লন্ডন : এমনিতেই একবার চলে গেলে অপেক্ষা করতে হয় চার-চারটে বছর। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। অলিম্পিক গেমসের কথাই বলছি। সেই চার বছর অপেক্ষা করার পর ২০২০-তে হওয়ার কথা ছিল অলিম্পিক্স।
কিন্তু করোনা অতিমারির জেরে টোকিও অলিম্পিক্সকে পিছিয়ে দেওয়া হয় গোটা একটা বছর। অর্থাৎ, এবার আর চার বছর পর নয়, একেবারে পাঁচ বছর পর বসতে চলেছে খেলাধুলোয় বিশ্বের সবথেকে বড় আসর। অপেক্ষার প্রায় অবসান। রাত পোহালেই শুরু হয়ে যাবে টোকিও অলিম্পিক্স। আপনার মনটা যখন আনন্দে নেচে উঠছে এটা জেনেই, ঠিক সেই সময় আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন হু-র (ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন) প্রধান ডক্টর তেদ্রোস আধানম ঘিভ্রেসাস। তিনি যা বলছেন, তাতে শিউরে উঠতে হয় বৈকি। কারণ, তাঁর মতে আজ থেকে শুরু করে অলিম্পিক গেমস যখন শেষ হবে, তখন বিশ্বজুড়ে করোনা অতিমারিতে মারা যাবে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ! তাঁর মতে, যাঁরা এখনও মনে করছেন করোনা অতিমারির প্রকোপ শেষ হয়ে গিয়েছে, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।
ডক্টর তেদ্রোস বলেছেন, 'সবথেকে ভয়ঙ্কর অন্যায় হল ৭৫ শতাংশ ভ্যাকসিন সারা বিশ্বের মাত্র ১০ টা দেশে গিয়ে পৌঁছেছে। বাকি দেশগুলোতে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিমাণ অনেক-অনেক কম। ইতিমধ্যে ৪০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। আরও মারা যেতে চলেছে। খেয়াল করে দেখবেন, গত বছরে মৃত্যুর সংখ্যা যা ছিল, চলতি বছরে ইতিমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, ৮ অগাস্ট অলিম্পিক্স শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে আরও ১ লক্ষ মানুষ বিশ্বজুড়ে মারা যাবে।' প্রসঙ্গত, ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন নিজেদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে যে, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে যেন এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশ তাদের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকেই ভ্যাকসিন দিয়ে দিতে পারে। সেইজন্য আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১১ বিলিয়ন ভ্যাকসিনের জোগান দিতে হবে ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থাগুলোকে।
ডক্টর তেদ্রোস আরও বলেছেন, 'অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, এই করোনা অতিমারির প্রকোপ কবে কমবে। আমি তাঁদের বলি, এটা গোটাটাই আমাদের হাতে। করোনা পৃথিবীবাসীর কাছে একটা নতুন ধরনের পরীক্ষা ছিল। আর আমরা সেই পরীক্ষায় ফেল করেছি। অলিম্পিক গেমসের মশাল তো আসলে আশার প্রদীপ। অলিম্পিক্সই পারে গোটা পৃথিবীকে একসূত্রে বাঁধতে। আশা করবো, অলিম্পিক্সের পর থেকে পৃথিবীর সবদেশগুলো নিয়ম মেনে করোনাকে দূর করবে। পৃথিবীটা আবার আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সুরক্ষিত হবে।'