কলকাতা : হাসপাতালে হাসপাতালে বেড এর অভাব । চরম অক্সিজেন সংকট । রোগীর পরিবারের হাহাকার । 'অক্সিজেন অক্সিজেন' আকুতির মাঝেই চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া ! মাস দুয়েক ধরে এই দৃশ্য বারবার উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমে।  প্রতিদিনই কোনও না কোনও খারাপ খবরে ঘুম ভাঙছে মানুষের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেন রাহুগ্রাসের মতো ভয়ঙ্কর !! 


আতঙ্ক দানা বাঁধছে, করোনা হলেই যদি প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ? কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে ক্রাইসিস ? কিন্তু কোনভাবেই কি শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার আগে সতর্ক হওয়া যায় না ? কিংবা হঠাৎ শ্বাসের সমস্যা হলে কি উপায় মিলবে স্বস্তি ?


শ্বাসকষ্ট হঠাত্ করেই শুরু হয় না। তার আগেই কমতে শুরু করে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রার। সেটা নজরে রাখলে বিপদ ঘনিয়ে আসার আগেই হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করে ফেলা যায়। এ বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী (ECMO physician and Critical Care Consultant)। তিনি জানালেন করোনা আক্রান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় না । শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার আগে থাকতে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ড্রপ করবেই ! সেই বিষয়টি অনেক  ক্ষেত্রেই রোগীর নজর এড়িয়ে যায়। তাই হয়তো শ্বাসকষ্ট যখন প্রবল হয়ে উঠছে সেই সময়ে মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে মানুষকে।


Fighting Covid Exclusive : দিন দশেক যমে-মানুষে লড়াই, তারপর মৃত্যুকে হারিয়ে জীবনে ফেরা


চিকিৎসক চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যেতে শুরু করে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই। কিন্তু রোগী সেটা টের পান না । শুরুতেই শরীরে বিশেষ কোনও সমস্যা দেখা দেয় না । যাকে বলে হ্যাপি হাইপক্সিয়া সিচ্যুয়েশন।  কিন্তু অক্সি মিটার রিডিং ধরে রাখলেই ধরা পড়বে ঠিক কখন রোগীর শরীরে স্যাচুরেশন কমতে শুরু করল ।


এবার প্রশ্ন অক্সিমিটারে স্যাচুরেশন মাপার নিয়ম কী। চিকিত্সক অর্পণ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, হয়তো দেখা গেল একজন করোনা আক্রান্ত বসে বসে স্যাচুরেশন মাপলেন। তখন রিডিং এল ৯৫। এরপর একটু হাঁটাচলা পরিশ্রম করার পর আবার রিডিং নিতে হবে।  দেখতে হবে দুই ক্ষেত্রেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫ এর উপর থাকছে কি না ।

চিকিৎসকের মতে, এই দুই ক্ষেত্রেই অক্সিমিটার রিডিং ৯৫ এর উপর হতেই হবে। যখনই দেখা যাবে অক্সিমিটার রিডিং ৯৪ এর কম হতে শুরু করেছে, তখনই সতর্ক হতে হবে। পারলে ঘন্টায় ঘন্টায় রিডিং নিতে হবে। কম হলেই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।  হাসপাতালগুলিতে খোঁজ নিন ।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে কথাবার্তা অসংলগ্ন হতে শুরু করলে মারাত্মক। এই উপসর্গ খুবই দেখা যাচ্ছে।  এইসময় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধান হতে হবে।  লক্ষণগুলি অবহেলা করা মারাত্মক হতে পারে। কখন শ্বাসকষ্ট বাড়বে, তখন হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে, এমন ভেবে গা-ফিলতি করে থাকেন অনেকেই। যা একজনের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।  করোনার প্রভাবে ইউরিনেশন কমে যাওয়াও খুব সাধারণ সমস্যা।বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে সুগার-প্রেসারের ওঠানামাতেও। তাই বাড়িতে সুগার বা রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রাখলে ভাল।

করোনা আক্রান্ত হলে কয়েকটি বিষয়ের উপর রোগীকে বিশেষ নজর রাখতে হবে



  • একটু কাজ করার পরই কি শরীর অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে হাঁপিয়ে উঠেছেন টানা কথা বলতে গেলে ক্লান্ত লাগছে ?

  • এক নিঃশ্বাসে ১ থেকে ৪০ গুনতে পারছেন কি ? স্থির হয়ে বসে আপনি যদি এক নিশ্বাসে কুড়ি অবধিও না গুণতে পারেন, তবে জানবেন আপনার শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন এর সমস্যা হচ্ছে ।

  • যেই মুহূর্তে দেখবেন, অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসছে তখনই কমপ্লিট বেড রেস্টে চলে যেতে হবে ।

  • এক্ষেত্রে কি বাড়িতে আগেভাগেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা রাখা উচিত?  ডাক্তারদের পরামর্শ বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রেখে বাজারে ঘাটতি সৃষ্টি করা একেবারেই উচিত নয়। এতে যাদের অত্যন্ত প্রয়োজন অক্সিজেন তারা বঞ্চিত হবে।

  • শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে হাসপাতালে ব্যবস্থা করতে কিছুটা সময় লেগে যায় । সেই সময় অবশ্যই প্রোনিং করতে পারেন । অর্থাৎ বিছানার উপর উল্টো হয়ে শোয়া । ডাক্তার অর্পণ চক্রবর্তী জানালেন শরীরের নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট আছে । প্রোনিং করলে কিছু নির্দিষ্ট টিস্যু যা অন্যান্য সময় বিশ্রামে থাকে সেগুলো কর্মঠ হয়ে ওঠে । স্যাচুরেশন কম মনে হলে বিছানায় বুকের উপর শুয়ে থাকলে রোগী কিছুটা স্বস্তি বোধ করেন । এই সময়ের মধ্যে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা কিংবা অক্সিজেন জোগাড় করে ফেলতে হবে।