কলকাতা : ক্যান্সার (Cancer) । এখনও এই রোগ মানেই যেন শুরু হয়ে যায় খারাপ কিছুর জন্য মনকে প্রস্তুত করা। চিকিৎসাশাস্ত্র এত উন্নত হয়ে গেলেও আক্রান্ত মানুষ জীবনহানির আশঙ্কায় ভোগেন। বহু ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা যেমন আধুনিক পদ্ধতিতে সম্ভব হচ্ছে, তেমন আবার অনেক ক্যান্সারের চিকিৎসা আবার সফল হচ্ছেও না । অন্যদিকে ডায়াবেটিস অন্যতম কমন ক্রনিক অসুখ যা সরাসরি প্রাণঘাতী না হলেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে খারাপ ভাবে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস (Diabetes)বা মধুমেহ কিডনির কার্যকারিতায় ক্ষতি করে । সরাসরি ক্ষতি করে দৃষ্টিশক্তির। ডায়াবেটিসকে অনেক ক্ষেত্রেই সায়লেন্ট কিলার হিসেবেও ধরা হয়। ডায়াবেটিসে একজন মানুষের জীবনযাত্রা অনেক ক্ষেত্রে বদলে যায়। তার খাদ্যতালিকায় বিশেষ বদলাতে হয় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তার জীবনচর্যাতেও। স্বাভাবিকভাবে এখন পাঠকদের নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অশোক নিয়ে কেন পরপর লেখা হচ্ছে ! আপাত ভাবে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস এর কোন সরাসরি যোগ না থাকলেও একটি যোগ সূত্র থেকেই গেছে বেশকিছু ধরনের ক্যান্সার ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে। এই নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়।
ডা. চট্টোপাধ্যায় জানালেন, কয়ের ধরনের ক্যান্সার ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ঘাতক হয়ে উঠতে পারে । যেমন,
- কোলোরেক্টাল ক্যানসার (Colorectal cancer starts in the colon or the rectum) । এছাড়াও মেনোপজের পরে হওয়া ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী যদি মধুমেহ রোগেও আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তার জীবনের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
- গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা কর্কটরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত খারাপ পরিণতির দিকে এগোন নন ডায়াবেটিকদের তুলনায়। আবার উল্টোটাও দেখা গেছে । প্রস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিকরা কম আক্রান্ত হন । আবার এই অসুখের পড়লেও তাঁরা অন্যদের তুলনায় ক্যান্সার নিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি দিন বাঁচেন ।
- কোনও ডায়াবেটিক যদি ওবেসিটির সমস্যাতেও ভোগেন তাহলে তা আরও ক্ষতিকারক। ক্যান্সার আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ওবেসিটি মারাত্মক হতে পারে। মধুমেহ আক্রান্ত রোগীদের শরীরে ইনফ্লামেশন এর দরুণ ফ্রি-রাডিক্যালসের মাত্রা অন্যদের থেকে বেশি থাকে। গবেষণা বলছে, এই ফ্রি-রাডিক্যালস শরীরে বিভিন্ন কোষে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়স, যা কার্যত মারাত্মক !
- ডায়াবেটিসের জন্য আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ইনসুলিন বা ইনসুলিন লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর মেনোপজের পরে ফ্যাট থেকে যে ইস্ট্রোজেন তৈরি হয় তার মাত্রা বাড়িয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ায়। এছাড়া ডায়াবেটিস আরো কিছু হরমোনাল পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ায়।
- এছাড়া ডায়াবেটিক ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ওষুধও ভেবেচিন্তে ব্যবহার করতে হয়।
- গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিকদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া ও পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা বেশি ।
ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়