কলকাতা: মাথার খুলির নিচে একটা ছোট 'ইমপ্লান্ট', ডাক্তাররা বলেছেন ওর নাম নিউরোস্টিমুলেটর। ছোট হলেও অত্যন্ত জরুরি জিনিস। ওটি বসানোর পর থেকে ওরান নলসনের জীবন বদলে গিয়েছে। কারণ ওই 'ইমপ্লান্ট'-র সাহায্য়েই এখন ব্রিটিশ কিশোরের মৃগীর উপসর্গ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। মৃগীতে যে 'seizure' বা খিঁচুনির উপসর্গ অত্যন্ত চেনা, ওরানের মধ্যে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতেই এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে যা কিনা বিশ্বে প্রথম বলে দাবি তাঁর চিকিৎসকদের।


বিশদ...
কিশোর ওরান এখন আবার হাসি ফিরে পেয়েছে, হেড-গিয়ার পরে মাঝেমধ্যে বাই-সাইকেল চালাতেও বেরিয়ে পড়ে সে। ছ'মাস আগে এমন ছিল না ছবিটা। কিশোরের মা, জাস্টিনের কথায়, 'এখন তাও আশার আলো, ভবিষ্যৎ বলে কিছু দেখতে পাচ্ছি।' যেখানে ওরানের এই চিকিৎসা হয়েছিল, লন্ডনের সেই 'Great Ormond Street hospital'-র পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জেন, মার্টিন টিসডল এক বিশিষ্ট ইংরেজি দৈনিককে  বলেন, 'ওঁদের এই অভিজ্ঞতায় সামিল হতে পেরে আমরাও অত্যন্ত আনন্দিত।' কিন্তু ঠিক কী সমস্যা ১৩ বছরের কিশোরের?  Lennox-Gastaut syndrome, external , এই নামে এক ধরনের রোগ ধরা পড়ে সমারসেটের বাসিন্দার। ৩ বছর বয়স থেকেই রোগটির উপসর্গ ধরা পড়েছিল। ডাক্তারেরা জানিয়েছিলেন, এই ধরনের মৃগী বা এপিলেপসি সাধারণত চিকিৎসায় সাড়া দেয় না। ভোগান্তির শুরু সেই তিন বছর বয়স থেকে। তার পর থেকে এমন এক দিনও যায়নি যে ওরানের খিঁচুনি হয়নি। কোনও কোনও সময়ে দিনে একশো বারও খিঁচুনি হয়েছে তার। উপসর্গের ধাক্কায় সংজ্ঞা হারানো তো বটেই, কখনও সখনও শ্বাসও আটকে গিয়েছে কিশোরের। জরুরি ভিত্তিত সিপিআর দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করতে হয়েছে। সবথেকে বড় কথা, এক মুহূর্ত তাকে চোখের আড়াল করার উপায় ছিল না। ডাক্তারদের মতে, মৃগীর কারণে হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা ভীষণ ভাবে বেশি ছিল তার। এহেন পরিস্থিতিতে সার্জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 'Great Ormond Street hospital'-র সঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, কিংস কলেজ হসপিটাল এবং ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড পাশে এসে দাঁড়ায়। মার্টিন টিসডল ও তাঁর টিম মিল সার্জারি করে পিকোসটিন নিউরোস্টিম্যুলেটরটি ওরানের মস্তিষ্কের খুলির একটি হাড় সরিয়ে বসানো হয়। আর দুটি ইলেকট্রোড পৌঁছে দেওয়া হয় মস্তিষ্কের অন্দরে থ্য়ালামাসে। কিশোর সার্জারির ধাক্কা একটু সামলে উঠতেই নিউরোস্টিম্যুলেটরটি অন করে দেওয়া হয়। এখান থেকে এখন টানা হালকা বৈদ্যুতিক সঙ্কেত মস্তিষ্কে পৌঁছতে থাকে। এর লক্ষ্য একটাই। সেই সমস্ত স্নায়ুপথের বৈদ্যুতিক গতিবিধি, যা খিঁচুনির হওয়ার নেপথ্যে সক্রিয়, তাদের আটকে দেওয়া। 


ওরানের মা জানালেন, এই সার্জারিতে ফল মিলেছে। এখন অনেক কম  খিঁচুনি হয়। আগের থেকে তার তীব্রতাও কম। সব মিলিয়ে আগের থেকে অনেক ভাল রয়েছে কিশোর। তবে এই ধরনের চিকিৎসা একটি ট্রায়ালের অংশ হিসেবে হয়েছিল। বড় স্তরে এটির প্রয়োগ সম্ভব কিনা, জানতে হলে আরও গবেষণা জরুরি।


 


আরও পড়ুন:ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে মেদ ঝরাচ্ছেন ? এই ভুলগুলি এড়িয়ে চলুন অবশ্যই