কাশিকেই মূলত টিবি (TB) বা টিউবারকুলোসিস (Tuberculosis) অর্থাৎ যক্ষ্মা রোগের প্রধান উপসর্গ (major symptom) হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু, এই ধারণা ভেঙে দিয়ে ভয়ানক বিপদের কথা শোনালেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এপ্রসঙ্গে তাঁরা জানালেন, কাশির (coughing) কোনও নামগন্ধ দেখা না গেলেও অনেকের শরীরেই এই মারণ রোগের জীবাণুর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। 


তাঁদের কথায়, কোনও মানুষ যদি দেখেন আচমকা তাঁর শরীরের ওজন কমে (weight loss) যাচ্ছে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া সত্ত্বেও সবসময় ক্লান্তি (fatigue) অনুভব হচ্ছে, রাতে ঘাম (night sweats) হচ্ছে কিংবা জ্বর হলে তা দীর্ঘদিন থাকছে। বুকে ব্যথা (chest pain) হচ্ছে অথবা কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে। কিংবা কাশির সঙ্গে উঠছে রক্ত, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে ওই ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মা রোগ বাসা বেঁধেছে। তবে তা প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। নিশ্চিত হতে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।


এপ্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা আইএএনএসকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হেলথ সিটির পালমনোলজি ও টিবি ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডাঃ রঙ্গানাথ আর বলেন, "এই বৈচিত্র্যময় লক্ষণগুলির জন্য পর্যবেক্ষণে সতর্কতা প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং হস্তক্ষেপের চাবিকাঠি। এই লক্ষণগুলির মধ্যে যে কোন একটি দেখা দিলে আমাদের অবিলম্বে চিকিৎসার যত্ন নেওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে টিবি রোগের আধিক্য রয়েছে এই ধরনের অঞ্চলগুলিতে সবথেকে বেশি জোর দিতে হবে।"


সম্প্রতি ৬ লক্ষ ২০ হাজার ৬৮২ জন মানুষকে নিয়ে ১২টি সমীক্ষা করা হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের ৮টি দেশ ও এশিয়ার চারটি দেশে। তাতে লক্ষ্য করা গেছে, বেশিরভাগ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে কাশির কোনও উপসর্গই ছিল না। আর এই ধরনের রোগীর মধ্যে সবথেকে বেশি রয়েছেন মহিলারা। 


এপ্রসঙ্গে মাহিমের পিডি হিন্দুজা হাসপাতাল এবং এমআরসির কনসালটেন্ট পালমোনোলজিস্ট এবং এপিডেমিওলজিস্ট ডাঃ ল্যান্সেলট পিন্টো বলেন, "চিকিৎসক হিসেবে আমরা লক্ষ্য করেছি যে মহিলারা প্রায়শই চিকিৎসকের কাছে দেরিতে উপস্থিত হন এবং কাশিকে উপেক্ষা করেন বা এর বিষয়ে কিছু বলতে চান না। এটি লক্ষ্য করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে যক্ষ্মা ফুসফুসের পেশিগুলিকে প্রভাবিত করে না, এই রোগের একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাতের প্রতিনিধিত্ব করে এবং কাশির সঙ্গে উপস্থিত হয় না।"


ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস (journal Lancet Infectious Diseases) নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যক্ষ্মায় আক্রান্ত ৮২.৮ শতাংশ মানুষের খুব বেশি কাশির সমস্যা ছিল। শুধু তাই নয়, ৬২.৫ শতাংশ রোগীর একেবারেই কাশি ছিল না। আর তাই চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে, যক্ষ্মা রোগের মোকাবিলা করার জন্য সচেতনতাই হচ্ছে সবথকে বড় হাতিয়ার। তার জন্য সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করলে সংক্রামক এই ব্যাধিকে একবারে নির্মূল করা সম্ভব হবে। 


আরও পড়ুন: Covid-19 Lockdown Anniversary: ভারতে করোনা লকডাউনের চার বছর, ফিরে দেখা সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি !