নয়াদিল্লি: প্রকোপ কেটেছে অতিমারির, কিন্তু মানবশরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাব রয়ে গিয়েছে আজও। আগামী দিনে আরও বড় বিপদ নেমে আসতে পারে বলে আবারও উঠে এল সতর্কবার্তা। করোনার নেপথ্যে যে SARS-CoV2ভাইরাস থাকে, তাতে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কেক স্বাস্থ্যে নানা ভাবে প্রভাব পড়ে বলে জানাল নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে অফ মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত নয়া গবেষণাপত্র। (COVID Impacts Brain Health)
ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অতিমারির একেবারে সূচনাপর্ব থেকেই মস্তিষ্কে ধোঁয়াশা বা ‘ব্রেন ফগ’-এর সমস্যায় ভুগতে দেখা গিয়েছে বহু করোনা রোগীকে। SARS-CoV2 ভাইরাস মস্তিষ্কের প্রভূত ক্ষতি করে বলে এবার প্রমাণ মিলেছে হাতেনাতে। হালকা উপসর্গ ছিল যাঁদের এবং দীর্ঘদিন ভুগেছিলেন যাঁরা, এমন কোভিড রোগীদের নিয়ে গবেষণা চালানো হয়, তাতে দেখা গিয়েছে, একধাক্কায় মস্তিষ্কের বয়স সাত বছর বেড়ে গিয়েছে। (COVID After Effects)
এর আগেও একাধিক গবেষণায় কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কথা উঠে এসেছে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকেও কোভিড প্রভাবিত করেছে বলে জানানো হয়। নয়া গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কোভিডের প্রভাব এতটাই মারাত্মক ছিল যে রোগীদের মধ্যে একাধিক স্নায়বিক ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সমস্যাও। কোভিডে সংক্রমিত হওয়ার আগে এবং পরের পরিস্থিতি তুলনা করে দেখা গিয়েছে, মস্তিষ্কের আয়তনে সঙ্কোচন ঘটেছে, আগের তুলনায় বদলে গিয়েছে আকার।
আরও পড়ুন: Tuberculosis: যক্ষ্মা রোগ শুধু কাশিতেই বোঝা যায়, তা নয় !
গবেষকরা জানিয়েছেন, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন যাঁরা, যাঁরা ইনটেনসিভ কেয়ারে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাঁদের মস্তিষ্ক এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ২০ বছর বয়স বৃদ্ধির সমান। আরও ১১টি গবেষণার উল্লেখও পাওয়া গিয়েছে নয়া গবেষণাপত্রে, যাতে দেখা গিয়েছে, ষাটোর্ধ্ব রোগীদের মধ্যেও আলঝাইমার্স এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এমন রোগের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান যাঁরা, ময়নাতদন্তের সময় তাঁদের মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতির প্রমাণ মেলে।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেছেন, মস্তিষ্কের কোষগুলিকে আগলে রাখে যে ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টেম, তার থেকে রক্তকে আলাদা রাখে একটি পাতলা আচ্ছাদন। মস্তিষ্কের ওই অংশই আমাদের গোটা শরীরের পরিচালনকেন্দ্র। SARS-CoV2 ভাইরাস ওই অংশেরই ক্ষতি করে। যাঁদের সংক্রমণ তেমন ভয়াবহ ছিল না, তাঁদের IQ বেশ খানিকটা, প্রায় তিন পয়েন্ট কমে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ভাইরাস হিসেবেও কোভিডকে চিহ্নিত করা উচিত। আগামী দিনে সামগ্রিক জনসংখ্যা এবং অর্থনীতির উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।