কলকাতা : পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশে এই মুহূর্তে ২৮ জনের একজন ব্রেস্ট ক্যান্সারে (Breast Cancer )আক্রান্ত হন । কিন্তু আরও গভীরভাবে দেখতে গেলে, মহিলারা যদি ৮০ বছর অবধি বাঁচেন, তাহলে প্রতি ৮ জনের একজন করে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন ! অতএব বোঝাই যাচ্ছে , পরিসংখ্যানটা কতটা ভয়াবহ ! বিশেষজ্ঞদের ধারণা ২০৩০ সালের মধ্যে স্তন ক্যান্সার একটি ভয়ঙ্কর জায়গায় গিয়ে পৌছবে।  এই ভয়াবহ তথ্যের মাঝখানেও একটিমাত্র আশার কথা, ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সম্প্রতি এসেছে বড়সড় বিপ্লব ! কলকাতা শহরের সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে-এই চিকিৎসকরা বিপ্লব এনেছেন স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায়। যাতে বহু মহিলা ক্যান্সারের বিভিন্ন স্টেজ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। অর্থাৎ মৃত্যুভয় কমেছে অনেকটাই । এ বিষয়ে বিরাট আশার কথা বললেন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার (Consultant Surgeon, Surgical Oncologist, Breast and Endocrine surgeon.)। 


ক্যান্সার মানেই অবধারিত মৃত্যু - এই ধারণাটা এখনও মানুষের মনে কুরে কুরে খায় । সেই সঙ্গে স্তন ক্যান্সার মানে নারী শরীর থেকে একটি বিশেষ অঙ্গ বাদ পড়ে যাওয়ার আতঙ্ক। ক্যান্সারের সাম্প্রতিক চিকিৎসা পথ দেখিয়েছে কীভাবে স্তন বাদ না দিয়েও (mastectomy) ব্রেস্ট ক্যান্সারের সফলভাবে চিকিৎসা করা যায় এবং একজন নারীকে সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে বাড়ি পাঠানো যায়।



১৮৮০ সালে যখন কেমোথেরাপি চিকিৎসা চালু ছিল না, তখন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে, অঙ্গ বাদ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। শুধুমাত্র ব্রেস্ট নয়, তার নিচের মাংস এবং আশেপাশের গ্ল্যান্ড কেটে বাদ দিয়ে দিতেন চিকিৎসকরা। পড়ে থাকত শুধু পাঁজরাটুকু। যা দৃশ্যত ভয়াবহ !  এরপর সত্তরের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্তন বাদ না দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করার প্রচেষ্টা শুরু হয়।  কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে ২000 সালে প্রথম ব্রেস্ট ক্যান্সারের অপারেশন করা হয় যেখানে কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ স্তন বাদ দিলেও প্রায় ৭0% বাদ না দিয়ে রাখা সম্ভব হল !  কিছুটা অপারেশনের মাধ্যমে বাদ দেওয়া এবং বাকিটা রেডিয়েশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পদ্ধতি সম্প্রতি স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় বিপ্লব এনেছে। 


২০২০ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র সামনে আসে। সাম্প্রতিককালে চিকিৎসকদের কাছে যা অনেকটা ধর্মগ্রন্থের মত! সেখানে প্রমাণিত, স্তন বাদ দেওয়ার থেকে তা বাঁচিয়ে অপারেশন করলে ক্যান্সার চিকিৎসায় ভালো ফল হয় । তাই এই মুহূর্তে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা সাফল্য প্রশ্নাতীত। এ বিষয়ে সফল ভাবে কাজ করছে এসএসকেএম হাসপাতাল। এছাড়া, ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যান্টিবডি ককটেল, যা অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সুফল দিচ্ছে।


সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে যেখানে স্তন ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফেরা সম্ভাবনা ৫0% ছিল, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯0 শতাংশ !! ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল দেবে বলে আশা করছেন চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার।