কলকাতা : ডায়াবেটিস ( Diabetes ) । সায়লেন্ট কিলার। দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত মধুমেহর রোগীদের শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকী দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস দৃষ্টিহানিও ঘটাতে পারে। মধুমেহ আক্রান্তরা
- ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি
- ছানি পড়া
- গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন
দৃষ্টিহীনতা ও মধুমেহ :
দৃষ্টিহীনতা অনিয়ন্ত্রিত ব্লাডসুগার থেকে ঘটতেই পারে। শরীরের বিভিন্ন রক্তনালীর ক্ষতি করে মধুমেহ। এর ফলে চোখের রক্তবাহিকাগুলি থেকে রক্তক্ষরণও হতে পারে। মধুমেহ রক্তবাহী সরু ধমনীগুলি দুর্বল করে দেয়। এক ধরনের তরল ক্ষরণ শুরু হয়। দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। এর ফলে ধমনীতে রক্ত চলাচলের সমস্যা তৈরি হয়। রেটিনার বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছতে না পারলে চোখেও রক্তক্ষরণ শুরু হয়, ভিট্রিয়াস হেমারেজে অন্ধত্ব আসতে পারে।
তাই ডায়াবেটিক হলে শুরু থেকেই সতর্ক হতে হবে। দৃষ্টিশক্তির বিন্দুমাত্র সমস্যাও হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত একবার চক্ষু চিকিৎসকের কাছে চোখের পরীক্ষা করাতে হবে। তবেই ভালো থাকা সম্ভব।
দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। ডা. সপ্তর্ষি মজুমদার ( Dr. Saptorshi Majumdar, Consultant in Vitreo- Retina) জানালেন, কিছু কিছু সমস্যা একেবারেই ফেলে রাখা যাবে না। যেমন ,
-
ক্যাটারাক্ট বা ছানি ( Cataracts ) : ছানির সমস্যা একটা বয়সের পর সকলেরই আসে। তবে মধুমেহর রোগীদের ক্ষেত্রে তা আসে একটু তাড়াতাড়ি। কয়েকটি উপসর্গ জানান দেল ছানি পড়েছে। যেমন -
- রাতে দেখার সমস্যা
- চোখে আলো পড়লে কষ্ট
- রং ফ্য়াকাসে লাগা
- ডাবল ভিশন, একই জিনিস দুটি-তিনটি করে দেখেন মানুষ
- আলো চোখে পড়লে মনে হয় ছড়িয়ে যাচ্ছে
- পড়াশোনা করতে বেশি আলো লাগে
- এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। তবু উপসর্গ দেখে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গেলে আগে থেকে ট্রিটমেন্ট শুরু করা যায়।
- অ্যালকোহল ত্যাগ করতে পারলে ভাল
- ধূমপান ছাড়তে হবে
- রোদে সানগ্লাস পরে বের হোন
ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি ( Diabetic retinopathy ) : রেটিনার (Retina) ওপর অসংখ্য রক্তনালি থাকে। এই ব্লাড ভেসেলসগুলো রেটিনাতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়। কিন্তু, ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে এই রক্তনালিগুলো করেমক্ষমতা হারাতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি মারাত্মক আকার নেয়। চোখের রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ হলে ফল কিন্তু মারাত্মক হয়। দৃষ্টি ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে । আবার কিছু ক্ষেত্রে হঠাতই আসতে পারে অন্ধত্ব। তাই ডায়াবেটিস ধরা পড়ার সঙ্গ সঙ্গেই চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে টানা চিকিৎসা প্রয়োজন। দরকারে ওষুধ, ইঞ্জেকশন, রেটিনার অপারেশন পর্যন্ত করতে হতে পারে। তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে দৃষ্টি শক্তি বাঁচানো যায়।
গ্লুকোমা : গ্লুকোমা যে কারও হতে পারে। তবে ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে এর প্রবণতা বেশি। তাই নিয়মিত চেক আপ খুবই জরুরি। গ্লুকোমা অপটিক নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চোখের অভ্যন্তরীণ চাপের জন্য চোখের ভিতরের স্নায়ু নষ্ট হয়। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে দৃষ্টিশক্তির উপর। দেখা যেতে পারে একাধিক ব্লাইন্ড স্পট, যার ফলে নষ্ট হয় দৃষ্টিশক্তি। এই ভয়ঙ্কর প্রভাব এড়াতে নিয়মিত আই চেকআপ করতে হবে।