করোনার প্রথম ঢেউতে রীতিমতো আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রৌঢ় ও বয়স্ক মানুষরা। বিশেষত যাঁদের সহ-অসুস্থতা রয়েছে, তাঁদের কেউ কেউ তো তো রীতিমতো সঙ্কটজনকও হয়েছিলেন। কোমর্বিড মানুষদের উপর করোনা থাবা বসিয়ে প্রাণও কেড়ে নিয়েছিল। সেই জন্যই প্রথম ঢেউয়ের পর যখন ২০২১ এর শুরুতে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয় , তখন ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কারদের ঠিক পরেই ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন কোমর্বিড ও বয়স্ক মানুষরা।২০২২ এর শুরুই হল তৃতীয় ঢেউ নিয়ে। ২১-এ ছিল ডেল্টার থাবা, ২২ এর ঢেউ ওমিক্রনিক। এই ঢেউ যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে কতটা সঙ্কটজনক হতে পারে বয়স্কদের জন্য? আগের ঢেউয়ের মতো কী এবারও ভরে উঠেছে বা ভরে উঠতে পারে হাসপাতাল, আইসিইউ , একমো বিভাগ ? এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কুণাল সরকার (Senior Vice Chairman, Director and Head of Cardiac Surgery at Medica Superspecialty Hospital)। 

ফুসফুসে আঘাত হানছে না ওমিক্রন

প্রথমেই আশার কথা শোনালেন তিনি। বললেন, ওমিক্রনের ঢেউতে এখনও পরিস্থিতি তেমন নয়। সেটা হবে এমনটা আশাও করছেন না। ডা. সরকার বললেন, ' এবার ওমিক্রনের ঢেউ ফুসফুসে হানা দিচ্ছে না। বরং ঘোরাফেরা করছে, মুখ ও আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে। তাই ফুসফুসে আঘাত হানছে না। তাই ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়া, অক্সিজেন স্যাচুরেশনে সমস্যা হওয়ার মতো ঘটনা এই ঢেউতে ঘটছে না বললেই চলে। সাধারণত আক্রান্তদের সিটিস্ক্যান রিপোর্টও ভাল আসছে। 


ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

এখন ওমিক্রন ঢেউয়ের মধ্যেই যদি কেউ ডেল্টা দ্বারা আক্রান্ত হন, তাঁর যদি সিটি স্ক্যান রিপোর্ট খারাপ আসে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ড্রপ করে, তাহলে ভাবতে হবে । সেক্ষেত্রে আইসিইউ-র প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেটা কম সংখ্যকই। সেই ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে দৌড়তে হচ্ছে, বা একমো সাপোর্ট লাগছে, এমন দৃষ্টান্ত কম। 


কোমর্বিডিটি 

যাঁরা কোমর্বিড তাঁদের ঝুঁকি তো সবসময়ই থাকে। এর আগে যখন ফ্লু বা নিউমোনিয়ায় একটা বড় সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হত, তখনও কোমর্বিড মানুষরা বেশি ঘায়েল হতেন । মারাও যেতেন। নরম মাটিতে আঘাতের দাগ তো বেশ হয়ই। তাই সহ-অসুস্থতা থাকলে কোভিডের প্রভাব তাদের উপর বেশি পড়তেই পারে। তবে দেখতে হবে কতটা কোমর্বিড তিনি, তাঁর শরীরের আনুসঙ্গিত সমস্যাগুলি কতটা প্রখর। খুব বেশরকম কোমর্বিড যাঁরা, তাঁদের ক্ষেত্রেই চিন্তার কারণ হতে পারে এই ঢেউ। এখনও পর্যন্ত ট্রেন্ড তাই বলছে। 

আরও পড়ুন:


শিশুদের জ্বর-সর্দি, অথচ করোনা পরীক্ষা করাননি? বড় বিপদ ডেকে আনছেন




হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা 

এই ঢেউতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ আক্রান্তের হসপিটালাইজেশন প্রয়োজন হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব অনুসারে। রাজ্যের হিসেবে মোটামুটি  ৩-৪ শতাংশ আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি । তবে  যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ বয়স্ক বা কোমর্বিড। 



কারা বেশি সমস্যায় পড়ছেন 

ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ-প্রাচীর সহজেই এড়িয়ে যাচ্ছে ওমিক্রন। তবু হিসেব বলছে সমস্যা বেশি হচ্ছে  হাসপাতালে থাকা নন-ভ্যাকসিনেটেড মানুষদের ক্ষেত্রে । নিউইয়র্ক থেকে আসা পরিসংখ্যান বলছে, ওমিক্রনের প্রভাব ভ্যাকসিনেটেড ও ভ্যাকসিন-নেওয়া-নেই এমন মানুষদের মধ্যে অনেকটাই আলাদা।

' তবে একটা কথা মনে রাখতেই হবে আমাদের দেশের জনসংখ্যা বিপুল। এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার যদি একটা ছোট অংশই হাসপাতালে ভর্তির মতো অবস্থায় পৌঁছায় তাহলে কিন্তু সেটা সংখ্যার দিক থেকে ভয়াবহ হয়ে যাবে। সেই জন্যই যে কোনও জমায়েত এড়ানোর পক্ষপাতী আমরা।' বললেন ডা. কুণাল সরকার।