সন্দীপ সরকার, অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা : আপাতত চোখরাঙানি নেই করোনার ( Coronavirus )  । কিন্তু, চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার মতো রূপ বদলে ভয়ঙ্কর হচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাসও। আর সে কারণেই, পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে না অনেক শিশু।

চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যাডিনো ভাইরাসে ( Adenovirus )  আক্রান্ত অনেক শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর, তাঁদের ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনকী ICU থেকে কোনও শিশুকে জেনারেল বেডের দেওয়ার পরও, তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তখন কাউকে কাউকে আবার ভেন্টিলেশনেও রাখতে হচ্ছে।

নতুন করে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট ( Breathing Problem ) । চিকিৎসকের অনেক বলছেন, করোনার মতো অ্যাডিনো ভাইরাসও ভ্যারিয়েন্ট বদলে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি জানাচ্ছেন, ' যারা আইসিইউ থেকে বের হচ্ছে, এর অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য সংক্রমণ ফুসফুসকে আক্রমণ করছে। ২০১৮ তে যখন মহামারী হয়েছে, তখনও এরকম হয়েছিল। অসুখ সেরেও সারছে না। ' 

আরও পড়ুন :


 'নিজেদের কুকীর্তি ঢাকতে হৈমন্তীর নাম ভাসিয়েছে কুন্তল', এবিপি আনন্দে এক্সক্লুসিভ প্রতিক্রিয়া গোপাল দলপতির


শিশুদের নিয়ে যখন চিন্তার শেষ নেই, তখন বড়দের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্বেগ। চিকিৎসকদের চেম্বারে অনেকেই আসছেন, যাঁরা প্রায় এক মাসের উপর কাশির সমস্যায় ভুগছেন। তাহলে কি এবার শিশুদের পাশাপাশি, বড়দের শরীরেও বাসা বাঁধছে অ্যাডিনো ভাইরাস? ফুসফুস বিশেষজ্ঞ  পার্থসারথি ভট্টাচার্য অবাক হয়ে বললেন, 'গত ২৫ বছর ডাক্তারি করছি, এরকম দেখিনি। কাশি সারছে না, কারণ ধরা যাচ্ছে না। বড়দেরও অ্যাডিনো ভাইরাস কি না, জানার জন্য টেস্ট করতে হবে।'

অ্যাডিনো-উদ্বেগের মধ্যে শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে, বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে কলকাতা পুরসভাও। স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে, কোনও অসুস্থ শিশু, পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলে, অভিভাবকদের কাছ থেকে অসুস্থতা প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে হবে মেডিক্যাল আধিকারিকদের। শারীরিক অবস্থা বুঝে শিশুটির চিকিৎসা বাড়িতে রেখে হবে, না হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন রয়েছে, তার সিদ্ধান্ত নেবেন মেডিক্যাল অফিসাররাই।

স্বেচ্ছাসেবক স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেবেন। যদি কোনও শিশু অসুস্থ থাকে, তাহলে তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে।নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়া ফার্মাসিস্টরা যেন কোনও ওষুধ না দেন। ল্যাবরেটরিতে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানো হবে। শিশু অসুস্থ হলে যে বাড়িতে রাখা যাবে না, তাও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। শিশু জ্বরে আক্রান্ত হলেই কাছের কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অসুস্থ শিশুকে কোনও ভাবেই, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

কেউ অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা জানতে PCR টেস্ট করাতে হয়। বেসরকারি সংস্থায় যে টেস্টের খরচ ৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই যা অনেকের পক্ষেই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই সচেতনতার উপরেই জোর দিতে বলছেন চিকিৎসকরা।