিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রকাশ উৎসব ও গুরু পর্ব বলা হয়ে থাকে। শিখ ধর্মাবলম্বীরা পূর্ণিমার দুদিন আগে থেকে উৎসবে মেতে ওঠেন।


৮ নভেম্বর কার্তিক পূর্ণিমার দিন এই বিশেষ তিথিটি পড়েছে। এই তিথি গুরু নানকের জন্মতিথি। এ বছর তাঁর ৫৫৩ তম জন্মদিবস। এদিন বিশ্ব জুড়ে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ গুরু নানককে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। দুদিন আগে থেকেই, মানে ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই টানা গুরু গ্রন্থসাহিব পাঠ শুরু করা হয়। আর নানক জয়ন্তীর ২৪ ঘণ্টা আগে একটি নগরকীর্তনের আয়োজন করা হয়। চলে মন্ত্রপাঠ ও ভজনগান। 


কার্তিক পূর্ণিমার দুদিন আগে থেকে প্রকাশ উৎসবের অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম দিন অখণ্ড পাঠ করা হয়। এ সময় গুরুদ্বারা ফুল ও আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। প্রধান দিন অমৃত বেলায় এই উৎসব শুরু হবে। সকালে ভজন করার পর কাহিনি পাঠ এবং কীর্তন করা হয়ে থাকে। প্রার্থনার পর লঙ্গর বা ভান্ডারা করা হয়। লঙ্গরের পর কথা ও কীর্তনের পাঠ জারী রাখা হয়। রাতে গুরবাণী গায়নের পর উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। গুরু নানক জয়ন্তীর শুভ দিনে শিখ সম্প্রদায়ভুক্তরা নানান স্থানে লঙ্গরের আয়োজন করেন। এখানে শুদ্ধ ও নিরামিষ খাবার যেমন কড়ি, চাল, লুচি, আলু, দাল রুটি এবং পায়েস খাওয়ানো হয়।


প্রসঙ্গত, ঈশ্বরের সাধন-ভজনের পাশাপাশি ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে প্রায় সারা ঘুরেছেন নানকজি। তাঁর এই ভ্রমণ 'ভাই গুরদাস' নামে পরিচিত। সুলতানপুর লোধি থেকে যাত্রা শুরু করে তিনি প্রথম পর্যায়ে পা রাখেন হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি বাংলাদেশেও। দ্বিতীয় ভ্রমণকালে সমস্ত দক্ষিণ ভারত দেখার পর তিনি পৌঁছে যান শ্রীলঙ্কায়।                                  


তৃতীয় পর্যায়ে তিনি পৌঁছোন হিমালয়ের ধর্মীয় স্থান, তিব্বত, লাদাখ, কাশ্মীর এবং পাকিস্তানে। বিশ্বোর পশ্চিম অংশে ভ্রমণের সময়েই নানকজি বেশ কিছুদিন বিশ্রাম নিয়েছিলেন কর্তারপুরে। কথিত আছে, নারওয়াল জেলার অন্তর্গত এই কর্তারপুরেই জীবনের শেষ ১৮টি বছর কাটিয়েছিলেন গুরু নানক। তাঁর দেহাবসানের পর সেখানে নির্মিত হয়েছে কর্তারপুর গুরুদ্বার শ্রী দরবার সাহিব বা কর্তারপুর সাহিব। আজও বিশ্বের সমস্ত শিখধরমাবলম্বীদের কাছে অন্যান্য গুরুদ্বারের মধ্যে এটি অন্যতম জনপ্রিয় ধর্মস্থান।