কলকাতা: বয়স যত বাড়তে থাকে, শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়তে থাকে। যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে ভারতেও বয়স্কদের মধ্যে 'ভুলে যাওয়ার' একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এর প্রধান কারণ- অ্যালঝাইমার্স। (Alzheimer's Disease)
এই সেপ্টেম্বর মাসকে অ্যালঝাইমার্স সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে অ্যালঝাইমার্স সচেতনতা দিন হিসেবে পালন করা হয় বিশ্বের একাধিক দেশে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ভারতে ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের ৭.৪ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। (Alzheimer month)
এই রোগটি কী? কাদের হয়?
হাওড়ার আইএলএস হাসপাতালের চিকিৎসক নদী চৌধুরী (কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট) জানান, অ্যালঝাইমার্স রোগ আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি কেন্দ্রে কিছু অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হওয়ার ফলে ঘটে এবং তাই বিস্মৃতি তৈরি হয়। এর বিভিন্ন জেনেটিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক কারণ থাকতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতার মতো হৃদরোগ বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে অ্যালঝাইমার্সের। এছাড়াও জেনেটিক ফ্যাক্টরও রয়েছে। এর অর্থ যদি আপনার বাবা-মা বা ভাইবোনেরা এতে ভোগেন, তাহলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (Alzheimer's Day)
এই রোগের লক্ষণগুলি কী কী?
প্রাথমিক লক্ষণগুলি ভুলে যাওয়া হতে পারে- যেমন জিনিসগুলিকে ভুল জায়গায় রাখা, মনোযোগের অভাব এবং উদ্বেগ এবং হতাশার মতো মেজাজের সমস্যাগুলিও এই রোগের লক্ষণ।
শুধু ভুলে যাওয়া নয়, এই রোগে শব্দ ভুলে যাওয়া বা একই রকম কিন্তু ভুল শব্দ দিয়ে শব্দ প্রতিস্থাপন করার সমস্যাও তৈরি করতে পারে। ভিসুস্পেশিয়াল সমস্যা, যেমন, হারিয়ে যাওয়া, পরিচিত মুখ চিনতে না পারা এবং এমনকি এই রোগ বাড়তে থাকলে হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
এই রোগটি প্রতিরোধ করা যায়?
চিকিৎসকের কথায়, এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট নিরাময় নেই। অ্যালঝাইমার্স রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে পর্যাপ্ত চিকিত্সার মাধ্যমে কিছুটা কমানো যাতে পারে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতার সমস্যার থাকলে অবশ্য সম্পূর্ণভাবে এই রোগ নিরাময় না-ও হতে পারে।
এই রোগটি ৬৫ বছর বয়সের পর থেকেই সাধারণত দেখা যায়। তবে অ্যালঝাইমার্স যেহেতু জেনেটিক কারণেও হতে পারে, সেক্ষেত্রে ৩৫-৪০ বছর বয়সেও এই রোগ হতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণগুলি নজরে পড়লে তা উপেক্ষা করা উচিত নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক নদী চৌধুরী। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত চিকিৎসা শুরুর কথাও জানান তিনি।