জেনিভা: কম করেও বিশ্বের (WORLD) ১০০ কোটি (1 billion) মানুষ কোনও না কোনও মানসিক সমস্যায় (mental health condition) ভুগছেন, উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এল ল্যান্সেট কমিশনের (Lancet Commission) রিপোর্টে (report)। অঙ্কটা অন্য ভাবে দেখলে, বিশ্বের প্রতি আট জনের এক জন মনের সমস্যার শিকার, বলছে ওই রিপোর্ট। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে এই পরিসংখ্যান।
কী রয়েছে রিপোর্টে?
The Lancet Commission on Ending Stigma and Discrimination in Mental Health রিপোর্টটি তৈরি করে। আজ, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য় দিবসে, সেটি প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতেই বেশ কিছু উদ্বেগজনক প্রবণতা উঠে এসেছে। যেমন গোটা বিশ্বে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মনের সমস্যায় ভোগার হার সার্বিক গড়ের থেকে বেশি। এই বয়সীদের প্রতি সাত জনের এক জন মানসিক সমস্যায় ভোগে, বলছে রিপোর্ট। এতেই শেষ নয়।
কী বলছে রিপোর্ট?
- কম করে বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ কোনও না কোনও মনের সমস্যায় ভুগছেন
- অর্থাৎ প্রতি ৮ জনে ১ জন কোনও না কোনও সমস্যার শিকার
- ১০-১৯ বছরের মধ্যে মনের সমস্যায় ভোগার হার প্রতি ৭ জনে ১ জন
- রোগের থেকেও বড় সমস্যা সামাজিক বিশ্বাস ও কলঙ্কের ভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই
- মনোরোগ নিয়ে ভিত্তিহীন সামাজিক বিশ্বাস ও কলঙ্ক দূর করতে ৮ দফা কৌশল বলা হয়েছে ল্যান্সেটের রিপোর্টে
করোনা অতিমারী যে বছরে আঘাত হেনেছিল, সে বছরে অবসাদ এবং উদ্বেগজনিত সমস্যা প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে যায় বলে ধরা পড়েছে এই রিপোর্টে। তবে এই সমীক্ষার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন সেই গবেষকদের চিন্তার মূল কারণ অন্য। তাঁরা মনে করছেন, মানসিক সমস্যার শিকার ব্যক্তিদের একই সঙ্গে দুটো লড়াই করতে হয়। প্রথমত, লড়াই চলে সমস্যা বা রোগটির সঙ্গে। আর দ্বিতীয় লড়াইটি করতে হয় মনোরোগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মান্ধাতার আমলে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং সামাজিক কলঙ্কের ভয়ের বিরুদ্ধে। দুইয়ে মিলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হয় বহু ক্ষেত্রে।
কলঙ্কের ভয়...
বিশ্বের নানা প্রান্তে আজও মনোরোগীদের সামাজিক ভাবে অন্য চোখে দেখার প্রবণতা জোরালো। বস্তুত, মনোরোগ বা মনের যে কোনও সমস্যা নিয়ে আলোচনাই সেখানে নিষিদ্ধ বিষয়। কাজেই কারও মানসিক সমস্যার কথা জানাজানি হলে তাঁকে শিক্ষা, চাকরিক্ষেত্রে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। ন্যূনতম মানবাধিকারটু সুরক্ষিত থাকে না, এমনও ছবি ভুরি ভুরি।
কমিশন কী বলছে?
কমিশনের সহ-প্রধান অধ্যাপক, স্যার গ্রাহাম থরনিক্রফটের মতে, মনের সমস্যায় জর্জরিত বহু মানুষ এই সমীক্ষায় জানিয়েছেন রোগটির চেয়ে তাঁদের কাছে এই কলঙ্ক ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন ছিল। তবে আশার কথা একটাই। গবেষণা দেখিয়েছে, এই ধরনের কুসংস্কার, ভিত্তিহীন অন্ধবিশ্বাস এবং অচলায়তনও ভাঙা যেতে পারে। তার উপর নির্ভর করেই ল্যান্সেটের এই কমিশন আটটি কৌশলের কথা বলেছে যা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি মনোরোগীকে সামাজিক একাকীত্ব, কলঙ্কের ভয় থেকে মুক্তি দেবে। ঘটনাচক্রে, এবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের থিম 'Make Mental Health and Wellbeing for All a Global Priority' । সবটা মাথায় রাখলে ল্য়ান্সেটের এই রিপোর্ট আরও গুরুত্ব পাচ্ছে বিশেষজ্ঞমহলে, সঙ্গে দিশাও দেখাচ্ছে।
আরও পড়ুন:পুজোর মরসুমে কমল কোভিড সংক্রমণ, থামল না মৃত্যু